ফারুক আহমদ,উখিয়া :

উখিয়ার রুমখাঁ মনির মার্কেট এলাকার মৃত হাজী নুরুল কবিরের স্ত্রী বিধবা নুর মহল চৌধুরীর (৫৫) হত্যাকান্ডে ভিন্ন মোড় নিয়েছে। দিন যতই যাচ্ছে হত্যার নানা রহস্য ঘনিভূত হচ্ছে। বিশেষ করে মামলায় নিরীহ ব্যক্তিদের আসামী করা নিয়ে এলাকাবাসী চরম ক্ষুদ্ধ। এমন কি খোদ নিহতের পুত্র,কন্যা ও স্বজনদের দাবী প্রকৃত হত্যাকারীদেরকে বাদ দিয়ে নিরপরাধ ব্যক্তিদেরকে আসামী করা হয়েছে।হত্যার আসল রহস্য ও ক্লু উদঘাটনে পিতা-মাতার অবাধ্য পুত্র মোরশেদ করিব চৌধুরী ও তার স্ত্রী খোরশিদাকে গ্রেপ্তার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করার দাবী জানিয়েছেন, পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী।

জানা যায়, উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মনির মার্কেট এলাকায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারী গভীর রাতে বাড়ীতে ঢুকে দূর্বৃত্তরা বিধবা  নুর মহল চৌধুরীকে মাথায় ইট দিয়ে মারাত্মক জখম করে। রক্তাক্ত অবস্থায় প্রথমে উখিয়া হাসপাতাল পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা অবনতি দেখা দেওয়ায় একই দিন ভোর সকালে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আইসিওতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ ফেব্রুয়ারী বিকেলে তিনি মারা যান।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারী নিহতের ছেলে মোরশেদ কবির চৌধুরী এলাকার নিরীহ আনোয়ার,মাহাবুব ও মেলুকে আসামী করে থানায় এজহার দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসীর চাপের মুখে তিনি পুনরায় অজ্ঞাত নামা আসামী দিয়ে থানায় এজাহার করলেও উক্ত এজাহার কৌশলে নিয়ে আসে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারী মোরশেদ বাদী হয়ে কক্সবাজার আদালতে আপন চাচা ফজলুল কবিরের ছেলে আবছার কবির চৌধুরী,আজম চৌধুরী ও কন্যা তানজিনা আক্তার খাইরুকে আসামী করে আরো একটি মামলা দায়ের করে। গত ১৯ এপ্রিল উক্ত মামলা উখিয়া থানায় নথিভূক্ত করা হয়। যার মামলা নং -২৯ ধারা ৩০২/৩৪ দ:বি।

এদিকে উক্ত হত্যা মামলায় আসামী করা নিয়ে খোদ নিহতের ছেলে রায়হান (২৪), মেয়ে গোলনাহার (২৬) ও জামাতা আলা উদ্দিন (৩৪) চরম আপত্তি ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তাদের ভাষায় যারা আমার মা কে অর্থ দিয়ে চিকিৎসার সাহায্য ও হাসপাতালে সার্বক্ষণিক সেবা করেছে তাদেরকে আসামী করে প্রকৃত খুনিকে আড়াল করার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের দাবী সন্ত্রাসী মোরশেদ আমাদের মা’কে প্রায় সময় মারধর করত। সম্প্রতি জমি বিক্রয় করে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ সহ নির্যাতন করে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় মোরশেদ ও তার স্ত্রী খোরশিদা আমার মা’কে হত্যা করে নিজকে বাচাঁনোর জন্য অসৎ উদ্দেশ্যে একটি সাজানো মামলা দায়ের করেছে। এ হত্যাকান্ডের আসল রহস্য বের করার জন্য মোরশেদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার পূর্বক জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশের নিকট দাবী জানান নিহতের সকল আত্মীয় স্বজন।

স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মোরশেদ কবির একজন সন্ত্রাসী ও বদ মেজাঝি প্রকৃতির লোক।এমন কোন মাস-দিন ছিলনা তার হাতে গর্ভ ধারনী মা নুর নাহার চৌধুরী ও পিতা হাজী নুরুল কবির সন্ত্রাসী পুত্রের হাতে মার খায়নি। প্রায় সময় পুত্রের নির্যাতনের শিকার হয়েছে তারা। তবে পিতার মৃত্যুর পর জমি বিক্রয় করে টাকা দেওয়ার জন্য পুত্র মোরশেদ বেশ কয়েক মাস ধরে মাকে প্রচন্ড মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল।

নিহতের আপন ভাই ফরিদ চৌধুরী (৬২) জানান, পূর্বেকার ঘটনায় প্রমান করে অবাধ্য ছেলে মোরশেদ হত্যাকান্ডে জড়িত এমন সন্দেহ এড়ানো যায়না। তবে যাদেরকে মামলায় আসামী করা হয়েছে, তারা কোন ভাবে জড়িত নয়। নিকটতম আত্মীয় জসিম উদ্দীন (৬১)ও শামশুল আলম একই দাবী করে বলেন, নিহত নুর মহল চৌধুরীর হত্যা মামলায় নিরাপরাধ ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। ঘটনার পর বিভিন্ন প্রবাহে বাদী মোরশেদ এই ঘটনায় জড়িত। হাজী সোলতান আহমদ(৬৫) ও বাজার পাড়া ফোরকানিয়া মাদ্রাসা ও মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমদ সওদাগর(৫৫) জানান, আবছার,আজম ও তাদের বোন খাইরু এ হত্যা কান্ডে জড়িত নয়।

এ দিকে নিহত মহিলার স্বজনরা জানান, আবছার ও আজম দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে অবস্থান সহ ব্যবসা-বানিজ্য পরিচালনা করে আসছে। কোন কারণ ছাড়া গ্রামের বাড়ীতে তেমন আসেনা। ঘটনার দিন গভীর রাতে মুমুর্ষ অবস্থায চাচী নুর মহল চৌধুরীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে মোবাইল ফোনে এমন খবর পেয়ে ঘুম থেকে উঠে দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যায় দু’ভাই। শুধু তাই নয় অর্থ সংকট দেখা দিলে তাৎক্ষনিক বাসায় গিয়ে টাকা এনে তাদের হাতে দেয়। এমনকি চাচীকে বাচানোর জন্য চট্টগ্রামে চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা টাকা পাঠানো হয় এবং নিজেরাও সেখানে হাসপাতালে দেখতে যান। এমতাস্থায় তাদেরকে উল্টো হত্যা মামলায় আসামী করায় নিহতের সকল আত্মীয় স্বজন অবাক বনে গেছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, উক্ত মামলার ৫জন স্বাক্ষী বিধবা নুর মহল চৌধুরীর হত্যাকান্ডে আবছার,আজম ও ছোট বোন খাইরু জড়িত নাই মর্মে এফিডেভিট মূলে হলফ নামা প্রদান করেছেন।

নিহতের ছেলে,মেয়ে,জামাতা ও নিকটতম আত্মীয় স্বজনরা উক্ত হত্যা মামলায় নিরাপরাধ ব্যক্তিদেরকে বাদ নিয়ে প্রকৃত আসল খুনিকে সনাক্ত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য পুলিশ সুপার ও উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।