সাইফুল ইসলাম :

সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স থাকা সত্বেও প্রয়োজন মুহুর্তে খুঁজতে গেলে রহস্যজনক কারণে পাওয়া যায়না। এ জন্য প্রতিনিয়তেই নানা সমস্যায় ভুগছেন কক্সবাজারের রোগী ও রোগীর স্বজনরা।

সাধারণ মানুষ অনেকটা জিম্মি হয়ে আছে এ্যাম্বুলেন্স মালিক, চালক ও দালাল সিন্ডিকেটের কাছে। এসব অনিয়ম-অন্যায়ের প্রতিকার চেয়েও ভুক্তভোগীদের ফরিয়াদ আমলে নেননা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন দেখা যায়, শহরের ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের পশ্চিম পাশ থেকে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পযর্ন্ত সারিসারি ২০ থেকে ২৫টির অধিক অ্যাম্বুলেন্স দেখা গেলেও দালাল ছাড়া মিলেনা ওইসব এ্যাম্বুলেন্স। তাছাড়া সদর হাসপাতালে সরকারী যে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে তা কোন রোগিই পায়না বলে অভিযোগ অনেকের। বলতে গেলে সদর হাসপাতালে সরকারী এ্যাম্বুলেন্স নেই বললেই চলে। যে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স আছে তার মধ্যে একটির সব ঠিকঠাক থাকলেও অন্যটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। যে একটি আছে তাও রোগীর কোন কাজে আসেনি। রেফার রোগি ও রোগীর স্বজনরা ড্রাইভারকে ফোন দিলে বিভিন্ন অজুহাতে দেখিয়ে এড়িয়ে যায়।

সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে সেবার নামে চলছে রমরমা অ্যাম্বুলেন্স বাণিজ্য। হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগতদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের এ নিয়ন্ত্রণ। ওয়ার্ড বয় থেকে শুরু করে ফুটপাতের ভ্রাম্যমান দোকানী পযর্ন্ত এ সব অ্যাম্বুলেন্সর দালাল। তারা রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। দালাল ছাড়া কোনো ধরণের অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়ানি বলে জানান ভোক্তভোগিরা। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের অ্যাম্বুলেন্সই উঠতে হয় রোগী ও স্বজনদের।

ভারুয়াখালী এলাকার মো. ইসলাম তার বাবাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করেছিল। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে অনুযায়ী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। এজন্য এ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে।

তিনি ফুয়াদ আল-খতীব হাসপাতালের পশ্চিম পাশ থেকে একটি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স অনেক দরদাম করে ঠিক করেন। শেষ পযর্ন্ত আট হাজার টাকা ভাড়া নিয়েছে তার থেকে। এভাবে প্রতিনিয়তে কেউ না কেউ সরকারী ও বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভুগছে। সরকারী হাসপাতালে যে অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে তা সময় মতো কেউ কাজে পাচ্ছেনা বলে অভিযোগ অনেকেরই।

শনিবার সকালে হাসপাতাল প্রাঙ্গনে মো. রফিক উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি বলেন, সরকারি এ্যাম্বুলেন্স পেলে তাঁর খরচ হতো সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা। প্রাইভেট এ্যাম্বুলেন্সে দালাল বেড়ে যাওয়ায় ২/৩ গুন বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হয়েছে। যে অসংখ্য বেসরকারী অ্যাম্বুলেন্স আছে তাতে অনেকেই মাইক্রোবাসকে কেটে অ্যাম্বুলেন্স বানিয়েছে বলে জানান তিনি।

সূত্রে আরো জানা যায়, এ প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সগুলো রেফার করা রোগি ও স্বজনের কাছে থেকে দিনে এক রকম ভাড়া নেয়, রাতে আরেক রকম ভাড়া নিচ্ছে। দিনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে ভাড়া যদি ৬হাজার ৫শ টাকা হয়। রাতে সে ভাড়া ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা হয়। তবে করার কিছু নেই বাধ্য হয়ে রোগিদের অবস্থা চটপট দেখে ডবল ভাড়া দিয়ে হলেও যেতে হয় হাসপাতালে। এখন চট্টগ্রাম যেতে বাড়া নিচ্ছে দিনে ছয় হাজার পাঁচশত টাকা এবং রাতে নিচ্ছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বলে জানান অ্যাম্বুলেন্সের দালাল ও হেলপারেরা।

শক্তিশালী এ সিন্ডিকেট গড়ে উঠার প্রধান কারণ সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যাম্বুলেন্স নেই। হাসপাতালে ২/১ টি এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও রীতিমতো না পেয়ে রোগি ও স্বজনেরা নিরুপায় দালালের মাধ্যমেই হলেও ডবল বাড়া দিয়ে রেফার করা রোগিদের নিয়ে চট্টগ্রাম ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয় বলে অনেকেই বলেন। এসব অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে সেবার নামে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মচারীরা জানান, এই সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একাধিক দালাল চক্র। রোগীর স্বজনকে সরকারি হাসপাতালে সেবার মান খারাপ বলে আশপাশের ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে যায়। এ থেকে কমিশন পায় দালাল ও সিন্ডিকেট সদস্যরা ।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডা. মো. শাহীন আব্দুর রহমান চৌধুরী জানান, সদর হাসপাতালে দুইটি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। তৎমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে একটি যান্ত্রিক কারণে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। বাকী একটি দিয়ে কোন রকম হাসপাতালের কাজ চলছে।