নুরুল কবির, বান্দরবান:

বান্দরবানে ¤্রাে সম্প্রদায়ের চাংক্রান উৎসবের মধ্যে দিয়ে শুরু হলো পাহাড়ে বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান। এদিকে চিম্বুক বাইটা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ম্রো নৃগোষ্ঠীর চাংক্রান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ উৎসবে ঐতিহ্যবাহী গো-হত্যা নৃত্যে নারী-পুরুষেরা ম্রো বাঁশির সুরে ছন্দে মেতে ওঠেন। বুধবার সকালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কতিক ইনস্টিটিউট আয়োজনে সদর উপজেলার চিম্বুক বাইটা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উৎসব অনুষ্টিত হয়। চাংক্রান উৎসবে ম্রো নারীরা পুঁতিমালা তৈরি, কাপড় বুনোন ও লাঠি দিয়ে বিভিন্ন কায়দায় শক্তি প্রদর্শন করে। এছাড়াও জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচে-গানে অতিথিদের মাতিয়েছেন ম্রো তরুণ-তরুণী ও বয়স্ক নারী-পুরুষরা। উৎসব দেখতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ম্রো সম্প্রদায় ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ ভিড় জমায় চিম্বুক বাইটা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এসময় জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন,পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার,সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ,জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষীপদ দাশ.বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কতিক ইনস্টিটিউট পরিচালক মং নু চিংসহ প্রশাসনের কর্মকতারা।

পুরনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর উৎসব সাংগ্রাইং। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার ১৪টি ক্ষুদ্র আদিবাসী পাহাড়ি জাতিসত্ত্বার মধ্যে মারমা জনগোষ্ঠী সাংগ্রাইং নামে উৎসব পালন করে। শহরাঞ্চলে যা ‘বৈসাবি’ নামে পরিচিত। বান্দরবানের পাহাড়ীদের প্রধান সামাজিক উৎসব সাংগ্রাইং ১২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। উপজাতিদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎসবের যেমন ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে, তেমনি মারমাদের সাংগ্রাইং উৎসবের তিনটি দিনের নামও আলাদা।

নতুন বছরকে বরণ এবং পুরাতন বছরের বিদায়কে ঘিরে পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র জাতিস্বত্বা সমুহ নিজস্ব সামাজিক ঐতিহ্য নিয়ে বর্ষ বরণ অনুষ্ঠান পালন করে থাকে। এসব বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে তারা ভিন্ন ভিন্ন নামে আখ্যায়িত করে থাকে। যেমন- মার্মা সম্প্রদায় সাংগ্রাইং, ¤্রাে সম্প্রদায় চাংক্রান, খেয়াং সম্প্রদায় সাংগ্রান, খুমী সম্প্রদায় সাংগ্রায়, চাকমা সম্প্রদায় বিঝু ও তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বিষু এবং ত্রিপুরা সম্প্রদায় বৈসু। তবে বান্দরবানে ত্রিপুরা, মারমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের সমন্বিত এই উৎসবকে সমষ্টিগত ভাবে “বৈসাবি” বলা হয়। বান্দরবানে বৈসাবি উৎসবে মার্মাদের (সাংগ্রাই) এর মূল আকর্ষন জলকেলি (পানি খেলা) উৎসব। সকল পাপাচার ও গ্লানী ধুয়ে মুছে নিতে তরুণ-তরুণীরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর উৎসবে মেতে উঠে। পুরাতন বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে বরণের জন্য মূলত এই উৎসব।

পুরাতন বছরের সব গ্লানী, দুঃখ, বেদনা ধুয়ে মুছে নতুন বছর যাতে সুন্দর এবং স্বাচ্ছন্দময় হয়ে ওঠে সে জন্যই এসব। এই উৎসব শুধু পাহাড়ীরা নয় বাঙ্গালীরাও নানা ভাবে পালন করে থাকে। সাংগ্রাইং উৎসবটিকে দেখার জন্য বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বহু দেশী বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটে। সাংগ্রাই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী পানি খেলা। তরুণ তরুণীরা একে অপরের প্রতি পানি ছুড়েমেরে পুরাতন গ্লানী ধুয়ে ফেলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। এদিকে বান্দরবানের প্রধান পাহাড়ী জাতিস্বত্বা মার্মা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাইং উৎসব উপলক্ষে ৪ দিন ব্যাপী কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সমবেত প্রার্থনা, ২ দিনব্যাপী জলকেলি (পানি খেলা), পিঠা তৈরি, ঘিলা খেলা, বৌদ্ধ মূর্তি স্নান, হাজার প্রদীপ প্রজ্জলন, বয়স্ক পূজা এবং পাহাড়ী নিজস্ব ঐতিহ্যবাসী নৃত্য-গান ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই উপলক্ষে পাহাড়ী পল্লীগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। মার্মাদের প্রাচীন ও বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন খেলাধুলা এই উৎসবকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলে। সাংগ্রাইং উৎসবকে ঘিরে বান্দরবানের সাত উপজেলার পাহাড়ী পল্লী গুলোতে রম রজ সাজ। তার মধ্যে ১৩ এপ্রিল সকালে রাজার মাঠ থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও গুরুভক্তির মাধ্যমে শুরু হবে মহা সাংগ্রাই উৎসব। ১৪ এপ্রিল দুপুরে সাঙ্গু নদীর পাড়ে বুদ্ধ মূর্তি স্নান। ১৫ এপ্রিল বিকালে রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ১৬ এপ্রিল রাজার মাঠে মৈত্রী পানি বর্ষন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।