অনলাইন ডেস্ক :   চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের সংঘর্ষে রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা। এতে সাংবাদিক ও পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকজনকে। রোববার রাত পৌনে ৮টার দিকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়া আন্দোলনকারীদের পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করতে গেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
এসময় পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় আন্দোলনকারীরা। তারা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন।

আন্দোলনকারীরা কিছুটা পিছু হটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকায় অবস্থান নেন। অন্যদিকে পুলিশ চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি পর্যন্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

সংঘর্ষের তীব্রতা বাড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল এবং জলকামান ব্যবহারের পাশাপাশি রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। সংঘর্ষে এক ক্যামেরাপারসন, তিন পুলিশ এবং বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী আহত হন। তাদের ২২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষ চলাকালে রাত ৯টার দিকে পুলিশের ছোঁড়া রাবার বুলেট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিকের চোখে লাগে। সিদ্দিক বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

তবে রাবার বুলেট নাকি টিয়ারশেলের আঘাতে সিদ্দিক আহত হয়েছেন সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক পুলিশের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

পরিবর্তন ডটকমের ঢামেক প্রতিনিধি জানান, বাম চোখে আঘাতপ্রাপ্ত সিদ্দিককে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ডান চোখের উপরে আঘাতপ্রাপ্ত রফিক আর শরীরে আঘাতপ্রাপ্ত আকরাম নামে আরো দুই ঢাবি শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

চাকরিতে কোটা সংস্কার দাবিতে রোববার দুপুরের পর থেকে পূর্বঘোষিত গণপদযাত্রা কর্মসূচিতে উত্তাল ছিল রাজধানী ঢাকাসহ গোটা দেশ। রাত গড়ালেও রাজধানীর ব্যস্ততম মোড় শাহবাগ অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

দাবি পূরণে সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত অবরোধ অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তারা। এরই একপর্যায়ে রাত পৌনে ৮টার দিকে অ্যাকশনে যায় পুলিশ।

আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়া প্রসঙ্গে ধানমন্ডি জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহেল কাফি বলেন, ‘তারা দুপুর থেকে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল এবং সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ছিল রোববার। সেকারণে আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।’

উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো- কোটা সংস্কার করে ৫৬ থেকে ১০ শতাংশে কমিয়ে আনা, কোটা প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া, চাকরি নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা না নেয়া এবং চাকরি ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্ক ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা।