ডেস্ক নিউজ:
অসম বয়সী প্রেমিক পুলিশ কনস্টেবলের হাত ধরে পালানো দুই সন্তানের জননী জেকি বিয়ে করে এখন নতুন স্বামীর ঘরে সংসার পেতেছেন।

সোমবার রাতে থানায় ছেলে ও মেয়ে পক্ষের উভয়ের উপস্থিতিতে দুই সন্তানের মা জেকি নতুন স্বামীর ঘরে যান। সেইসঙ্গে তার দুই শিশু কন্যাও আগের স্বামীর কাছে থাকবে বলে জানিয়ে দেন মা। মায়ের এ কথা শুনে কেঁদে ফেলে সন্তানরা। এ সময় সন্তানদের কান্নায় কেঁদে ফেলে থানা পুলিশ সদস্যরাও।

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজা নগর ইউনিয়নে পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে প্রবাসীর স্ত্রী দুই সন্তানের মা পুলিশের হাত ধরে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সোমবার দুপুরে পলাতক এই প্রেমিক যুগল ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে এলে জনতা তাদের ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ইউনিয়নের ফুলবাগিচা গ্রামের ভাগ্যের বাড়ির আব্দুল মালেকের কন্যা জিয়াসমিন আকতার জেকির সঙ্গে একই ইউনিয়নের রাজাভুবন সিকদারপাড়া এলাকার দেলোয়ার সিকদারের ছেলে মো. মনছুরের ১৩ বছর আগে বিয়ে হয়।

বিয়ের ৩ মাসের মাথায় প্রবাসী স্বামী সৌদিআরবে নিজ কর্মস্থলে ফিরে যান। বিয়ের দুই বছর পর স্ত্রীর কোলজুড়ে এলো কন্যা সন্তান মৌমিতা। কন্যা সন্তানের ৫ বছর বয়সে গৃহশিক্ষক হিসেবে বাসায় রাখা হলো একই গ্রামের কলেজছাত্র খালেদ হোসেনকে। গৃহশিক্ষক মৌমিতাকে পড়ানোর পাশাপাশি তার মায়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে।

এভাবে দিনের পর দিন তাদের অনৈতিক সম্পর্ক চলতে থাকে। এরই মধ্যে স্বামী বিদেশ থেকে আসে। কয়েক মাস থেকে আবার চলে যায়। বিষয়টি তেমন আঁচ করতে পারেনি স্বামী। কিন্তু গৃহশিক্ষকের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক থেমে নেই। ২০১৫ সালের শেষের দিকে তাদের দ্বিতীয় মেয়ের আফ্রা’র জন্ম হয়। স্বামীর নিজের ঘর ছেড়ে সুরম্য আলাদা পাকা দালান করেন।

এরই মধ্যে গৃহশিক্ষক খালেদ হোসেন তখন উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে সবে মাত্র এইচএসসি পাস করে বের হয়। চাকরি নেয় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কনস্টেবল পদে। নতুন চাকরিতে যোগদানের পর এই অসম বয়সী প্রেমিকের পায়ের তলা আরও শক্ত হয়। তারা সিদ্ধান্ত নেয় পালিয়ে বিয়ে করার। আদালতের মাধ্যমে প্রবাসী স্বামীকে তালাক দেয়ার ফন্দি করে তারা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বামী বিদেশ থেকে আসার পর এই ফন্দি যাতে টের না পান সেজন্য জেকি বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতেও যান। গত ২৪ মার্চ প্রেমের টানে নিজের দুই সন্তানকে ঘরে রেখে পালিয়ে যায় এই নারী।

পরদিন ২৫ মার্চ রাঙ্গুনিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন জেকির স্বামী সৈয়দুল আলম সিকদার। মা না থাকায় দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়ে বাবা। কয়েকদিন পর দুই সন্তানকে নানার বাড়িতে দিয়ে আসে। পালিয়ে যাওয়ার পরদিন আদালতে গিয়ে বিয়ে করে প্রেমিক যুগল।

গতকাল সোমবার (২ এপ্রিল) উপজেলার রাণীর হাট ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়ে স্থানীয়রা তাদের দেখতে পেয়ে আটক করে। পরে জনতার হাত থেকে উদ্ধার করে তাদের থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশের ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভূঞা বলেন, নিখোঁজ ডায়েরির ভিত্তিতে তাদের থানায় আনা হয়। জেকি আকতার সদ্য বিয়ে করা স্বামীর সঙ্গে সংসার করার আগ্রহ দেখায়। সেইসঙ্গে আগের স্বামীর কাছে দুই সন্তানকে দিয়ে দেয়ার কথা বললে, দুই সন্তানকে তাদের বাবার কাছে দিয়ে দেয়া হয়।

জেকির আগের স্বামী মো. মনছুর বলেন, ঘরে রাখা ৫ লাখ টাকা ও ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পর পুরুষের সঙ্গে সে পালিয়ে যাওয়ায় তাকে আমি আর ঘরে নিতে পারছি না। দুই কন্যা সন্তান আমার কাছে বড় হবে।

জানতে চাইলে জিয়াছমিন আক্তার জেকি বলেন, আমি আগের সংসারে সুখী ছিলাম না। তাই সুখী হতে খালেদকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেছি আমি।