সিবিএন ডেস্ক:
একটি উত্তরপত্রে আঁকা হয়েছে পানপাতার মতো দেখতে পরিচিত সেই ভালোবাসার প্রতীক। তাকে আবার এফোঁড়-ওফোঁড় করেছে একটি তির। খাতায় বড় বড় হরফে লেখা ‘আমি পূজাকে ভালোবাসি।’ আর পরীক্ষকের উদ্দেশে ওই শিক্ষার্থী লিখেছে, ‘স্যার, এই প্রেম আমাকে পড়াশোনা করতে দিচ্ছে না। তা না হলে হাইস্কুলে আমি অনেক পড়াশোনা করতাম।’

ভারতের উত্তর প্রদেশে অনুষ্ঠিত চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় এ ধরনের বেশ কিছু উত্তরপত্র পেয়েছেন পরীক্ষকেরা। নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরের বদলে শিক্ষার্থীরা লিখেছে প্রেমপত্র। অনেকে আবার পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকের প্রতি আকুতি জানিয়েছে। কিছু কিছু শিক্ষার্থী নম্বর দেওয়ার জন্য উত্তরপত্রে অর্থও গুঁজে দিয়েছে। খাতাভেদে অর্থের পরিমাণ ছিল ২০ থেকে ৩০০ রুপি।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, এসব উত্তরপত্র পাওয়া গেছে উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরে। উচ্চমাধ্যমিকে রসায়ন পরীক্ষার উত্তরপত্রে এ কাজ করেছে এক শিক্ষার্থী। উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অদ্ভুত সব ব্যাখ্যা ও আরজি পাওয়া গেছে। কেউ কেউ নম্বর দেওয়ার জন্য পরীক্ষককে ঘুষ দিয়েছে। উত্তরপত্রে রুপি সেঁটে দিয়েছে তারা।

রসায়নের উত্তরপত্রে শিক্ষার্থীর প্রেমপত্রে লেখা ছিল, ‘ভালোবাসা খুব অদ্ভুত, এটি বেঁচে থাকতেও দিচ্ছে না, আবার মরতেও দিচ্ছে না। প্রার্থনা করুন, আমি যদি তাকে না পাই, তবে যেন আমার মৃত্যু হয়।’ প্রেমপত্র লেখার জন্য অবশ্য ক্ষমাও চেয়েছে ওই শিক্ষার্থী। সে লিখেছে, ‘স্যার, এগুলো লেখার জন্য আমি দুঃখিত।’

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, পাস করিয়ে দেওয়ার জন্য আরেক শিক্ষার্থী জানিয়েছে আকুতি। তাতে লেখা, ‘আমার মা নেই। পাস না করলে বাবা আমাকে মেরেই ফেলবেন।’ আরেক শিক্ষার্থী লিখেছে, ‘আমি যখন অনেক ছোট, তখন আমার বাবা মারা যান। ঘরের কাজে আমাকে সাহায্য করতে হয়। আমাকে দয়া করে পরের ক্লাসে তুলে দিন।’

ভারতে গত ১৭ মার্চ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এখনো পর্যন্ত উত্তর প্রদেশ রাজ্যে প্রায় ৬০ লাখ উত্তরপত্র দেখার কাজ শেষ করেছেন পরীক্ষকেরা। রাজ্যজুড়ে মোট ২৪৮টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এপ্রিল মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের কথা রয়েছে।

পরীক্ষার খাতায় শিক্ষার্থীদের এসব আবেগপ্রবণ চিঠি বা অর্থ দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন মুজাফফরনগরের স্কুলগুলোর জেলা পরিদর্শক মুনেশ কুমার। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ ও উত্তরপত্রে লেখা অদ্ভুত বার্তা পেয়েছি। তবে এর মানে এই নয় যে আমাদের শিক্ষকেরা তাদের বেশি নম্বর দিচ্ছেন।’ তিনি আরও বলেন, উত্তরপত্রে শিক্ষার্থীদের এসব লেখা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।