আব্দুর রশিদ, বাইশারীঃ

রামু উপজেলার ঈদগড়-বাইশারী সড়কের বৈদ্য পাড়া এলাকায় অনেক দূর থেকে চোখে পড়বে প্রায় একশ’ ফুট উচ্চতার তেলি গর্জন গাছটি। হুমকিতে আছে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ও উঁচু গর্জন গাছ ‘আকাশ’। কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার ঈদগড় রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অবস্থিত ২১৪ বছর বয়সী গাছটির আশপাশের জায়গা বেদখল হয়ে উঠছে ঘর-বাড়ির কারণে আকাশ নামের সর্ববৃহৎ গজারি গাছটি এখন কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়েছে।

রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের বাইশারী-ঈদগড় সড়কের বৈদ্য পাড়ার রাস্তার মাথা এলাকায় অনেক দূর থেকে চোখে পড়বে প্রায় একশ’ ফুট উচ্চতার তেলি গর্জন গাছটি।

২০০৬ সালে গাছটির বয়স দুইশত বছর পূর্ণ হওয়ার সময় গাছটির গোড়ায় ২২ ফুট আর উপরের অংশে ১৫ ফুট ব্যাস ছিল। তখন গাছটির নাম ‘আকাশ’ রাখা হয়, দেওয়া হয় বয়স ও উচ্চতাসংবলিত ফলক। এরপর থেকে আশপাশের মানুষ তো বটেই, দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো দর্শনার্থীরা যাচ্ছেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটিকে এক নজর দেখার জন্য।

গতকাল সরজমিনে গাছটিকে দেখার জন্য ছুটে আসেন কক্সবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক রূপালি সৈকতের সম্পাদক ও প্রকাশক বীর মুক্তিযুদ্ধা ফজলুল কাদের চৌধুরী। তার সাথে ছিলেন বাংলা ভিশনের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি এমআর খোকন, বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপ-পরিদর্শক মোঃ আবু মুসা, সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন, নির্বাণ শর্মা, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ, ক্রীড়া ও পাঠাগার সম্পাদক আব্দুর রশিদ।

সরজমিনে গিয়ে এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একসময় পাহাড়ি ঘন বনের সব গাছ উজাড় হয়ে গেলেও সেখানে একমাত্র জীবিত ছিল ওই রাজসিক গাছটি। বন বিভাগ গাছটির নাম দেয় ’আকাশ’। বিশেষ ঘোষণাসংবলিত ফলক লাগিয়ে গাছটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সাহায্য চাওয়া হয় এলাকাবাসীর। সেই থেকে গাছটির প্রতি বৃক্ষপ্রেমীদের আগ্রহ বেড়েই চলছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ শাহ জাহান জানান, মাঝে মাঝে সরকারি কর্মকর্তারা এসে গাছটি পরিদর্শন করেন। গাছটির যেন কোনো ধরনের ক্ষতি না হয় সেই জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সতর্কও করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থান থেকে গবেষকরাও আসেন দেখার জন্য।

এখন গাছটির বয়স ২১৪ বছর। প্রশাসনের নজরদারি সত্ত্বেও যতই দিন যাচ্ছে গাছটির আশপাশের এলাকা বেদখল হয়ে বসতঘরসহ অন্যান্য স্থাপনা গড়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে গাছটির অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক মাঈনুদ্দিন।

এ বিষয়ে মাঈনুদ্দিন বলেন, ‘ঘন বন নিশ্চিহ্ন হয়ে এই বিশাল গর্জন গাছসহ আরও কয়েকটি গাছ ছিল। এখন সেইসব গাছ নেই, বরং খালি জায়গায় ঘরবাড়ি নির্মাণ ও চাষাবাদ হচ্ছে।’

তেলি গর্জন গাছ কতদিন জীবিত থাকে তার কোনো সঠিক ধারণা নেই বন বিভাগের কাছে। গাছের বয়স গণনার বিদ্যমান প্রণালি প্রয়োগ করে এর বয়স ধারণা করা হয়েছে। মূলত রেললাইনের স্লিপার, নৌকা ও জাহাজের নির্মাণে বেশি ব্যবহার হয় গর্জন গাছের কাঠ।

প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা অতিকায় আকৃতির এই গর্জন গাছ ‘আকাশ’-এর কাছাকাছি আকৃতির আরও কয়েকটি গর্জন গাছ আছে। যেগুলোকে রক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঈদগড় রেঞ্জ কর্মকর্তা এমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘মহিমান্বিত গাছটি যে স্থানে আছে সেটি জেলা প্রশাসনের, গাছটি রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে। এই গাছটিসহ কাছাকাছি আকৃতি ও বয়সের যে কয়টি গাছ আছে সেগুলো রক্ষার জন্য আরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন’।