বিদেশ ডেস্ক:

কার্টিসের সাম্প্রতিক সফরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে রোহিঙ্গা সংকটে এই যৌথ সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। লিসা কার্টিস যুক্তরাষ্ট্রের ভারত ও ভারত মহাসাগর বসন্ত সাঙ্গেরার দায়িত্বেও রয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ঢাকা, দিল্লি, কাবুল ও ইসলামাবাদ সফর করেন। বাংলাদেশ সফরে তিনি কুতুপালং-বালুখালি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। বর্তমানে এককভাবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির এটি। এখানে অবস্থান করছেন প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ইতোমধ্যে ‘জাতিগত নির্মূলের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ আখ্যা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলে আখ্যায়িত করেছে। কিন্তু মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানকে সমর্থন জানিয়ে আসছে। সেনাবাহিনীর অভিযানের কোনও সমালোচনা করা হয়নি ভারতের পক্ষ থেকে। তবে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ সহযোগিতা পাঠিয়েছে দেশটি।

সিনিয়র ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর ক্ষেত্রে আমরা ভারতের সঙ্গে কাজ করার উপায় খুঁজছি। একই সঙ্গে তাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে নিতে বার্মার (মিয়ানমার) উপর চাপ প্রয়োগের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছি।’ মার্কিন এই কর্মকর্তা ভারতকে ‘সমমনা অংশীদার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

জাতিসংঘের ইন্টার-সেক্টর কোঅর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিচালনা করছে। সম্প্রতি সংস্থাটির পক্ষ থেকে পরবর্তী বছরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য ৯৫০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। তারা সতর্ক করে জানিয়েছে, এপ্রিল থেকে জুন বর্ষা ও ঘূর্ণিঝড়ের মওসুমে রোহিঙ্গা শিবিরের আশ্রয় কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যহত হতে পারে। আইএসসিজি জানিয়েছে,প্রতিদিন ১৬ মিলিয়ন লিটার নিরাপদ খাবার পানি, ১২ হাজার ২০০ মেট্রিক টন খাবার, ২০০টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৫০ হাজার টয়লেট ও ৫ হাজার ক্লাসরুম নির্মাণ জরুরি।

১ থেকে ৪ মার্চ বাংলাদেশ সরকার ও আইএসসিজি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রতিনিধি দল ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ৫ মার্চ গোখলের সঙ্গে বৈঠক করেন  কার্টিস। বৈঠকের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি। পরে গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে গোখলের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে বাংলাদেশকে সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।

.

রোহিঙ্গা শিবিরভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে দ্য হিন্দু’র খবরে বলা হয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব এপ্রিল মাসে ঢাকা সফর করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া আগামী কয়েক মাসে একাধিক ভারতীয় মন্ত্রীও বাংলাদেশ সফর করবেন। এসব সফরে যৌথভাবে সহযোগিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

ভারতীয় কর্মকর্তা বাংলাদেশকে ত্রাণ সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে মার্কিন প্রস্তাব নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের বিষয়ে যৌথভাবে কাজ করার বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।

দ্য হিন্দু’র খবরে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশকে যৌথভাবে সহযোগিতার জন্য ভারতকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে চীনের মধ্যস্ততায় গত বছর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির মোকাবিলার পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই প্রত্যাবাসন চুক্তি এখনও বাস্তবায়ন শুরু হয়নি।

এর আগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিষয়টির সমাধানে ভারত ও সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি বলেন, ‘এই সংকটে আমি চীনের অসহযোগিতামূলক আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশিদের হতাশার কথা শুনেছি। চীনের আচরণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের উদার মানবিক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে তারা অবশ্যই বৈপরিত্য দেখতে পাচ্ছে।’

ওই কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই যৌথ স্বার্থ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে চীনের দিক থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। নির্দিষ্ট এই ইস্যুতে চীনের আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত।