বিবিসি বাংলা

সাভারের ধসে যাওয়া রানা প্লাজা যেখানে ছিলো সেটি এখন কচুরিপানায় ভর্তি একটি জলাশয়ের মতো। মঙ্গলবার সকালে দেখা গেলো তার পাশেই কেউ বসে মাথায় হাত কেউবা অন্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন।

নিহত বা আহতদের বাইরেও এখনো সেখানে অনেকে খুঁজে বেড়ান তাদের নিখোঁজ স্বজনদের। আবার অনেকে নিথর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন ওই জলাশয়ের দিকে- যেখানে তাদের জীবনের সব হাসি আনন্দ সাথে নিয়ে ধসে গিয়েছিলো রানা প্লাজা।

সুইং অপারেটর রাশিদা ছিলেন সেদিন ভবনটির চার তলায়। ক্ষতিপূরণ তো দুরের কথা, অন্য কোনো কারখানা কাজও পাননি তিনি।

“হঠাৎ দেখি ধুলা অন্ধকারে কিছু চোখে দেখিনা। জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে কোমরে ব্যথা পাই। এখন আর কাজ করতে পারিনা। কোন কারখানাও কাজে নিতে চায়না আগের মতো কাজ করতে পারবোনা বলে।”

আবার রোকেয়া পারভীন নিজে প্রাণে বাঁচলেও তাঁর স্বামী সেদিন মিশে গেছে রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে।

আর বাকী বিল্লাহ নামে আরেকজন বলছেন অনেকে কিছুটা ক্ষতিপূরণ বা সহায়তা পেলেও রানা প্লাজার সেই কর্মীদের এখন কেউ কাজেই নিতে চায়না।

“আমার পা ছোটো হয়ে গেছে। পায়ের মধ্যে এখনো স্টিক দেয়া আছে। পাঁচ বছরে নানা জায়গায় গেছি কিন্তু কেউ কাজ দেয়নি। অথচ আমি মাস্টার্স পাশ করেছি।”

কিন্তু শুধু পোশাক কারখানার কর্মীরাই নন, ওই ঘটনায় নিহত আহত হয়েছিলো আরও অনেকেই যাদের কথা খুব একটা আলোচনায় আসেনা।

কাজ খুঁজে পাননি অনেক আহত শ্রমিককাজ খুঁজে পাননি অনেক আহত শ্রমিক

রানা প্লাজা ধসে এর একটি অংশ লাগোয়া যেই ভবনের ওপর পড়েছিলো সেখানেও নিহত ও আহত হয়েছেন অনেকে।

তাদেরই একজন সাদ্দাম হোসেন বলেন, “রানা প্লাজার পাশের ভবনে নেসলে অফিসে কাজ করতাম। রানা প্লাজা আমাদের ভবনের ওপর পড়ে। এতে চারজন নিহত হয় ও আমরা সাত জন আহত হই। আমার হাত কেটে ফেলতে হয়েছে।”

শুধু শ্রমিকরাই নয় এমন দিনে এসেছেন উদ্ধারকারী অনেকে যারা নিজ উদ্যোগেই ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছিলেন।

তাদের একজন বলেন, “এমন ভাবে হাত পা আটকে পড়েছিলো। পরে ছুরি দিলাম তারা নিজের হাত পা নিজে কেটে বের হয়েছে। প্রথম দিনে ৭/৮ জন মিলে ৪০ জনের মতো বের করেছিলাম। কয়েকজন নিজের হাত নিজে কেটে বের হয়েছে।”

অন্যান্য খবর: বাংলাদেশের চমকপ্রদ সাফল্যের নেপথ্যে কী

যৌন হয়রানি: স্কুল-শিশুদের দেয়া যে পরামর্শ নিয়ে বিতর্ক

অ্যাসাইলাম পেতে মূল নাগরিকত্ব ছাড়তে হয়: শাহরিয়ার

এগারোশোর বেশি মানুষের মৃত্যু আর আরও দু হাজার মানুষ আহত হবার পর নিহতদের পরিবার ও আহতদের সহায়তা কিংবা অনুদান দেয়া হয়েছে ৯৪ কোটি টাকার মতো।

কিন্তু এতো জীবন বিপন্ন হওয়ার ঘটনায় এখনো বিচার হয়নি কারও। কারণ ১৪টি মামলার সবগুলোই বিচারাধীন আছে। আবার ভবন মালিক সোহেল রানা ছাড়া বাকী সবাই জামিনে আছেন।

শ্রমিক সংগঠক তাসলিমা আক্তার বলেন, “আশা করেছিলাম সরকার বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত করার ব্যবস্থা করবে। কিন্তু পাঁচ বছরে কারও কোন শাস্তি হয়নি।”

তবে বিচার বা ক্ষতিপূরণ হোক আর না হোক জাতীয় আন্তর্জাতিক উদ্যোগে এই পাঁচ বছরে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় যে সংকট তৈরি হয়েছিলো সেটি অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে বাংলাদেশের পোশাক খাত, এমনটাই মনে করছেন মালিক শ্রমিক সব পক্ষই।