প্রথমআলো: দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এর আগে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। বেলা ১টা ৩৩ মিনিটে তাঁকে বহনকারী গাড়ি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কারাগারের দিকে রওনা হয়। বেলা পৌনে দুইটায় তিনি কারাগারে পৌঁছান।

বিএসএমএমইউয়ের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় খালেদা জিয়া কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কয়েকটি এক্স-রে করা হয়।

খালেদা জিয়া কারাগার থেকে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কিছুটা হেঁটে গিয়ে লিফটে ওপরে ওঠেন। এ সময় তাঁর পরনে ছিল অফহোয়াইট রঙের জামদানি শাড়ি। তাঁর চারপাশে ছিল পুলিশ, চিকিৎসক, নার্স ও কারারক্ষী।

হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও খালেদা জিয়ার কয়েকজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মধ্যে নিউরো মেডিসিনের ওয়াহিদুজ্জামান এবং মেডিসিনের এফ এম সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি ও তাঁর দুই মেয়ে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন।

খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাসপাতালে আনা-নেওয়ার সময় ওই সব সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়। পাশাপাশি পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

নেত্রীর আগমন উপলক্ষে হাসপাতাল ও কারাগার এলাকায় বিএনপির কিছু কিছু নেতা-কর্মীকে ভিড় করতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ হাসপাতালের সামনে জড়ো হওয়া বিএনপির কিছু কর্মীকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে।

খালেদা জিয়া কারাগারের উদ্দেশে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর বিএনপির সমর্থকেরা আজিজ মার্কেটের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি কাঁটাবন মোড় হয়ে হাতিরপুলের দিকে গেলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে তাঁকে সেখানে রাখা হয়।

১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গঠিত বিশেষ মেডিকেল বোর্ড কারাগারে গিয়ে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। বোর্ডের সদস্যরা হলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যাপক মো. শামছুজ্জামান (অর্থোপেডিকস), অধ্যাপক মনসুর হাবীব (নিউরোলজি), অধ্যাপক টিটু মিয়া (মেডিসিন) ও সোহেলী রহমান (ফিজিক্যাল মেডিসিন)।

পরের দিন চিকিৎসক মো. শামসুজ্জামান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তবে গুরুতর নয়।

এদিকে গতকাল শুক্রবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে খালেদা জিয়াকে দেখতে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ম্যাডামের স্বাস্থ্য খুব ভালো নয়। প্রথম থেকেই আমরা তাঁর স্বাস্থ্য সম্পর্কে খুব উদ্বিগ্ন। তাঁর সমস্যাগুলো বেশ বেড়ে গেছে।’