সৌদিঅারব সংবাদদাতা:
সৌদি আরবে চাকরি করতে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার আলমগীর হোসেন (৩৭)। অথচ দুই বছর ধরে তাঁর কোনো খোঁজখবর নেই।

দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, আলমগীর মারা গেছেন। তবে বাংলাদেশে থাকা আলমগীরের পরিবার তা মানতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, মৃত্যুর কারণ হিসেবে একেকবার একেক কথা জানিয়েছে দূতাবাস। তাই দূতাবাসের কথায় বিশ্বাস নেই তাঁদের।

বাংলাদেশ দূতাবাসের আইনবিষয়ক সহকারী ফয়সাল আহমেদ জানান, প্রায় দুই বছর আগে সৌদি আরবের মরুভূমিতে মারা যান আলমগীর হোসেন। এর প্রায় দুই মাস পরে পাওয়া যায় তাঁর গলিত লাশ। পশু-পাখিও নষ্ট করে ফেলেছিল লাশটি। তবে লাশের সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন যে লাশটি বাংলাদেশি আলমগীর হোসেনের। পরে তা উদ্ধার করে হিমঘরে রাখা হয়।

ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘লাশটি শনাক্ত করার পর থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা কোনো সাড়া দেননি। বরং যখনই পরিবারের কাছে ফোন করা হয়েছে, তখনই তাঁরা (আলমগীরের মা-বাবা-ছেলে-ভাই) আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন।’

আলমগীর কুয়েত থেকে ভিজিট ভিসায় সৌদি আরব প্রবেশ করে পালিয়ে যান, এর আট মাস পর মরুভূমিতে মারা যান বলেও জানান এ আইন সহকারী।

নিহতের পরিবার বারবার তাঁদের কাছে লাশের ছবি দেখতে চায় বলে জানান ফয়সাল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা ছবি দিতে পারি না, তার কারণ হলো, লাশটি একেবারেই গলে-পচে গেছে। পুলিশ ছবি তোলার অনুমতি দিচ্ছে না।

আবার ফরেনসিক বিভাগ বলছে, যদি ডিএনএ পরীক্ষা করতে হয়, তাঁরা এসে করুক, তবুও এই লাশের ছবি তোলা আইনিভাবে ঠিক নয়। এ কারণেই তাদের ছবি পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না।’

রিয়াদে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস সেক্রেটারি ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে এই লাশ নিয়ে চিন্তিত। না পারছি বাংলাদেশে পাঠাতে, আবার না পারছি তাদের অনুমতি ছাড়া লাশ দাফন করতে। পরিবারের পক্ষ থেকেও যদি সম্মতি পেতাম, তাহলেও কিন্তু আমরা লাশটাকে দাফন করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু সেটাও তো হচ্ছে না।’

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় আলমগীর হোসেনের ছেলে আশরাফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর কাতার যান। সেখান থেকে কোম্পানির মালিক আব্বাকে নিয়ে সৌদি আরবে যান। আব্বা মূলত বিভিন্ন খামারের জন্য পানির ট্যাঙ্কে করে পানি পরিবহন করতেন। এটাই ছিল তাঁর কাজ। হঠাৎ একদিন সৌদি দূতাবাস থেকে টেলিফোন করে বলা হলো, আব্বা নাকি মারা গেছেন!’

এর পরে দূতাবাস থেকে একেক সময় একেক কথা বলা হয় বলেও অভিযোগ করেন আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘একবার বলে পাহাড়ে মারা গেছে, একবার বলে গাড়িচাপা পড়ে মারা গেছেন, আবার বলে পাহাড়ের গুহায় মারা গেছেন। তাহলে বিশ্বাস করব কোনটা? আমি ছবি পাঠাতে বলেছি অনেকবার, কিন্তু তারা পাঠায়নি। তারা বলেছে, লাশ গলে গেছে। বোঝা যাওয়ার কোনো পথ নেই। তাই ছবি তোলা যাবে না।’

‘ছবি দেখতে পাব না। জামাকাপড়ের ছবি পাব না। ঠিকঠাকমতো তথ্য পাব না, তাহলে বিশ্বাস করব কী করে যে উনিই আমার বাবা?’ প্রশ্ন রাখেন আশরাফুল।

তবে দুই বছর ধরে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ নেই বলেও জানালেন আশরাফুল। তিনি জানান, দুই বছর ধরে বাবার কোনো খোঁজ নেই। বহুবার চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে আর কখনো যোগাযোগ করতে পারেননি তাঁরা।