শাহেদ মিজান, সিবিএন:
বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো কক্সবাজারের অন্যতম শীর্ষ উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠ কক্সবাজার সিটি কলেজের ২৫ পূর্তির রজত জয়ন্তীর উৎসব ’ ২০১৮। এক অনন্য ও তুমুল উচ্ছ্বাসমুখর উৎসব উপহার দিতে সক্ষম হয়েছে । এই উৎসবটি মাইল ফলক হয়ে থাকবে কলেজটির জন্য। কারণ বর্ণাঢ্য আঙ্গিকে সফল একটি উৎসব উপহার বেশ সুনাম কুড়িয়েছে কক্সবাজার সিটি কলেজ। এই জন্য আয়োজক কর্তৃপক্ষ বেশ বাহবাও পাচ্ছে।- বিভিন্ন মানুষের প্রতিক্রিয়ায় এমনটি উঠে এসেছে।

১৯৯৩ সালে ভাড়া করা অস্থায়ী কাঠামোতে ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা করেছিল কক্সবাজার সিটি কলেজ।  ৬১জন ছাত্র-ছাত্রী ও ১০/১২ জন শিক্ষক নিয়ে ইতিহাসের অংশ হওয়ার টার্গেট নিয়ে যাত্রা করেছিল কলেজটি! মাত্র ২৫ বছরের পথপরিক্রমার অসাধারণ ও নজিরবিহীন সাফল্যই সেই সাক্ষ্য বহন করে। কারণ ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রাকারী  সেই কলেজটি আজ নি:সন্দেহে মহীরূপে পরিণত হয়েছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, সাফল্য উদযাপন এবং ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিতে ২৫ বছর পূর্তির রজত জয়ন্তী উৎসব উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয় । গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এর প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয়। সেই থেকে দীর্ঘ পাঁচমাসের নিরলস প্রচেষ্টা এবং পরিশ্রমের ফলে অবশেষে একটি প্রশংসনীয় ও তুমুল উচ্ছ্বাসমুখর উৎসব উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন তারা। বর্তমান সময়ে পুরো দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা বাংলাদেশের কোটি তারুণ্যের আদর্শ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক যে উৎসবের সঙ্গী হলো তাতে বোঝা যায়, উৎসবটি শতভাগ সফল। বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ায়ও সেটি ফুটে উঠেছে। কারণ পলক মানে চমক!

গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া রজত জয়ন্তী উৎসবে গিয়ে দেখা যায়, বহুল প্রতীক্ষিত  বর্ণাঢ্য উৎসবে বর্তমান ও প্রাক্তন মিলে অন্তত পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রী মিলিত হন। উৎসবে প্রধান অতিথি বাংলাদেশের কোটি তারুণ্যের আদর্শ জুনাইদ আহমেদ পলক ও সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলসহ আরো বেশ কয়েকজন গুণী অতিথি ঘিরে এক উচ্ছ্বাসমুখর উৎসবে মেতে উঠেন প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা। সকাল সাড়ে ৮ টায় কক্সবাজার শহীদ দৌলত ময়দান থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালীর মধ্যে রজত জয়ন্তী উৎসবের সূচনা হয়।

পরে কলেজ ক্যাম্পাসে এক দীর্ঘ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার পর মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। মধ্যাহ্নভোজের পর স্মৃতিচারণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র-ছাত্রী ও অতিথিদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিলো সিটি কলেজ ক্যাম্পাস। তাদের পদভারে কলেজ ক্যাম্পাস জুড়ে বিরাজ করেছে উৎসবমূখর পরিবেশ । অতিথিদের জ্ঞানগর্ভ ও অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য শুনে বিমোহিত হয়ে উঠেন শিক্ষার্থীরা।

উৎসবে এসে অতিথিরা স্বল্প সময়ে কক্সবাজার সিটি কলেজের এই অর্জনে অভিভূত হয়েছেন। তারা বলেছেন শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের অত্যন্ত আন্তরিকতায় কলেজটি আজ মহীরূহে পরিণত হয়েছে। আগামীতে শুধু দক্ষিণ চট্টগ্রাম নয়, এই কলেজটি একদিন দেশ সেরা কলেজে রূপান্তর হবে মন্তব্য করেন অতিথিরা।

এদিকে কক্সবাজার সিটি কলেজের রজতজয়ন্তীর উৎসবের আমেজ কক্সবাজার ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। ফেসবুক, টুইটার এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে উৎসবের মুহূর্তগুলো ছড়িয়ে পড়ে। এতে সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এই জন্য নানা ভাবে অভিনন্দন জানিয়ে অনেকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ্যমে আয়োজক কর্তৃপক্ষের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন।

তারা বলেছেন, কক্সবাজার জেলা বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি সময়ে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্তি উৎসব ও পুনর্মিলনীর উৎসব হয়েছে। কিন্তু কোথাও সিটি কলেজের মতো হয়নি। এর মূলে রয়েছে সিটি কলেজের উৎসবের সঙ্গী  বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের আইডল প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। যে মানুষকে নিয়ে পুরো দেশজুড়ে উচ্ছ্বাস হয় সে মানুষটি সঙ্গী হিসেবে পেয়ে উচ্ছ্বাসের এক দূর্গে পরিণত হয়েছিল কক্সবাজার সিটি কলেজের রজতজয়ন্ত্রী উৎসব! এতে করে কলেজটি ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিলো।

এই উৎসব আয়োজনে কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এথিন রাখাইন, অধ্যক্ষ ক্যথিং অং,  উপাধ্যক্ষ আবু মো: জাফর সাদেক, উৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আকতার চৌধুরী, সদস্য সচিব মঈনুল হাসান পলাশসহ সকল শিক্ষক কর্মচারী ছাত্রছাত্রী অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

এ ব্যাপারে অধ্যক্ষ ক্য থিং অং বলেন, ২৫ বছর পূর্তির রজত জয়ন্তী উৎসব করা আমাদের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জ ছিলো। কারণ আমরা চেয়েছি একটি সফল ও আলোচিত উৎসব উপহার দিতে। এর জন্য আমরা দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে কাজ করেছি। কলেজের অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রধান ফটকে সুদৃশ্য গেইট নির্মাণসহ পুরো ক্যাম্পাসের বিউটিফিকেশন এবং রেজিস্ট্রেশন, অতিথি দাওয়াত, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যান্যদের বাণী সংগ্রহ করতে অনেক সময় লেগেছে। তবে পরীক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে কয়েক বার সময় পরিবর্তন করতে হয়েছে। সবকিছুর পর আমরা একটি অত্যন্ত সফল উৎসব উপহার দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এর জন্য যারা কষ্ট করেছেন তাদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।

তিনি আরো বলেন, কলেজের অগ্রযাত্রায় সীমাহীন সীমাবদ্ধতা এবং চরম প্রতিবন্ধকতার মুখেও আমাদের দৃঢ় মনোবলের অধিকারী পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষক কর্মচারীদের অদম্য আকাঙ্খাই কলেজের অগ্রযাত্রাকে সবসময়ই সচল রেখেছে। রজত জয়ন্তী উৎসবকে আমরা কলেজের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে নিয়েছি। এরপরে আমরা এগিয়ে যাবো নতুন উদ্যমে।