বলরাম দাশ অনুপম, কক্সবাজার :

বাংলা নববর্ষ, চৈত্র সংক্রান্তি ও রাখাইন সম্প্রদায়ের জলকেলী উৎসবকে কেন্দ্র আবহমান বাংলার চিরাচরিত রুপে সাজছে পর্যটন নগরী কক্সবাজার। বাঙ্গালী জাতির প্রাণের এসব উৎসবকে ঘিরে কক্সবাজার এখন উৎসবের নগরী। রাজনৈতিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকায় প্রাণের এই ৩ উৎসবকে ঘিরে এবার বিপুল পরিমাণ দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ঢল নামতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব সম্প্রদায়ের মানুষের পদভারে মুখরিত থাকবে সামনের কয়েকদিন। এদিকে ১৩ এপ্রিল শুক্রবার গৌতম বুদ্ধকে স্নান করানো এবং মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে শুরু হবে রাখাইন সম্প্রদায়ের সাংগ্রে পোয়ে বা জলকেলী উৎসব। তবে পানিখেলা শুরু হবে ১৭ এপ্রিল থেকে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাখাইনদের সর্ববৃহৎ সামাজিক এ উৎসব, ১৪ এপ্রিল বাঙ্গালী সংষ্কৃতির ঐতিহ্যর ধারক বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন এবং সনাতনী সম্প্রদায়ের চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব সব মিলে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। এদিকে এই তিন উৎসবকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে অন্যান্য বারের তুলনায় পর্যটক আগমনের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি পাবর্ত্য ৩ জেলা, চট্টগ্রামসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন এসব উৎসব উদ্যাপনে কক্সবাজার আগমন করবে বলে জানিয়েছেন পর্যটন শিল্প নির্ভর ব্যবসায়ীরা। সম্প্রীতির অটুট ধারাকে বজায় রাখতে এক সম্প্রদায়ের মানুষ অংশ নিবে অন্য সম্প্রদায়ের সামাজিক উৎসবে। অন্যদিকে প্রাণের উৎসব গুলোকে সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করতে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠেছে। এদিকে বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসন ও সম্মিলিত সাংষ্কৃতিক জোটের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বণার্ঢ্য মাঙ্গলিক শোভাযাত্রা, পান্তা-ইলিশ খাওয়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ১৪ এপ্রিল সকাল ৭টায় শহীদ দৌলত ময়দানে বাংলা নববর্ষ ১৪২৫ বরণ, সকাল ৮টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সকাল ৯টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শুধু জেলা প্রশাসন কিংবা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নয় জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি নববর্ষ পালনে প্রতিবারের মতোই অনুষ্ঠানাদির আয়োজন করা হয়েছে হোটেল মোটেল জোন বা ফাইভ স্টার হোটেলগুলোতেও। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজিবুল ইসলাম জানান-১৪২৪ বর্ষ বিদায় ১৪২৫ বর্ষ বরণ উপলক্ষ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ৩০ চৈত্র ও পহেলা বৈশাখ ১৩-১৪ এপ্রিল শুক্র ও শনিবার দুই দিনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে ১৩ এপ্রিল ৩০ চৈত্র বিকেল চারটায় শহীদ দৌলত ময়দানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটভূক্ত সাংস্কৃতিক সংগঠন সমূহের পরিবেশনায় আবৃত্তি, গান, নৃত্য অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানানো হবে। পহেলা বৈশাখ ১৪ এপ্রিল ভোর ৬ টায় শহীদ দৌলত ময়দানে গান, বাধ্যযন্ত্রের শুরের পহেলা বৈশাখ বরণ করবে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। ভোর সাতটায় বের করা হবে মঙ্গল শুভাযাত্রা। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত শহর কক্সবাজারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাখাইনদের নববর্ষ উৎসব প্রতিবছরের মত এবারও বেশ ঝাঁকঝমকপূর্ণ ভাবে উদ্যাপিত হবে। রাখাইনদের এ উৎসবের মূল লক্ষ্য অতীতের সকল ব্যাথা-বেদনা, গানি ভূলে গিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া। রাখাইন তরুন-তরুনীরা নতুন ও আকর্ষণীয় পোষাক পরিধান করে সেজেগুজে রাস্তার মোড়ে মোড়ে এবং রাখাইন পল্লীতে তৈরি করা জলকেলী উৎসবের প্যান্ডেলে গিয়ে একে অপরকে পানি নিক্ষেপ করে আনন্দ প্রকাশ করবে। এসময় নাচ-গানসহ চলবে আনন্দঘন অনুষ্ঠান। সাথে ঢাক-ঢোল আর কাঁসার তালে তালে নেচে উঠবে রাখাইন আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাদের প্রাণ। কক্সবাজার সিটি ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ ক্যথিংঅং জানান, জলকেলী উৎসব হচ্ছে রাখাইনদের সামাজিক একটি উৎসব। যে উৎসবের মধ্যে দিয়ে অতীতের সকল ব্যাথা-বেদনা ভুলে গিয়ে ভ্রাতৃত্ববোধের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া যায়। এবছরও নানা জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জলকেলী উৎসব সম্পন্ন হবে বলে আশা করেন তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আফরুজ্জুল হক টুটুল জানান, বাংলা নববর্ষ ও জলকেলী উৎসবকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আইন শৃংখলা রক্ষায় মাঠে কাজ করবে র‌্যাব। তিনি আশা করেন নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবার বাঙ্গালী জাতির প্রাণের উৎসব উদ্যাপিত হবে।