সাইফুল ইসলাম :

জনপ্রতিনিধিদের মধ্যকার সমন্বয় না থাকায় সদরের ভারুখালীতে দিনের পর দিন বেড়েই চলছে হত্যা, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও বিভিন্ন অপরাধ মুলক কাজ। এমনকি গত কয়েকদিন ধরে ভারুয়াখালীর সচেতন মহল অর্থাৎ যারা ফেসবুক আইডি চালায় তাদের বেশির ভাগ আইডিতে ভারুয়াখালীর নানা অপরাধের কথা লেখা হচ্ছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এমন কোন দিন নেই ভারুয়াখালীতে কোন না কোন ঘটনা ঘটেনি। বলতে গেলে প্রভাবশালীদের দখলেই রয়েছে উক্ত ভারুয়াখালী। নেই সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা। এই সন্ত্রাস বাহিনীদেরকে ব্যবহার করে জমি দখল, ডাকাতি, মানুষ হত্যাসহ নানা অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। দিনের বেলায় ভারুয়াখালীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অস্ত্র নিয়ে ঘুরাফেরা করে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা দাবি সচেতন মহলের। এসব সন্ত্রাসীরা মামলাকে ভয় করে না। মানুষ হত্যা করা তাদের স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এই অস্ত্রধারী যুবকদের বয়ে কেউ সহজে মুখ খুলতে চায়না। এদিকে অপরাধী ও সন্ত্রাস বাহিনীকে নির্মুল করতে প্রশাসনের পক্ষে থেকে মাঝে মধ্যে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে কয়েকজনকে আটক করতে পারলেও অপরাধীদের মুল হোতারা বার বার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। কারণ এদের পিছনে রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়া। এমনকি এলাকার চৌকিদার পর্যন্ত। এমনিই অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসন এলাকার ঢুকার আগেই মুল অপরাধীরা জেনে যায় এলাকায় পুলিশ প্রবেশ করেছে। কিভাবে জেনে যায় প্রশ্ন স্থানীয়দের? নিশ্চয়ই চৌকিদারদের ইন্ধনে তারা জানতে পারে। স্থানীয় বেশ কয়েকজনে জানান, বর্তমানে ভারুয়াখালী অপরাধীদের আস্থায় পরিনত হয়েছে। নেই কোন নিয়ম নীতি। যেখানে জনপ্রতিনিধিরা এক থাকতে পারে না সেখানেতো অবশ্যই অপরাধ হবে। এটাতো স্বাভাবিক কথা। বিচার ও অন্যান্য দিকে সংশোধন না হলে ভারুয়াখালীতে বড় ধরনের অঘটন ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। আমরা চাই প্রশাসনের আরো জোরদার নিরাপত্তা। প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, ভারুয়াখালী ইউনিয়নটা আসলে সদর থানা ও ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্র থেকে একটি দূরবর্ত্তী এলাকা। সে কারণে অপরাধীরা একটু বেশি পার পেয়ে গেছে। প্রশাসন যেতে যেতে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

সেই ধরাবাহিকতায় ৭প্রিল ভারুয়াখালীতে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের জায়গাকে কেন্দ্র করে সশস্ত্র হামলায় ৪ জন লবন চাষী আহত হয়েছিলো। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের ভর্তি করান। এর মধেই নবী আলমের অবস্থায় আশংকাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো আহত লবণ চাষি ফরিদুল আলিম, নবী ও তার চাষীরা লবণ মাঠে কাজ করতে গেলে ভারুয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদারের নেতৃত্বে লোকজন তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের লোকজন প্রায় ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বষর্ণ করে আর্তঙ্ক সৃষ্টি করেন। চাষিদের উপর এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়েছেন। একইভাবে ৯ এপ্রিল সীমানা বিরোধ নিয়ে প্রতিপক্ষের ধরালো অস্ত্রের দ্বারা একই এলাকার আব্দুর রহিম নামে একজন নিহত ও একই পরিবারের ছয়জন আহত হয়েছিলো। এভাবে প্রতিদিনই কোন না কোন ঘটনা ঘটেছে এই ভারুয়াখালীতে।

এই অপরাধ কর্মকান্ডের বিষয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান আবুল কাশেম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে ভারুয়াখালীতে অপরাধ কর্মকান্ড না হয়ে কি হবে। এখানে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে একজন আরেকজনের কোন সমন্বয় নেই। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত খোলা থাকে না। মাঝে মধ্যে খোলার তারিখে খোললেও চেয়ারম্যান আসলে মেম্বার আসেনি এই ধরণের অবস্থা পরিষদের।

এ বিষয়ে ভারুয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি মো. কামাল উদ্দীন বলেন, কোন ইউনিয়নে চেয়ারম্যান আর মেম্বারের সমন্বয় না থাকে। অপরাধ, হত্যা, মারামারি ও সন্ত্রাসী স্বাভাবিক থাকবে। এই ভারুয়াখালীতে একদিকে একতা নেই, অন্যদিকে প্রশাসনের তেমন তদারকি নেই। তাই দিনদিন এ অপরাধ বেড়েই চলছে। পরিস্থিতি এ অবস্থা থাকলে আরো বড় ধরণের অঘটন ঘটার সম্ভবনা রয়েছে। আমরা প্রশাসনের পক্ষে থেকে আরো নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানায়।

এব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফরিদ উদ্দীন খন্দকার জানান, সন্ত্রাস ও অপরাধীদের দমন করতে পুলিশ সদস্যরা সদা তৎপর রয়েছে। আর বিভিন্ন এলাকায় যে সমস্ত অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত হয় খবর পাওয়ার সাথে সাথে আমাদের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনে আসামীদের ধরতে সক্ষম হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সজাগ থাকলে যারা অপরাধ কর্মকান্ড ও হত্যা সাথে জড়িত তাদেরকে ধরতে আমাদের পুলিশ সদস্যদের সাঁড়াশি অভিযানে আরো সফলতা আসবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।