বিদেশ ডেস্ক:
৫৬ জন রোহিঙ্গাকে নিয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে থাই উপকূল হয়ে মালয়েশিয়ার পথে যাত্রা করা নৌকাটি অবশেষে লঙ্কাবি দ্বীপে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার (৩ এপ্রিল) মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ লঙ্কাবি দ্বীপ এলাকায় নৌকাটিকে থামিয়ে দেয়। মালয়েশিয়ার নৌ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নৌকার যাত্রীরা নিরাপদ আছেন। তাদের খাবার ও পানি সরবরাহ করা হয়েছে। এর আগে ভাসমান নৌকাটিকে শনাক্ত করতে সমুদ্র এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছিল মালয়েশিয়া।

মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের বড় অংশটি বাংলাদেশে আশ্রয় নিলেও কারও কারও প্রচেষ্টা থাকে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার। রবিবার (১ এপ্রিল) থাই উপকূলে মালয়েশিয়াগামী এমনই এক রোহিঙ্গাবাহী নৌকা শনাক্ত হওয়ার খবর জানায় ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। সংশ্লিষ্ট এক থাই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানায়, ক্রাবি প্রদেশের উপকূলে স্থানীয় গ্রামবাসী রোহিঙ্গাদের খাবার দিয়েছে এবং পরে নৌকাটি মালয়েশিয়ার দিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নৌকাটিতে ৫৬ জন রোহিঙ্গা ছিল বলেও জানিয়েছে থাই কর্তৃপক্ষ। এ খবর পাওয়ার পর মালাক্কা মোহনা ও আন্দামান সাগরে বিশেষ করে লঙ্কাবি দ্বীপের কাছে টহল জোরদার করে মালয়েশিয়া।

মঙ্গলবার রয়টার্সকে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা নৌকাটিকে শনাক্ত করতে পেরেছে। মালয়েশিয়ার নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আহমদ কামারুলজামান আহমদ বদরুদ্দিন রয়টার্সকে বলেন, ‘৫৬ যাত্রীর বেশিরভাগই শিশু ও নারী। তারা নিরাপদ আছে, তবে তারা ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। আমরা তাদেরকে পানি, খাবার এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তা দিয়েছি।’

মালয়েশিয়ার মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির মহাপরিচালক জেনারেল জুলকিফিলি আবু বকর বলেন, মানবিকতাবোধ থেকে শরণার্থীদেরকে দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। রয়টার্সকে পাঠানো একটি টেক্সট মেসেজে তিনি আরও বলেন, ‘তাদেরকে অভিবাসন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ইতোমধ্যে ‘জাতিগত নির্মূলের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ বলে আখ্যা দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব প্রশ্ন তুলেছেন, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হলে তাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ছাড়া আর কী নামে ডাকা হবে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে রোহিঙ্গা তাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও এনেছে জাতিসংঘ।

এর আগে ২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার পর লাখো রোহিঙ্গাকে সাগরপথে বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে পালাতে দেখা গেছে। অনেকে আবার তখন মানব পাচারকারীদের কবলেও পড়েছিলেন। ২০১৫ সালে সাগরপথে দলবদ্ধভাবে রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। সে সময় আন্দামান সাগর হয়ে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা থাইল্যান্ড,মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিল। মালয়েশিয়ায় এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বসবাস। রোহিঙ্গা প্রশ্নে বরাবরই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে মালয়েশিয়া। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে না পারায় মিয়ানমার সরকারের সমালোচনা করে আসছে দেশটি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়ার কোস্ট গার্ড অঙ্গীকার করে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পালিয়ে আসা কোনও শরণার্থী নৌকাকে ফেরত পাঠানো হবে না।