রিয়াজ উদ্দিন , পেকুয়া :

পেকুয়ায় মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির দ্বন্ধে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের একমাত্র হাই স্কুল এ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি অনিয়মসহ নানাবিধ অভিযোগ উত্তাপন করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। এতে করে মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ে নজিরবিহীন সংকট দেখা দিয়েছে। বিগত ৬ মাস আগে অভিভাবক ক্যাটাগরীতে কেবিনেট নির্বাচনে ভোটগ্রহন হয়েছে। এ প্রথম গনতান্ত্রিক নির্বাচনে স্বতস্ফুর্তভাবে অভিভাবক ক্যাটাগরীর নির্বাচনে পরিচালনা কমিটি গঠিত হয়েছে। তবে নির্বাচিত কমিটি ঝুলন্ত ও দুদুল্যমান রেখে প্রধান শিক্ষক পূর্বের কমিটিকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করে। দাপ্তরিক সকল কর্মকান্ডে অবহেলা ও অবমুল্যায়ন করে চলছে নির্বাচিত কমিটিকে। এ নিয়ে বর্তমান কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের দ্বন্ধের মুল কারন বিশ্লেষন করেছেন অভিভাবক ও নির্ভরযোগ্য সুত্র। ১৯৫৩ সালে মগনামা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়। সে সময় থেকে এ বিদ্যাপীঠ মগনামায় শিক্ষাকার্যক্রমে ভূয়সী প্রশংসা কুড়ায়। তবে বর্তমানে এ স্কুলে নজিরবিহীন সংকট দেখা দেয়। এ সংকট সম্প্রতি আরও ঘনীভূত হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আক্তার আহমদ সংকটের মুল কারন। সুত্র জানায়, গত ৪ বছর আগে আক্তার আহমদ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পান। অভিযোগ উঠে ওই পদে ৪ জন প্রার্থী ছিলেন। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তার রেজাল্ট ছিল সর্বনি¤েœ। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার মামা শাশুর। সে সুবাধে বিপুল অংকের টাকায় প্রধান শিক্ষক পদটি ভাগিনী জামাতাকে পেয়ে দেয়। ওই সময় থেকে আক্তার আহমদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। অভিভাবক জানায়, স্কুলে কিছু কু সংষ্কার প্রথা শিক্ষার্থীদের ছড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে এসেম্বলী ক্লাসে জাতীয় পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করতে আদেশ দেয়। এমনকি জাতীয় সঙ্গীত থেকে বিরত থাকতেও বলা হয়েছিল শিক্ষার্থীদের। এ সবকে সরাসরি শিরীক বলে ফতুয়া দেয় জামাতপন্থী এ প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে শিক্ষার্থী শিক্ষক অভিভাবকসহ সুশীল সমাজ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দ্বন্ধে জড়ায়। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন আ’লীগ সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান খাইরুল এনাম প্রধান শিক্ষকের এ অযাচিত ফতুয়ার বিরুদ্ধে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে লিখিত অভিযোগ দেয়। এ সব প্রমানিত হয়। প্রধান শিক্ষক এ পরিস্থিতি ক্ষমা চেয়ে নেয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নবনির্বাচিত সদস্য আবুল হাসনাত আব্বাসী জানায়, শিক্ষার উন্নয়ন ও বিকাশ ঘটাতে সরকার নীতিমালা প্রনয়ন করে। আমাদেরকে অবজ্ঞা ও বঞ্চিত করা হচ্ছে। স্বৈরাচারী কায়দায় শিক্ষা প্রতিষ্টান পরিচালিত হতে পারেনা। প্রধান শিক্ষক স্কুলের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে। ব্যাংক হিসাব একাই ব্যবহার করছে। কিছু কুচক্রীমহল এর সাথে প্রধান শিক্ষক গোপনে আতাঁত করছে। শিক্ষার পরিবেশ বিলুপ্ত হচ্ছে। জবাবদিহীতা নেই। প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসে না। রুটিনে ক্লাস বরাদ্দ আছে। তবে পাঠদানে তার কোন সক্ষমতা নেই ও দায়িত্ববোধও নেই। আমরা স্কুলের উৎকর্ষ সাধনে কাজ করি। তিনি এ সব থেকে নিরুৎসাহিত করছেন। দাপ্তরী স্কুলে কাজ করে না। স্কুলের মেঝে পরিষ্কার করতে ঝাড়– দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। সেশন ফি বেতন ও নানাবিধ অজুহাতে হাজার হাজার টাকা অতিরিক্ত নেয়া হয় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। এ সব জবাবদিহীতার প্রয়োজন নেই তার। অভিভাবক ক্যাটগরীতে নির্বাচিত ক্যাবিনেট সদস্য নাজিম উদ্দিন জানায়, প্রধান শিক্ষক একজন লুটেরা। স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এ সব থেকে পৃথক করে তাদেরকে মারমুখী আচরনে ধাবিত করছে। আমরা এ সব গভীরভাবে মুল্যায়ন করছি। আমরা গরীব মানুষগুলো এ স্কুলে ছেলে মেয়ে পড়তে দিয়েছি। বড় মানুষের ছেলে মেয়েরা বাহিরে পড়ে। তবে আমাদের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যত নিয়ে কাউকে শঠামি ও খেলতে দেব না। জাতির জনকের ছবি অদৃশ্য করতে ছবির উপর সাদা কাগজ লাগিয়ে দেয়। এ সব নাকি শিরীক। জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উড্ডয়ন সেটি নাকিও শিরীক। এ সব আমাদের অস্থিত্ব ও জাতীয় স্বত্তার পরিপন্থী। লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আমার স্কুলের ছেলে মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী, ভদ্র, ন¤্র ও সহনশীল। এসব প্রশংসনীয় ও উদীয়মান শিক্ষার্থীদের নিয়ে খেলানো মুঠেই বরদাশত নয়। নিয়োগ অবৈধ হয়েছে। ঘুষ দিয়ে চাকরী পায়। অডিটে এ সব লোকাতে দু’লক্ষ স্কুল ফান্ড থেকে ঘুষ দেয় এ প্রধান শিক্ষক। স্কুল ড্রেস দেয়নি শিক্ষার্থীদের। এরপরও টাকা মেরে দিতে এক দর্জির কাছ থেকে ভাউসার নেয়। এ ভাবে লুটপাটে মনস্থির করে তিনি। আমরা অভিযোগ দেয়ার চুড়ান্ত ক্ষনে আছি। মিটিং হয়েছে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে লটব। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রিয়াজুল করিম চৌধুরী জানায়, আমরা হতভম্ব হয়েছি। আসলে প্রধান শিক্ষক কি করতে চাই। তার কি শুভবুদ্ধি ও বিবেক লোপ পেয়েছে। আমার বাপ দাদারা এ স্কুল প্রতিষ্টিত করে। এখন আমরা গোলাম হয়েছি। শিক্ষার পরিবেশের জন্য আমাদের এ পথ চলা। হেড মাস্টার চায় এ প্রতিষ্টানটিকে লুটেপুটে খেয়ে ধ্বংস করতে। আজকে স্কুলের অধপতন বিরাজ করছে। এ সবের দায় নিতে হবে তাকে। তিনি নৈতিক ও আদর্শের দিক থেকে একজন অক্ষম ও ব্যর্থ ব্যক্তি। ঘুষ দিয়ে চাকরী নিয়েছি। পড়ালেখা কি হচ্ছে সে দিকে তার দৃষ্টি নেই। শুধু গ্রুপিং আর দ্বন্ধের দিকে তার দৃষ্টি। আমাদের ছেলে মেয়েদের উন্নতির জন্য আমাদের প্রতিবাদ ও সংগ্রাম চলতে থাকবে। প্রধান শিক্ষক বলাবলি করছে তার নাকি নিরাপত্তা নেই। আসলে তিনি যে বিপুল অর্থ প্রতিষ্টান থেকে আত্মসাৎ করেছেন এ সবের পরিসংখ্যান ও হিসাব হলে তিনি অবশ্যই আইনের কাছে জবাবদিহীতায় পড়বেন। সেটি তার হুমকি অশনি সংকেত হতে পারে।