বিশেষ প্রতিবেদক , চট্টগ্রাম :
শিক্ষার্থী শিক্ষকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এক অধ্যক্ষের আচমকা বদলীতে হতভম্ব ৯ শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নগরীর আকবরশাহ থানাধীন উত্তর কাট্টলীতে অবস্থিত সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে এই ঘটনা ঘটে। বদলীকৃত অধ্যক্ষের নাম মুহাম্মদ আবু তালেব বেলাল। তাঁকে বদলী করে বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে যোগ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাত্র দেড় বছরেরও কম সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে পরিবেশবান্ধবকরণ, শিক্ষা কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ফেরানো, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং পরীক্ষায় সফলতার হার বাড়ানোর ক্ষেত্রে চমকসৃষ্টি এবং শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে নিবিড় সংযোগ স্থাপন করে একটি মডেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করে তিনি সকলের প্রিয় ‘স্যার’ এ পরিণত হন। একসময় অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, প্রধান শিক্ষক ও গভর্ণিং বডির কতিপয় সদস্যদের অফিস রুমে ও ক্লাসরুমে ধুমপান আর ব্যক্তিগত আড্ডার কেন্দ্রস্থল ছিল এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। ফলে সিটি মেয়র গত ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাকে নিয়োগ দেন- এমনটাই জানান ক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। যোগদানের পর থেকে অধ্যক্ষ অতীতের এই অপকর্ম বন্ধে উদ্যোগী ছিলেন বলেই তাঁকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্থানীয় অধিবাসী ও সরেজমিনে পরিদর্শনে জানা গেছে, গতকাল ১০ এপ্রিল সকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি নেন অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল। বিষয়টি ধীরে ধীরে সব শিক্ষার্থীর কাছে স্পষ্ট হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৮ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যক্ষ বেলালের চলে যাওয়াকে মেনে নিতে না পেরে তাঁকে আটকাতে রাস্তায় শুয়ে পড়ে। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে। এসময় পুরো বিদ্যালয়জুড়ে কান্নায় পরিবেশ ভারী হরে ওঠে। অধ্যক্ষের হাতে পায়ে ধরে শতাধিক শিক্ষার্থী এই কলেজেই কাজ করার অনুরোধ করে। একসময় তিনি সবাইকে বুঝিয়ে প্রশাসনিক নিয়মের দোহাই দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিদায় নেন। এসময় তিনিও শিক্ষার্থীদের সামনে কেঁদে ফেলেন। এমন দৃশ্য দেখে অভিভাবকরাও কান্না ধরে রাখতে পারেননি। অধ্যক্ষ বেলাল চলে আসার পরপরই প্রায় জনা পঞ্চাশেক শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে যায়। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে স্থানীয়রা, শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে জ্ঞান ফেরালেও ৩ জনকে মোস্তফা হাকিম হাসপাতালে এবং ৬ জনকে আল-আমীন হসপিটালে ভর্তি করানো হয়।
উত্তর কাট্টলীর মুরাদ চৌধুরী বাড়ির বাসিন্দা অভিভাবক ওমর চৌধুরী জানান, আমার মেয়েও এই স্কুলে পড়ে। অধ্যক্ষের আচমকা বদলীতে আমার মেয়েসহ অনেকেই কলেজে কান্নাকাটি শুরু করে। ওদের অনেকে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। প্রাথমিক সেবায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীর জ্ঞান ফেরানো গেলেও ৯ জন শিক্ষার্থীকে দুইটি হাসপাতালে পাঠাতে হয়। তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই অধ্যক্ষের চলে যাওয়াকে ষড়যন্ত্রের অংশ বলছেন। এছাড়াও একাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, কলেজ পরিচালনা কমিটির দুয়েকজন ও শিক্ষকদের দুয়েকজন মিলে তাঁকে বদলী করাতে চেষ্টা করেছে। কারণ অধ্যক্ষ বেলালের কারণে তাদের দুর্নীতি করা সম্ভব হচ্ছিল না।
আল-আমীন হসপিটালের চিকিৎসক ও মেডিকেল ডাইরেক্টর ডা. মেজবাহ উদ্দিন তুহীন জানান, কাট্টলী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫-৬ জন শিক্ষার্থীকে আমাদের হসপিটালে অজ্ঞান অবস্থায় আনা হয়েছে। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে পর্যবেক্ষণে রেখেছি। আশা করছি ওরা সন্ধায় বাড়ি ফিরে যেতে পারবে। তিনি বলেন, ওদের অভিভাবক ও সাথে আসা ব্যক্তিদের কাছ থেকে জেনেছি তাদের অধ্যক্ষের বদলীজনিত প্রস্থানকে তারা মেনে নিতে পারেনি।