শাহেদ মিজান, সিবিএন:

জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলার অভিযোগে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ৪ ঘণ্টা ধরে তালাবদ্ধ করে রাখে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। একই সাথে বন্ধ করে দেয়া হয় হাসপাতালের সব ধরণের সেবা। হাসপাতালে অবরুদ্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগ পোহায় রোগী ও স্বজনেরা। দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা চার ঘণ্টা এই মারাত্মক পরিস্থিতি শিকার হন রোগী ও স্বজনেরা। তবে বিকাল ৪টার পর হাসপাতালে ফটকের তালা খুলে দিলেও এখনো চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবি, আহত হয়ে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সেবা পেতে বিলম্বের জেরে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে দুই ইন্টার্ন চিকিৎসকে মারধর করা হয়। তাই তারা সেবা বন্ধ ও হাসপাতালে সব ফটকে তালা দিয়ে রোগীদের অবরুদ্ধ করে।

রোগীর অভিভাবকদের হামলায় আহত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা হলেন- শেফায়েত হোসেন আরাফাত ও তাওহীদ ইবেনে আলাউদ্দিন। তারা দুইজনই কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক। তাদের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন না থাকলেও কিল-ঘুষি মারা হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।

হামলার শিকার ইন্টার্ন চিকিৎসক শেফায়েত হোসেন জানান, বেলা ১১টার দিকে হাসান মাহমুদ নামে এক রোগী মুখে আঘাত নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। রোগীর চাপের মধ্যে তাকে চিকিৎসা দিতে একটু দেরি হলেই চিকিৎসকদের ওপর হামলা শুরু করে ৪-৫ জন যুবক। মারার পরে তারা রোগীকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতাল তালাবদ্ধ থাকায় জরুরী প্রয়োজনে হাসপাতালের জানালা দিয়ে কিছু রোগীকে ভেতরে ঢুকানো হলেও অনেক রোগী ফিরে গেছেন। তবে অতিকষ্টে যেসব রোগীদের জানালা দিয়ে ভেতরে ঢুকানো হয় তারাও চিকিৎসা পায়নি তখন। ফটক খুলে দেয়া হলেও চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায় এখনও (সন্ধ্যা ৬ট) কোনো রোগী চিকিৎসা পাচ্ছে না। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন না ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

এদিকে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাসহ সাত দফা দাবি দিয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি পূরণ না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা চিকিৎসা সেবা থেকে বিরত থাকবে।

রোগী ও ভুক্তভোগীদের দাবি, কে কাকে মেরেছে তার জন্য হাসপাতালে তালা দিয়ে সাধারণ রোগীদের অবরুদ্ধ ও  চিকিৎসাসেবা বন্ধ করা উচিত হয়নি। এতে ঝুঁকিতে রয়েছে অনেক রোগী। একজনের জন্য পুরো হাসপাতাল বন্ধ করে দেয়া কোনো ধরণের যুক্তিসঙ্গত ও সভ্য মানুষের আচরণ হতে পারে না। তারা চাইলে হামলাকারী রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি রাখতে পারে। ইন্টার্ণ চিকিৎসকদের এই কর্মকাণ্ড মানবতার চরম অবমাননা বলে দাবি করেন সচেতন মহলও।

কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, খবর পেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। হামলার ঘটনায় হাসান মাহমুদ (৩০) নামে এক রোগীকে থানায় আনা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ওই রোগীকেই কেন্দ্র করে চিকিৎসককে মারধরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. পু চ নু জানান, প্রায়ই চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। যারা সেবা প্রদান করবে তাদেরকে কারণে-অকারণে মারধর করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা প্রদানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ জরুরি।

রোগীদের ভোগান্তির ব্যাপারে তিনি জানান, দ্রুত এই সমস্যা সমাধান হবে। তবে তিনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেনি কখন সেবা প্রদান শুরু হবে।

//www.facebook.com/tarekbeenjiad.t/videos/1000855693396735/