ডেস্ক নিউজ:

আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন, দেশের জনগণ এখন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন শেখ হাসিনার কথা ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না। দেশে এখন দুঃশাসন চলছে। ব্যাংক খালি হয়ে গেছে, সব টাকা লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শেয়ারবাজার ধ্বংস হয়ে গেছে। নারী নির্যাতন সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। মাত্র দু’মাসে ২৮৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সরকার এখন মা-বোনদের ইজ্জত রক্ষা করতে পারছে না। উন্নয়নের নামে করছে লুটপাট।’

রবিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে জেলা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এরশাদ বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে দেশের সব রাজনৈতিক দল সমীহ করে। বিগত দিনে আমাদের ছাড়া কেউ-ই এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারেনি; আগামীতেও পারবে না। ১৯৯১ সালে বিএনপি আর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আমাদের সহায়তা নিয়েই সরকার গঠন করেছিল। আমাদের অবহেলা করবেন না।’

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টি এখনও মূল্যবান, ফেলনা নয়। যতই লাফালাফি করেন, আমাদের ছাড়া কিছুই হবে না।’

তিনি বলেন, ‘রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি ছিল। সেটা অনেকটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের আসনগুলো ছিনতাই করা হয়েছে। এ ঘাঁটি মেরামত করতে হবে। আগামী নির্বাচনে রংপুর অঞ্চলের ২২টি আসনে জয়ী হলে আমরাই ক্ষমতায় যাবো।’

এরশাদ বলেন, ‘মেট্রোরেল করে দেড়শ’ লোকের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এভাবে ঢাকার যানজট কমানো যাবে না। শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা আরও করুণ। দেশে ১শ’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে সার্টিফিকেট কেনাবেচা হয়। বিবিএ-এমবিএ পাশ করার পর চাকরি মেলে না। বেকারত্ব যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’

একই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘শিল্পকারখানা নেই, চাকরি হবে কোথা থেকে? এসব দিকে সরকারের নজর নেই। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এ অবস্থা থেকে দেশকে পরিত্রাণ পেতে হলে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় আনতে হবে। কারণ, আমরাই দুর্নীতিমুক্ত-সন্ত্রাসমুক্ত দেশ উপহার দিতে পারবো।’

এরশাদ বলেন, ‘আমাদের দাবি, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে সিলমারা মার্কা নির্বাচন এবার দেশের মানুষ কোনও অবস্থাতেই মানবে না।’

খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তিনি আমাকে অন্যায়ভাবে ছয় বছর কারাগারে আটক রেখেছিলেন। আল্লাহের বিচার দেখেন, তিনি এখন কারাগারে। আমি যখন কারাগারে ছিলাম, আমাকে কারও সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হতো না। অসুস্থ হওয়ার পরও আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। এখন তিনি সুস্থ হয়েও হাসপাতালে যাবার ভান করেন।’

পরে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হিসেবে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিয়ার রহমান রাঙ্গা ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিল্পপতি ফকরুল ইসলাম জাহাঙ্গীরের নাম ঘোষণা করেন এরশাদ। জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মশিয়ার রহমান রাঙ্গার সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন– দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসিরসহ অনেকে।