সিবিএন ডেস্ক:
সরেজমিনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চলতি মাসেই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে আসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রতিনিধি দল। জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক জানিয়েছেন, ওই দলে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট এই সংস্থার প্রত্যেক রাষ্ট্রের প্রতিনিধি থাকবেন। ওয়াশিংটনে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার তিনি জানান, আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত এই সফরের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে এই খবর জানিয়েছে। গত শুক্রবার (৬ এপ্রিল) মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব ইউ মিয়ান্ট থু নিরাপত্তা পরিষদকে রাখাইন সফরের অনুমতি দেওয়ার কথা জানান।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্ব পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মতো বিভিন্ন ধারার নিপীড়ন থকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। রাখাইনের সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করলেও রাখাইন পরিদর্শনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তারা অবাধ প্রবেশাধিকার দিতে রাজি হয়নি কখনও। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বারবার সেই প্রবেশাধিকার চাওয়া হলেও বিভিন্ন অজুহাতে তা স্থগিত করা হয়েছে। সবশেষ যুক্তরাজ্যের একটি পার্লামেন্টারি কমিটির মিয়ানমার সফরের পরিকল্পনা নাকচ করে দেয় মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। রাখাইনের প্রকৃত অবস্থা দেখতে তারা ওই সফরে আসতে চেয়েছিলেন। দ্য টেলিগ্রাফের ১ মার্চ তারিখের খবরে বলা হয়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের অবস্থান নিয়ে ব্রিটিশ এমপিদের সমালোচনার পর ওই সফরের অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে নেপিদো।
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আগেই রাখাইনের মানবাধিকার পরিস্থিতি জানতে মিয়ানমারে প্রবেশাধিকার দাবি করে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। শুক্রবার (৬ এপ্রিল) মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীর খবরে বলা হয়, প্রথমবারের মতো রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের সফরের অনুমতি দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্থায়ী সচিব ইউ মিয়ান্ট থু-এর বরাত দিয়ে ওই খবর নিশ্চিত করা হলেও কবে ওই সফর অনুষ্ঠিত হবে তা তখনও জানানো হয়নি। বুধবার জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক জানান চলতি মাসেই এক সপ্তাহের ওই সফর অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধি দলের আসন্ন সফরের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকৃষ্ট হবে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। গত বুধবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর মুখপাত্র জানান রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছেন তারা।