জাগো নিউজ:
বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি কলেজের শিক্ষক সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) চাহিদাপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক সঙ্কট চরম পর্যায়ে রূপ নেয়ায় শিক্ষা ক্যাডারে এই নিয়োগ দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। রোববার মন্ত্রণালয়ে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারা দেশে সরকারি কলেজগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় দুই হাজার প্রভাষক পদ শূন্য রয়েছে। শিক্ষার মান উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও শিক্ষক শূন্যতায় নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে কলেজের শিক্ষাকার্যক্রম। সাধারণ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে যে পরিমাণ শিক্ষক নিয়োগ পাচ্ছেন তা দ্বারা শিক্ষক সঙ্কট দূরীকরণ সম্ভব হচ্ছে না।

এ কারণে স্বাস্থ্য ক্যাডারে চিকিৎসক নিয়োগে বিশেষ বিসিএস আয়োজনের মতো শিক্ষক নিয়োগ দিতেও রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি সভা হয়। শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তাবের ওপর সভায় নীতিগত সিদ্ধান্তে সবাই একমত পোষণ করেন। সভায় সভাপত্বিত করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন। এছাড়া মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উপস্থিত মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর মোহাম্মদ শামছুল হুদা জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশের অনেক সরকারি কলেজে প্রভাষক পদে শিক্ষক সঙ্কট নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করতে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনে (পিএসসি) চাহিদাপত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে চলতি মাসেই এ চাহিদাপত্র পাঠানো হবে।

তিনি বলেন, পিএসসির আয়োজিত সাধারণ বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে যে সংখ্যাক শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ আসে তাদের নিয়োগ দিয়ে এ সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব হচ্ছে না। এখনো অনেক কলেজে বিষয়ভিত্তিকে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পার্শ্ববর্তী কলেজের শিক্ষক ধার করে এনেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনা করে শিক্ষকদের জন্য একটি বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হলে সমস্যা লাঘব করা সম্ভব হবে। আগামী এক বা দুই বছরের মধ্যেই শিক্ষকদের জন্য বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে পিএসসিকে এই চাহিদাপত্র পাঠানো হবে। এর মাধ্যমে সরকারি কলেজে নিয়োগের জন্য এক থেকে দেড় হাজার প্রভাষক নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মাউশি সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে বর্তমানে কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউট, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, আলিয়া মাদরাসা-সহ ৩২৯টি সরকারি কলেজ রয়েছে। এসব কলেজে মোট ১৬ হাজার ৫৫৪টি শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ রয়েছে ৫০৭টি, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ২২১, সহকারী অধ্যাপক চার হাজার ২৮৪ এবং প্রভাষক পদে আট হাজার ২৬টি পদ রয়েছে। দেশের ২১৫টি সরকারি কলেজে শিক্ষক সঙ্কট সবচেয়ে বেশি। প্রায় চার হাজার শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে। সবচেয়ে বেশি শূন্য প্রভাষকের পদ। এ পদ খালি আছে প্রায় দুই হাজার।

শিক্ষা ক্যাডারে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনে মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তকে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক সাধুবাদ জানিয়ে জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি কলেজ উচ্চশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হলেও সেখানে চরম শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমেই এ সঙ্কট নিরসন করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের জন্য বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনে অফিসিয়াল আবেদন পাইনি। সেটি পেলে আইন পরিবর্তনসহ এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করা হবে।

জানা গেছে, এই বিশেষ বিসিএস আয়োজন করার ক্ষেত্রে পিএসসির চলমান আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হবে। এ আইন পরিবর্তনের জন্য খসড়া আকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। সেখানে খসড়া আইন চূড়ান্ত করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। এরপর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করতে পারবে পিএসসি।