শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর :

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ব্রিকফিল্ডের দক্ষিণ পাশের নাসি থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি মরদেহের পরিচয় মিলেছে। উদ্ধার হবার ৩৮ ঘণ্টা পর নিহতের পরিবারের লোকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে মরদেহটি শনাক্ত করেন। বৃহস্পতিবার ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৬টায় উদ্ধার হওয়া মরদেহটি কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ঘাটপাড়া এলাকার মৃত হাজী আবু ছৈয়দের ছেলে আবদুল খালেকের বলে শনাক্ত করেছেন তার স্বজনরা। ৬ মাস আগে সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়ার নতুন ঘোনারপাড়ার ছৈয়দুল হকের মেয়ে জোবাইদা হকের সাথে খালেকের সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে শ্বশুর বাড়িতে তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নিহতের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী, বোন ও এক সৎ ভগ্নিপতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। নিহত খালেকের ভাই আবদুল্লাহ জানান, শনিবার ১৪ এপ্রিল শ্বশুরালয়ে গেলে সেখানে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ১৩ কিলোমিটার দূরে ঈদগাঁও এলাকায় নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। নিহত খালেকের ছোট ভাই আবদুল মান্নান জানান, তারা ৮ ভাইয়ের মধ্যে খালেক ৫ম। গত বছরের ২০ নভেম্বর সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের তেতৈয়ার নতুন ঘোনারপাড়া এলাকার ছৈয়দুল হকের মেয়ে জোবাইদা হকের সাথে খালেদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর কিছুদিন স্বাভাবিক আচরণ করলেও মাস দুয়েক পর থেকেই জোবাইদা তার ভাই (খালেক) ও পরিবারের অন্যদের সাথে বাজে আচরণ করতেন। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানতে পারি বিয়ের আগে অন্য পুরুষের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। এ কারণে দূর্ব্যবহার করতেন তার ভাইয়ের সাথে। ইতিমধ্যে জোবাইদা ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হন। আব্দুল মান্নান জানান, মাতৃত্বকালীন সমস্যার কারণে সম্প্রতি তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেবার কথা বলে সেখান থেকে তার বাবা-মা জোবাইদাকে বাবার বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে চারমাসের গর্ভের সন্তান নষ্ট করেন জোবাইদা। এ নিয়ে খালেদের সাথে মুঠোফোনে বাকবিতন্ডা হয় জোবাইদার। একপর্যায়ে পুরোনো প্রেমিককে দিয়ে খালেককে গালিগালাজ করান তিনি। এমনকি বউয়ের দাবি নিয়ে শ্বশুরালয়ে গেলে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। এসব কথাবার্তা মোবাইল ফোনে রেকর্ড রয়েছে। নিহত খালেকের ভাই আরো জানায়, সন্তান নষ্ট করা ও স্ত্রীর পরকীয়ার ব্যাপারে কথা বলতে শনিবার শ্বশুরবাড়ি যান খালেক। সেদিন মোবাইল ফোনে এটা পরিবারকে জানান তিনি। পরেরদিন রোববার থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় ভাবী জোবাইদাকে ফোন করে খোঁজ নেওয়া হয়। কিন্তু জোবাইদা দাবি করেন খালেদ সেখানে যাননি। ঝিলংজা ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুর রশিদ জানান, খালেক কর্মঠ, ভদ্র ও নম্র ছেলে হিসাবে এলাকায় পরিচিত। সারাদিন রাজমিস্ত্রির কাজ করে এসে সন্ধ্যায় এলাকায় একটি পানের দোকান করতেন। পারিবারিক কলহের কথা শুনেছি কিন্তু এতটা প্রকট তা জানা ছিল না। ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, ধারণা করা হচ্ছে খালেককে হত্যার পর নিজেদের আড়াল করতেই মরদেহটি বস্তাবন্দি করে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে নিয়ে নাসিতে ফেলে আসে নরপশুরা। এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি আমরা। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক এসআই দেবাশীষ বলেন, এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী জোবাইদা ও তার বোন মোবারেকা এবং তাদের আরেক সৎ বোনের স্বামী ফারুককে থানায় আনা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে জোবাইদার বড় ভাই মোহাম্মদ আবছারের মোবাইলে যোগাযোগ করেও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, লাশ উদ্ধারের পরই অজ্ঞাত আসামি দিয়ে একটি মামলা করা হয়েছিল। এখন পরিচয় মিলেছে এবং তার হত্যার পেছনে স্ত্রীর হাত থাকতে পারে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নোমান হোসেন তার ফেইসবুকে লিখেছেন কক্সবাজার সদর এ ঈদগাঁও এলাকার নাসি/খাল থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দী লাশটি সদরের খরুলিয়া ঘাটঘর এলাকার মৃত আবু ছৈয়দের পুত্র আবদুল খালেক এর মর্মে তার পরিবার এর সদস্যরা নিশ্চিত করেছেন। মৃত আবদুল খালেক সপ্তাহ পূর্বে নিখোঁজ হয়েছিলেন এবং ৬ মাস পুর্বে তার বিয়ে হয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায় । ইতোমধ্যে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী এবং স্ত্রী এর ভগ্নীপতিকে কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তাছাড়া এই ঘটনায় জড়িত আরো অনেককে গ্রেফতার এর প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইহা পরকীয়া জনিত খুন বলে পুলিশ ধারনা করছে। ঘটনার সাথে জড়িত মূল আসামী কে গ্রেফতার এ পুলিশ তৎপর রয়েছে। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি এই ঘটনার মূল উদ্ধার করা সম্ভব হবে। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সদর মডেল থানা, কক্সবাজার এর সাথে কথা বলেছি এবং এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে তাকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা সহ সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। অসংখ্য ধন্যবাদ কক্সবাজার জেলা পুলিশ বাহিনীর চৌকশ অফিসারবৃন্দকে তাদের অসামান্য কাজ এর জন্য। এবং আশা করছি ইনশাআল্লাহ্ খুব তাড়াতাড়ি এই ঘটনার মূল উদ্ধার করা সম্ভব হবে। ২১ এপ্রিল খরুলিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার নামাজে জানাযা পরবর্তী দাফন সম্পন্ন হয়। এতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন স্থানীয় চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, নদী বাঁচাও আন্দোলন নেতা জাহাঙ্গীর আলম, নিহতের বড় ভাই প্রবাসী জাহাঙ্গীর আলম। ইমামতি করেন মাওলানা নুরুল হক।