সাইফুল ইসলাম:
বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে নতুন সাজে সেজেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। প্রতি বছরের মতো ও পহেলা বৈশাখ উদযাপনে সৈকত নগরী কক্সবাজারে আসছে লাখো পর্যটক। আর পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে তারকা মানের হোটেলগুলো আয়োজন করেছে নানা অনুষ্ঠানের। আর ট্যুরিস পুলিশও পর্যটকের নিরাপত্তার জন্য নিয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকেরা কোন উপলক্ষ বা ছুটি হলেই পর্যটন স্পট হিসেবে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বেঁচে নেয়। আজ বাংলা নববর্ষকে বিদায় জানাতে লাখো পর্যটকে ভরপুর। আর পহেলা বৈশাখ হলে তো কথাই নেই। তাই পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানকে নানা রঙে সাজানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের কারণে উৎসবে রূপ নেবে পর্যটন শহর। ইতোমধ্যে অগ্রিম বুকিং হওয়া চার শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে আসতে শুরু করেছে পর্যটকরা। আরও কয়েকদিন এর আমেজ থাকবে জানা গেছে।

গতকাল বিকেলে সমুদ্র সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতের প্রায় ৫/৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে হাজার হাজার পর্যটক। তারা বিভিন্নভাবে আনন্দ উল্লাসে দিন কাটাচ্ছে কেউ হাটঁছেন, কেউ চেয়ারে বসে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ গোসলে মত্ত, আবার কেউ বিচ বাইক ও ওয়াটার বাইকে চড়ে উপভোগ করছেন।

পর্যটকরা কক্সবাজারে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার না হন সে জন্য সাদা পোশাকধারী পুলিশ ও বীচে ট্যুরিস্ট পুলিশ বেশ সক্রিয় রয়েছে বলে জানান প্রশাসন।

হোটেল ব্যবসায়িরা বলছেন, ৪শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজের সবগুলো রুমের অগ্রিম বুকিং হয়ে যাচ্ছে। এবার দেশীয় পর্যটকের পাশাপাশি বিপুল পরিমান বিদেশী পর্যটক এসেছেন কক্সবাজারে। তাই বেড়াতে এসে পর্যটকরা যেন কোন ধরণের হয়রানীর শিকার না হন সে বিষয়ে প্রশাসনকে আরো আন্তরিক হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তারা।

পহেলা বৈশাখের শুভ দিনকে বরণ ও বিদায় জানাতে সমুদ্রের বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা, বালুকা বেলায় ছোটাছুটি আর লোনাজলে সমুদ্র আকর্ষণে পর্যটকরা ইতোমধ্যে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ছুটে আসতে শুরু করেছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় কক্সবাজরে পর্যটক আসবে বলে অনেকেই জানিয়েছেন।

ঢাকা ফরিদপুর থেকে আসা পর্যটক জসিম জানান, হোটেল এর রুম পেতে সমস্যা হবে বলেই কয়েকদিন আগে থেকে চলে এসেছি। আমাদের পার্শ্ববর্তী অনেকেই ১লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে আসবে। এখন পরিবেশ ভাল হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিতে কোন সমস্যা হয়নি।

সৈকতে বেড়াতে আসেন ঢাকার পর্যটক দম্পতি করিম ও শুকতারা। তারা বলেন, সৈকতের বালুচরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখার আনন্দ তো আছেই। সেই সঙ্গে এখানে দেখা মেলে পাহাড়-সমুদ্রের মেলবন্ধনের অর্পূব দৃশ্য।

এছাড়াও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, রামুর বৌদ্ধবিহার, হিমছড়ির ঝরনা, ইনানীর পাথুরে বীচসহ এখানে দেখার মতো অনেক কিছু রয়েছে। এখন পরিস্থিতিও ভালো তাই ছটে আসা।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সিনিয়র সহ সভাপতি শফিকুর রহমান কোম্পানি জানান, কক্সবাজারে প্রায় সাড়ে ৪শতাধিক হোটেল-মোটেল, কটেজ ও গেস্ট হাউস রয়েছে। পহেলা বৈশাখকে বরণ ও বিদায় জানাতে লাখো পর্যটকে এসে সমুদ্র সৈকত। প্রায়ই হোটেল রুম বর্তমানে বুকিং রয়েছে। আজ স্থানীয়সহ দেশি বিদেশী পর্যটক আরও বৃদ্ধি হবে ধারণা করা হয়। এদিকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে দেখা গেছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তা খন্দকার ফজলে রাব্বী জানান, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। তিনি বলেন, ‘পোশাকধারী ট্যুরিস্ট পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও পুলিশ থাকবে। যাতে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমাদের রেসকিউ টিম প্রস্তুত থাকবে। পহেলা বৈশাখে শুধু পর্যটন কেন্দ্রিক নয়, পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।