এম.এ আজিজ রাসেল:

সকাল ৭টা। ওই সময়ে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট বা স্কুলে যাওয়ারই কথা। তবে না। এই সাজ সকালেই এসে হাজির সৈকতের ঝাউবীথিতে। সাথে রয়েছে প্রিয়তম। সকাল থেকে বিকাল অবদি এই দৃশ্য প্রতিদিনের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অভিভাবকের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইউনিফর্ম পড়ে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টের কিটকট গুলোতে চুটিয়ে প্রেমের ক্লাস চলছে হরদম। যেন দেখার কেউই নেই। এ নিয়ে সচেতন মহলে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

শনিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সমুদ্র সৈকতের, ইনানী, দরিয়া নগর, কলাতলী, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট, বালিকা মাদ্রাসাস্থ কবিতা চত্তরে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন প্রেমের ক্লাসে যোগ দিচ্ছে অর্ধশত শিক্ষার্থী। অভিভাবকরা কোনভাবেই বুঝতে পারছে না তাদের সন্তান স্কুল কিংবা কলেজ ফাঁকি দিচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা কিটকট বা ঝাউবাগানের ভেতরে দীর্ঘ আলাপ চলে মধুর প্রেমের। নানা খুনসুটি আলাপ থেকে শুরু করে ওইসব প্রেমিক জুটির আপত্তিকর আচরণে বিব্রত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু তাদের সেদিক কোন খেয়াল নেই। তারা মত্ত রয়েছে অন্য ভূবনে। কোমলমতি এই শিক্ষার্থীদের অস্বাভাবিক আচরণে ভারী হয়ে উঠছে সৈকতের আকাশ। অনেক পথচারি তাদের নোংরা আচরণ উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চলাকালীন ইউনিফর্ম পড়ে পার্ক কিংবা বিনোদন স্পট গুলোতে পাওয়া গেলে আটক করার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশনায় কেউ মানছে না।

এ বিষয়ে শিক্ষাবিদ সোমেশ্বর চক্রবর্তী বলেন, এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সন্তান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে কিনা অভিভাবকদের অবশ্যই খোঁজ রাখতে হবে। আর শিক্ষদের উচিৎ শিক্ষার্থীরা না আসলে অভিভাবকদের জানানো।

আরেক শিক্ষাবিদ এম.এ বারী বলেন, দিন দিন নৈতিকতা অবক্ষয় হচ্ছে। আমরা জ্ঞান অর্জন করছি। কিন্তু নৈতিকতা ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছি। পারিবার হচ্ছে নৈতিকতার মূল ভিত্তি। তাই অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে।

পুলিশ সুপার ড. এ.কে.এম ইকবাল হোসেন বলেন, সমাজের সকলের স্ব স্ব দায়িত্ব রয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবক মিলে সন্তানদের প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। আত্মীয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদেরও এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করা উচিত। পুলিশ সব সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে। সৈকতের ঝাউবাগানে পুলিশি টহল জোরদার করা হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা এই আচরণ করতে না পারে।

জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, কোন শিক্ষার্থী স্কুল বা কলেজ ফাঁকি দিচ্ছে তা তাদের প্রতিষ্ঠান ও অভিবাবকদের খোঁজ রাখতে হবে। কোথায় যাচ্ছে, স্কুলের বাইরে কোথায় সময় কাটাচ্ছে, তা তাদের দৃষ্টিতে রাখলে শিক্ষার্থীরা আর স্কুল/কলেজ ফাঁকি দিতে পারবে না। পাশাপাশি কোন শিক্ষার্থী যাতে এই সব স্থানে এসে অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে তার প্রতি প্রশাসন সজাগ দৃষ্টি রাখবে।