বার্তা পরিবেশক :

২০১৭ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহতম ঘটনা আরাকান থেকে রোয়াইঙ্গা মুসলমানদেরকে নির্মুল করা। মিয়ানমারের বর্বর সেনাবাহিনী ও সে দেশের সুবিধাবাদি ধর্মান্ধ বৌদ্ধসম্প্রদায় হাজার হাজার বছর ধরে আরাকানে বসবাসকারী রোয়াইঙ্গাদেরকে জাতিগতভাবে নির্মুল করছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ১৯৬২ সালে পর থেকে বার্মার (বর্তমান মিয়ানমারের) স্বৈরশাসক আরাকান থেকে ক্রমে রোয়াইঙ্গা মুসলমানদেরকে নির্মুল করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সরকার ও তাদের তাবেদার গেরুয়াধারী জঙ্গী বৌদ্ধ ভান্তেদের নেতৃত্বে আরাকানে রোয়াইঙ্গাদের উপর গণহত্যা, গণধর্ষণের মতো নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে প্রায় ১০ লাখ রোয়াইঙ্গা বিগত আড়াই বছরের মধ্যে তাদের মাতৃভূমির মায়া-মমতা ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নিচ্ছে প্রতিবেশি বিভিন্ন দেশে। এঘটনার উপরে ভিত্তি করে ২০১৭-২০১৮ সালে বাংলাদেশসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সাহিত্য-ইতিহাস রচিত হয়েছে, হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় কক্সবাজারের শক্তিমান কবি মনজুরুল ইসলামের সাম্প্রতিক প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ “রোহিঙ্গা জাতির শোকার্ত উপাখ্যান”। “রোহিঙ্গা জাতির শোকার্ত উপাখ্যান” এর উপরে আলোচনা করতে গিয়ে বক্তাগণ এসব কথা বলেন।

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪১১ তম পাক্ষিক সাহিত্য সভায় কবি মনজুরুল ইসলামের রোহিঙ্গা জাতির শোকার্ত উপখ্যান গ্রন্থের উপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ৬ এপ্রিল ২০১৮ শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম।

একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তাগণ আরো বলেন, অমিত্রাক্ষর ছন্দ, অষ্টপদি ও ষষ্টপদি এবং চতুর্দশপদি সনেট রচনার মাধ্যমে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেন। অনুরুপভাবে কক্সবাজারের কবি মনজরুল ইসলাম “রোহিঙ্গা জাতির শোকার্ত উপাখ্যান” কাব্যগ্রন্থে অস্টক, অস্টক-এর মাধ্যমে ষষ্টদশপদি কবিতা রচনা করে বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন দিকের সূচনা করেছেন। তিনি সিদ্ধহস্তে ও সচেতনতার সাথে তার গ্রন্থে বিভিন্ন উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অলংকরন ব্যবহার করেছেন।

আলোচনায় বক্তাগণ আরো বলেন, “রোহিঙ্গা জাতির শোকার্ত উপাখ্যান” গ্রন্থে কবির মানবিক দিক উম্মোচিত হয়েছে। তিনি রোয়াইঙ্গাদের দুদর্শাকে, রোহিঙ্গাদের উপর সংগঠিত গণহত্যা, গণধর্ষণসহ সবধরণের নিবর্তন, রোয়াইঙ্গাদেরকে তাদের স্বভূমি থেকে উচ্ছেদের বিষয়টিকে তার মমত্ববোধ থেকে বিবেচনা করে কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন এজন্য তিনি ধন্যবাদের যোগ্য।

একামেডীর স্থায়ী পরিষদ সদস্য কবি অধ্যাপক দিলওয়ার চৌধুরী মুখ্য আলোচক ছিলেন গ্রন্থের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।

“রোহিঙ্গা জাতির শোকার্ত উপাখ্যান” গ্রন্থের উপর আলোচনা করেন একাডেমীর স্থায়ী পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট-কবি সুলতান আহমেদ, স্থায়ী পরিষদ সদস্য গবেষক নূরুল আজিজ চৌধুরী, মূল্যায়ন সম্পাদক কবি অমিত চৌধুরী, একাডেমীর জীবন সদস্য সিনিয়র আইনজীবী শামসুল আলম কুতুবী, সিনিয়র আইনজীবী দিলীপ কুমার আচার্য, একাডেমীর জীবন সদস্য ইঞ্জিনিয়ার বদিউল আলম, লেখক এডভোকেট নূরুল হক, একাডেমীর নির্বাহী সদস্য কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক গল্পকার সোহেল ইকবাল, একাডেমীর জীবন সদস্য এডভোকেট নূর মোহাম্মদ, এডভোকেট আহমদ ফারুক, একাডেমীর নির্বাহী সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী আবুল কালাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক হাসান আহমদ সোবহানী, সমাজ গবেষক নির্বান পাল প্রমুখ।

পরে একাডেমীর নির্বাহী সদস্য আবৃত্তিকার কল্লোল দে চৌধুরী কবিতা আবৃত্তি করেন।

এসময় অন্যদের উপস্থিত ছিলেন, একাডেমীর সদস্য কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক নাজিম উদ্দিন, একাডেমীর জীবন সদস্য দিলরুবা হাসান, একাডেমীর নির্বাহী কমিটির শিশু ও মহিলা বিষয়ক সম্পাদক কবি শামীম আকতার ও আবৃত্তিকার কবি তৌহিদা আজিম।

৪১২ তম পাক্ষিক ২০ এপ্রিল

কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর ৪১২ তম পাক্ষিক সাহিত্যসভা আগামী ২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার বিকাল ৪ টায় কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। উক্ত সাহিত্য সভায় কবি –আবৃত্তিকার তৌহিদা আজিমের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “চাঁদ ডুবেছে করতলে”-এর উপর আলোচনা করা হবে। উক্ত অনুষ্ঠানে একাডেমীর সংশ্লিষ্ট সকলসহ জেলার কবি-সাহিত্যিক, সাহিত্যামোদিদের যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য একাডেমীর সভাপতি মুহম্মদ নূরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কবি রুহুল কাদের বাবুল আহবান জানিয়েছেন।