জিয়াউল করিম চৌধুরী:
খুব খালি চোখেই কুতুবদিয়া বেড়িবাঁধ নির্মাণে কিছু ঘাটতি ধরা পড়ে, যা অবশ্যই পুরো দ্বীপবাসীর জন্য বিপজ্জনক। সিলেটি পাথর ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে না, বরং তার বদলে স্থানীয় পাথর ব্যবহার করা হচ্ছে, কাঁচপুরের কিছু পাথর ব্যবহার হচ্ছে যার গুণগত মান খুবই খারাপ।
এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী লিটনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এই কাজ যেহেতু নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চলছে সেহেতু আমাদের করণীয় কিছুই নাই। কুমিরারছড়া গিয়ে প্রকল্প প্রকৌশলী আবদুর রউফের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এই কাজের টিকাদার জে বি এল কনস্ট্রাকশনের মালিক ফারুক নৌবাহিনীর কাছ থেকে মোট ৯২ (বিরানব্ব্ই) কোটি টাকার কাজটি পেয়েছে।’ এই কাজে মাটির বাধসহ প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটারের ব্লক হবে। কাজের গতি বর্তমান হারে চললে, আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে তা সম্পন্ন হবে না। আর বর্ষার আগে কাজ শেষ করা না গেলে কুতুবদিয়াবাসীর জন্য সেটা হবে দুর্ভাগ্যের এবং দুর্যোগের, অন্যদিকে রাষ্ট্রের এই ৯২ কোটি টাকাও অপচয় হবে।
সম্প্রতি কুতুবদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাধ নির্মাণের চিত্র সরেজমিনে পরিদর্শন করে আমরা নিম্নোক্ত সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন এবং সুপারিশ তুলে ধরছি:
১. কায়সার পাড়া বেড়িবাঁধ:
৩০০মিটার ব্লকসহ এই কাজটিতে জরুরি ভিত্তিতে প্রায় এক কোটি টাকার কাজ হয়েছিল, এর পরও এবার ব্লকসহ কাজ করা হচ্ছে। তবে এই কাজে যে হারে মাটি বাধের ভিতর থেকে নেওয়া হয়েছে তাতে বাঁধ টিকবে কিনা সন্দেহ আছে, তাছাড়া তাড়াতাড়ি কাজ শেষ না হলে কায়সার পাড়া অসম্ভব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে, কারণ জোয়ারের পানি এই দিক দিয়ে ঢোকার সম্ভাবনা বেশি।
২. পশ্চিম তাবলারচর বেড়িবাঁধ:
ব্লক সহ মাটির বাঁধ ধরা হয়েছে ৩৫০ মিটার, অথচ এই অংশে ভাংগা বেড়িবাঁধ আছে ১০০০মিটার। আর তাই জোয়ারের পানি খুব সহজেই এই দিক দিয়ে ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যে মাটি দেওয়া হয়েছে এই মাটি আরো উচু করতে হবে, না হলে বর্ষায় জোয়ারের পানি আটকানো অসম্ভব।
৩. কাহারপাড়া বেড়িবাঁধ:
নির্মাণ করা হচ্ছে মাত্র ১০০ মিটার, কিন্তু এর ভাঙ্গা অংশ প্রায় ৪০০মিটার। এই ১০০ মিটারের পুননির্মাণ বা সংস্কারে আসলে কোনও উপকারই পাওয়া যাবে না। এই কাজ জরুরি ভিত্তিতে গত বছর প্রায় ৫০ লাখ টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছিল, কিন্ত গুণগত মানসম্পন্ন কাজ না হওয়ায় পুরো বেড়িঁবাধ ভেঙ্গে যায় ।
৪.কুমিরারছড়া থেকে মুরালিয়া পর্যন্ত:
মাটির বাঁধ এবং ব্লকসহ ধরা হয়েছে ৮৫০ মিটার প্রায়। মুরালিয়া এবং জেলে পাড়ার বাঁধের অবস্থায় খুবই খারাপ যার কারণে পানি ঢোকার সম্ভাবনা বেশি।
৫.আকবরবলী ঘাট:
এবারের নতুন কাজে ধরা হয়েছে ১৮০০ মিটার। তবে এখনো মাটির কাজ শেষ হয়নি, এই বর্ষায় শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। মাটির কাজ যেভাবে উচ্চতা কম হয়েছে, ব্লক দেওয়া টিক হবে না।
আরও অন্তত বিশ কিলোমিটার ব্লকসহ বাঁধ প্রয়োজন:
কুতুবদিয়ার চর্তুপার্শ্বে দৈর্ঘ্য হচ্ছে চল্লিশ কিলোমিটার। মোটামুটি ভাবে চারপাশের মধ্যে বর্তমানে ব্লক বাঁধ আছে প্রায় পাচ কিলোমিটার, নতুন করে নির্মাণ করা হবে সাড়ে চারকিলোমিটার, বাকি থাকে আরও প্রায় ত্রিশ কিলোমিটারের। এর মধ্যে যদি অন্তত বিশ কিলোমিটার ব্লকসহ বাঁধ হয় তাহলে কুতুবদিয়া বেড়িবাঁধ আগামী বিশ বছর টিকে থাকার সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে আনিছের ডেইল, দক্ষিণ ধুরুং, অমজাখালী, আজম কলোনী, বড়ঘোপ ইউনিয়নে দক্ষিণ তাবলরচর কোন বাধ বা ব্লক ধরা হয়নি, এই জন্য এই এলাকা বেশি ঝুঁকিপুর্ণ। পেয়ারাকাটা ১নং সুইচ গেইট পর্যন্ত উত্তর ধুরংয়ের জন্য এবার বাজেটে কোন টাকা ধরা হয় নাই, এই বাঁধ গুলো দিয়ে পানি ঢোকার সম্ভাবনা বেশি। উত্তর ধুরং ১ নং সুইচ গেইটে কোন বাজেট দেওয়া হয় নাই, এই বাঁধও ঝুঁকিপূর্ণ। কালার মার পাড়ায় উত্তর ধুরং সুইচ গেইট পর্যন্ত বাঁধে কোন বাজেট ধরা হয় নাই, এই বাঁধে পানি ঢোকার সম্ভাবনা আছে।

জিয়াউল করিম চৌধুরী
উর্ধ্বতন সমন্বয়কারী, উদ্যোক্তা উন্ন্য়ন
সিএমটিসি, কোস্ট ট্রাস্ট।