কালেরকন্ঠ : সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে শনিবার রাতে বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজের প্রাসাদের বাইরে ব্যাপক গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।

যদিও সৌদি পুলিশ বলছে, প্রাসাদের কাছ দিয়ে একটি খেলনা ড্রোনের উড়াল কেন্দ্র করে এই গোলাগুলি হয়েছে। কিন্তু অনেকে মনে করছেন, এটি ছিল সৌদি রাজার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চেষ্টা।

এদিকে অভ্যুত্থান চেষ্টার গুঞ্জনের মধ্যেই ইসরাইলি দৈনিক মাআরিভের বরাত দিয়ে লেবাননের বার্তা সংস্থা আল-আহদ জানিয়েছে, সম্ভবত সৌদি প্রিন্সদের মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে শনিবার রাতে গোলাগুলি হয়েছে।

তবে পর্যবেক্ষকদের একাংশের ধারণা, সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান রাজপরিবারের ভেতরে ও বাইরে নিজের বিরোধীদের দমন করার জন্য নিজেই এ অভ্যুত্থানের নাটক সাজিয়েছেন।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মোহাম্মদ বিন সালমান তার বিরোধীদের ওপর অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগ চাপাবেন। এর মধ্য দিয়ে তার ক্ষমতায় বসার পথে কাঁটা রাজপরিবারের এমন সব সদস্যকে সরিয়ে দেবেন।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে প্রাসাদের কাছে একটি ‘অননুমোদিত ড্রোনের’ উপস্থিতি ধরা পড়ে বলে জানায় বার্তা সংস্থা এসপিএ।

রিয়াদ পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, আল খুজামা এলাকায় রিমোট কন্ট্রোলচালিত খুদে একটি খেলনা ড্রোন উড়তে দেখা যায়। কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই আকাশে ওই ড্রোন উড়ানো হচ্ছিল। নিরাপত্তা বাহিনী নিয়মানুযায়ী সেটির ব্যবস্থা নিয়েছে। ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি এবং বাদশাহ সালমান সে সময় প্রাসাদে ছিলেন না বলে এক সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন। বাদশাহ দিরিয়ায় তার অবকাশযাপন কেন্দ্রে ছিলেন।

শনিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে অন্তত ৩০ সেকেন্ড ধরে গুলির শব্দ আর আলোর ঝলকানি দেখা যায়। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবরও আসতে শুরু করে। সৌদি আরবে কোনো অভ্যুত্থান ঘটেছে কিনা, বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশটির বাদশাহ বা যুবরাজের ভাগ্যে কী ঘটেছে এমন প্রশ্নও ঘুরতে শুরু করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিওতে বলা হয়েছে, রাজপ্রাসাদে বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজবিরোধী অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে। ওই সময় বাদশাহ সালমানকে রাজপ্রাসাদ থেকে একটি সামরিকঘাঁটিতে সরিয়ে নেয়া হয়। সৌদি কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।

রয়টার্স লিখেছে, ওই ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাইলে সৌদি আরবের এক কর্মকর্তা বলেন, একটি অজ্ঞাত ড্রোন গুলি করে নামানো হয়েছে। বিনোদনের জন্য ড্রোন উড়ানোর বিষয়ে সরকার একটি নীতিমালা তৈরিরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটির সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি আলজাজিরা।

সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ গত বছর জুনে তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণার পর থেকে রক্ষণশীল এ মুসলিম দেশটি বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ সৌদি আরবের তেলনির্ভর অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবে তার দেশকে আরও বেশি উন্মুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের সমালোচনার সুযোগও দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ছেলের অবস্থান সংহত করতে গিয়ে সৌদি আরবে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে কয়েক দফা বড় ধরনের রদবদল এনেছেন বাদশাহ সালমান। যুবরাজের নেতৃত্বে চালানো ‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে’ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রিন্স আর ধনকুবেরকে কারাগারে যেতে হয়েছে। অবশ্য তাদের অধিকাংশকেই পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি প্রিন্সসহ সরকারি আমলা ও কর্মকর্তাদের ওপর যুবরাজের এমন হস্তক্ষেপের পরিণতি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে।