শফিউল্লাহ শফি, কক্সবাজার :

আসন্ন ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত্ব কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সম্মেলন ও দি¦তীয় অধিবেশনের কাউন্সিল মোড় ঘুরে গেছে। জেলা আওয়ামী লীগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে প্রভাবশালী দুই সভাপতি প্রার্থীর মধ্যে সমঝোতা হয়েছে বলে জানা গেছে। সভাপতি প্রার্থীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদে নির্বাচণ করছেন বর্তমান সহ-সভাপতি শহিদুল হক সোহেল। আর সিনিয়র হিসেবে সভাপতি পদে লড়ছেন বর্তমান সহ-সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর।

সূত্র মতে, উল্লেখিত দুই জনেই কক্সবাজারের সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান এবং সভাপতি পদের জন্য হেভিওয়েট প্রার্থী ছিল। এদের মধ্যে একজন কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমএনএ নূর আহম্মদ অ্যাডভোকেটের পুত্র পরিচ্ছন্ন যুবনেতা বর্তমান সভাপতি প্রার্থী সোহেল আহম্মদ বাহাদুর।

অপরজন জেলা আওয়ামী লীগের আমরণ প্রয়াত সভাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর একেএম মোজাম্মেল হকের পুত্র প্রভাবশালী যুবনেতা শহীদুল হক সোহেল। সভাপতি পদে মূলত এ দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এমন আভাস ছিল। পরিবার ও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দুই জনপ্রিয় যুবনেতা সভাপতি পদে লড়ার কারনে সাধারণ সম্পাদক পদে উল্লেখযোগ্য শক্ত প্রার্থী ছিলনা। যে কারনে সাধারণ সম্পাদক পদটি লুফে নেয়ার জন্য অর্ধ-ডজন প্রার্থী হয়েছিল।

সূত্র মতে, ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মোড় ঘুরে দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ, সংসদ সদস্য ও সহযোগি সংগঠনের নীতি নির্ধারকরা। সোহেলকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচণের জন্য বাহাদুর ও সোহেল প্যানেল ঘোষনা করা হয়।

বর্তমান সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শহিদুল হক সোহেল এর ফেইসবুক স্ট্যাটাস মতে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সাংসদবৃন্দ, জেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সিনিয়র নেতাদের সিন্ধান্ত মতে, সভাপতি পদ থেকে সরে সাধারণ সম্পাদকের পদে নির্বাচন করছেন।

এদিকে সভাপতি প্রার্থী সোহেল আহমদ বাহাদুর বলেন, সিনিয়র নেতাদের সিন্ধান্তকে স্বাগতম জানাই। রাজনৈতিক অভিভাবকরা যেই সিন্ধান্ত দিয়েছেন সেই সিন্ধান্ত মতে, বাহাদুর-সোহেল প্যানেল হয়ে ২৯ মার্চ একটি সফল সম্মেলন ও কাউন্সিল উপহার দিতে প্রস্তুত।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শহীদুল হক সোহেল বলেন, দলকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ করার জন্য জেলার শীর্ষ নেতারা যে সিন্ধান্ত দিয়েছেন তার বাইরে যাওয়ার সুযোগ আমার ছিলনা। তাই সভাপতির পদ থেকে সরে সাধারণ সম্পাদক পদে প্যানেল হয়ে নির্বাচন করছি।

সূত্র জানায়, সম্মেলন ও কাউন্সিলের কাছাকাছি সময়ে এসে প্রার্থীতা পরিবর্তন ও সিনিয়র নেতাদের হস্তক্ষেপ পড়ায় বিপাকে পড়েছেন অন্যান্য সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা। অনেকটা দৌড়ঝাঁপও কমে গেছে প্রার্থীদের মাঝে। তবে সূত্র মতে, ইতিমধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদের নির্বাচণ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মোঃ আশরাফ উদ্দিন আহমেদ, ইফতেখার উদ্দিন পুতু, ডালিম বড়ুয়া ও মাসুকুর রহমান বাবু।

এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ার ব্যাপারে অনড় রয়েছেন বলে জানান, পৌর যুবলীগের আহবায়ক সোয়েব ইফতেখার ও কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহাম্মদ। অপরদিকে সভাপতি পদে শতভাগ লড়ার ঘোষনা দিয়ে কাউন্সিলরদের কাছে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন জেলা যুবলীগের সিনিয়র যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক মোঃ শহিদুল্লাহ।

সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আলী আহমদ বলেন, আমি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। সুতারাং যুবলীগে বর্তমানে যারা কাউন্সিলর হয়েছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগ আমার বন্ধু, ভাই ও অনুজ এবং অগ্রজ। সুতারাং আমি নির্বাচন করে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

সভাপতি প্রার্থী মোঃ শহিদুল্লাহ বলেন, জীবনে প্রায় দেড় যুগ সময় যুবলীগ করেছি। যারা আজ নেতাকর্মী তারা সবাই আমার সহযোদ্ধা। সুতারাং নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার প্রশ্নেই আসেনা।

এদিকে সম্মেলনের পূর্ব মৃর্হতে নতুন প্যানেলের ব্যাপারে জেলা যুবলীগের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, সত্যিকার অর্থে নতুন প্যানেলের ব্যাপারে কাউকে সমর্থন দিই নাই। ২৯ মার্চ সম্মেলন ও কাউন্সিল হবে। কেন্দ্রীয় নেতারা ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করবে। এটাই আমার সিন্ধান্ত। এর বাইরে কেউ কিছু বললে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।

সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, জেলা আওয়ামী লীগসহ সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে সভাপতিকে ডাকা হয়েছিল। তিনি অসুস্থ ছিলেন বলেই উপস্থিত হতে পারে নাই। মাহাবুব বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাই আমরা চাচ্ছি দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য। দলকে শক্তিশালী করতে এই সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তার পরেও কেউ ভোটে আসতে চাইলে বাধা নেই।

এদিকে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, কক্সবাজার যুবলীগ ও কেন্দ্রীয় যুবলীগ যেই সিন্ধান্ত নেয় সেই সিন্ধান্তকে আমি স্বাগতম জানাই। আমি ব্যক্তিগত ভাবে চাইনা দলের মধ্যে অসন্তোষ ও হানাহানি বাড়–ক। তাই দলকে শক্তিশালী করার জন্য যুবলীগের নীতি নির্ধারকরা যে সিন্ধান্ত নিয়েছে সেই সিন্ধান্তে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মতি রয়েছে।