সাইফুল ইসলাম:
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে অ্যাম্বলেন্স আছে ড্রাইভার নেই। এ জন্য প্রতিনিয়তেই নানা সমস্যায় ভুগছেন রোগী ও রোগীর স্বজনরা। সদর হাসপাতালে পূর্ব থেকেই দুইটি অ্যাম্বুলেন্স ছিলো। তৎমধ্যে একটি দীর্ঘদিন ধরে যান্ত্রিক কারণে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। যে একটি ঠিকঠাক রয়েছে তাও ড্রাইভারের কারণে রোগীর কোন কাজে আসেনি। তবে গত দুইমাস আগে হাসপাতালে আরও দুইটি অ্যাম্বলেন্স দিয়েছে বিদেশী এনজিও সংস্থা। ড্রাইভার না থাকায় কারণে তাও রোগির কোন উপকারে আসছে না। সাধারণত সদর হাসপাতালে যেসব রোগীরা আসে তারা অত্যন্ত গরীব। যেখানে সরকারী অ্যাম্বুলেন্স ৩ হাজার টাকা ভাড়া নেয় সেখানে প্রাইভেট অ্যাম্বলেন্স নিচ্ছে ২/৩ গুন। এর কারণে সাধারণ মানুষ অনেকটা জিম্মি হয়ে আছে প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্স মালিক, চালক ও দালাল সিন্ডিকেটের কাছে।

এ ছাড়াও ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালের পশ্চিম পাশে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টির অধিক অ্যাম্বুলেন্স দেখা গেলেও দালাল ছাড়া মিলেনা ওইসব এ্যাম্বুলেন্স। সদর হাসপাতালে সরকারী যে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে তা কোন রোগিই পায়না বলে অভিযোগ অনেকের। বলতে গেলে সদর হাসপাতালে সরকারী এ্যাম্বুলেন্স নেই বললেই চলে। বর্তমানে যে একটি ড্রাইভার রয়েছে রেফার রোগি ও রোগীর স্বজনরা ড্রাইভারকে ফোন দিলে বিভিন্ন অজুহাতে দেখিয়ে এড়িয়ে যায়।

সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে সেবার নামে চলছে রমরমা অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগতদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটটি এসব অ্যাম্বুলেন্সগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

চকরিয়া থেকে মো. রফিক তার মাকে নিয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি নিয়ে আসছিলো। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে অনুযায়ী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। গরীব বলে সরকারী অ্যাম্বলেন্স খুঁজছিলেন। একটু আর্থিকভাবে সাশ্রয় হওয়ার জন্য। শেষ পর্যন্ত সরকারী এ্যাম্বুলেন্স না পেয়ে প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। তিনি ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের পশ্চিম পাশ থেকে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স অনেক দরদাম করে ঠিক করেন। শেষ পযর্ন্ত আট হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছে তার থেকে। এভাবে প্রতিনিয়তে কেউ না কেউ সরকারী ও বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভুগছে। সরকারী হাসপাতালে যে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে তা সময় মতো কেউ কাজে পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ অনেকেরই।

বুধবারে সকালে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে মো.শফিক উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি বলেন, সরকারি এ্যাম্বুলেন্স পেলে তাঁর খরচ হতো সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সে দালাল বেড়ে যাওয়ায় ২/৩ গুন বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হয়েছে। যে অসংখ্য বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স আছে তাতে অনেকেই মাইক্রোবাসকে কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়েছে বলে জানান তিনি।

সূত্রে আরো জানা যায়, এ প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সগুলো রেফার করা রোগি ও স্বজনের কাছে থেকে দিনে এক রকম ভাড়া নেয়, রাতে আরেক রকম ভাড়া নিচ্ছে। দিনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে ভাড়া যদি ৬হাজার ৫শ টাকা হয়। রাতে সে ভাড়া ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা হয়। তবে করার কিছু নেই বাধ্য হয়ে রোগিদের অবস্থা চটপট দেখে ডবল ভাড়া দিয়ে হলেও যেতে হয় হাসপাতালে। এখন চট্টগ্রাম যেতে বাড়া নিচ্ছে দিনে ছয় হাজার পাঁচশত টাকা এবং রাতে নিচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বলে জানান অ্যাম্বুলেন্সের দালাল ও হেলপারেরা। শক্তিশালী এ সিন্ডিকেট গড়ে উঠার প্রধান কারণ সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স নেই। হাসপাতালে ২/১ টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও রীতিমতো না পেয়ে রোগি ও স্বজনেরা নিরুপায় দালালের মাধ্যমেই হলেও ডবল বাড়া দিয়ে রেফার করা রোগিদের নিয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় বলে অনেকেই বলেন। এসব অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সেবার নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মচারীরা জানান, এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একাধিক দালাল চক্র। রোগীর স্বজনকে সরকারি হাসপাতালে সেবার মান খারাপ বলে আশপাশের ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এ থেকে কমিশন পায় দালাল ও সিন্ডিকেট সদস্যরা ।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডা. মো. শাহীন আব্দুর রহমান চৌধুরী জানান, সদর হাসপাতালে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তৎমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটি যান্ত্রিক কারণে নষ্ট হয়ে রয়েছে। এদিকে দুই মাস আগে এনজিও সংস্থা অ্যাম্বুলেন্স দিলেও কাগজপত্র ও ড্রাইভার না থাকার কারণে রোগীরা পাচ্ছে না। ইতিমেধ্যই কাগজপত্র ঠিকঠাক ও ড্রাইভারের নিয়োগের জন্য আবেদন করা হয়েছে।