ডেস্ক নিউজ:

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে নেওয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র সোমবার আরও ৫ কোটি ডলার তহবিল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

কানাডার টরেন্টোতে চলমান জি-সেভেন মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে এই ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন সালিভান। তিনি জানান, গত বছরের আগস্ট থেকে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা, যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এতে করে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দশ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

সালিভান বলেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন ব্যুরোর পক্ষ থেকে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন একটি যৌথ পরিকল্পনায় আরও ৫ কোটি ডলার সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছি।

নতুন এই সহযোগিতার ঘোষণার মধ্যদিয়ে ২০১৭ সালের আগস্টের পর হতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে এ পর্যন্ত দেওয়া সহযোগিতার পরিমাণ ১৬৩ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আর ২০১৬ সালের অক্টোবর হতে মিয়ানমবার হতে বাস্তুচ্যুতদের জন্য মোট সহযোগিতার পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২৫৫ মিলিয়ন ডলার।

মার্কিন মন্ত্রী জানান, এই সহযোগিতা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, জরুরি আশ্রয়, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, স্বাস্থসেবা ও মানসিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া এই সহযোগিতা দিয়ে বৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ের মওসুমের দুর্যোগ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হবে। এই সময়ে বড় ধরনের জানমাল ও আশ্রয়কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা অন্য দাতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এই সংকটে আক্রান্তদের জন্য আরও মানবিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ঘোষণাটিকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটির যুক্তরাষ্ট্র ও ক্যাবিয়ান অঞ্চলের প্রতিনিধি ম্যাথিউ রেনল্ডস জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শ্রদ্ধা করার মতো মানবিক ও বিশ্বের শরণার্থীদের প্রয়োজনের সময় তাদের নিরপেক্ষ সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে। তিনি বলেন, আজকের ঘোষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রবনতার আরেকটি সময়ানুযায়ী পদক্ষেপ। এই সহযোগিতায় যারা উপকৃত হবে তাদের পক্ষ থেকে জীবন রক্ষাকারী এই মানবিক সহযোগিতার জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণারয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যুরো, মার্কিন প্রশাসনে আমাদের অংশীদার ও কংগ্রেসের প্রতি সত্যিকার অর্থে কৃতজ্ঞ।।

বর্ষা ও বন্যার মওসুমে ঝুঁকির মুখে থাকা ৯ লাখ রোহিঙ্গা ও ৩ লাখ ৩০ হাজার স্থানীয় বাংলাদেশিদের জন্য প্রস্তুতি নিতে প্রয়োজনীয় তহবিল যখন সংগ্রহ করছে ইউএনএইচসিআর তখন যুক্তরাষ্ট্র এই ঘোষণা দিলো। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিওগুলো গত মাসে জানায় রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ৯৫১ মিলিয়ন ডলার তহবিল প্রয়োজন।

এদিকে, পৃথক এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই মানবিক সংকটে বাংলাদেশের উদারতা ও সংকটে থাকা মানুষকে ক্রমাগত সহযোগিতা দিয়ে যাওয়ার প্রশংসা করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই সংকট সমাধানে গঠনমূলক ভূমিকা রাখার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের আহ্বান অব্যাহত রাখছি। মিয়ানমারে সহিংসতার অবসান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, অবিলম্বে সেখানে মানবিক ও সংবাদমাধ্যমের প্রবেশের অনুমতি, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়া এবং সংকটের মূল কারণ চিহ্নিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ২০১৭ সালের কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।