সিবিএন ডেস্ক
অসহায় মানুষের কাছে ত্রাণ সরবরাহকারী সংস্থাগুলো পৌঁছাতে পারে না এমন দেশের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে মিয়ানমার। জেনেভাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা এসিএপিএস বলেছে, বিভিন্ন কারণে ত্রাণকর্মীদের প্রবেশাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে এমন দেশগুলোর তালিকায় সবচেয়ে খারাপ দেশ মিয়ানমার। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর প্রকাশ করেছে।

ত্রাণকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও জনগণের কাছে তাদের পৌঁছাতে বাধা দেওয়াসহ ৯টি বিষয় বিবেচনা করে ৩৭টি দেশের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই তালিকা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। মিয়ানমারে গত ৬ মাসে এসব সূচকের ব্যাপক অবনতি হয়েছে।

এসিএপিএস সংস্থার পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমানে ত্রাণকর্মীদের প্রবেশাধিকার সবচেয়ে কমে গেছে। আর রোহিঙ্গাদের জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে পৌঁছানো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে’।

এসিএপিএস আরও বলেছে, মিয়ানমার ছাড়াও ক্যামেরুন, ইথিওপিয়া, লিবিয়া, মালি, পাকিস্তান ও তুরস্কে ত্রাণকর্মীদের প্রবেশাধিকারের অবনতি হয়েছে।

এদিকে, মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর (আইএনজিও) কার্যক্রমের ওপর কঠোর নজরদারির সুযোগ রেখে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে মিয়ানমার। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে জাতিসংঘসহ অন্য আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রমের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মিয়ানমারে প্রস্তাবিত একটি আইনের খসড়া হাতে পাওয়ার দাবি করে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, আইন প্রণয়ন করে আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর কার্যক্রমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাইছে মিয়ানমার। আইনের খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা এসব সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে। এসব উন্নয়ন সংস্থার কার্যক্রম বন্ধে সরকারের এখতিয়ার সীমিত করারও কোনও সুযোগ নেই বললেই চলে। সে কারণে কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা আশঙ্কা করছে, মিয়ানমারে তাদের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে আইনটি ব্যবহার করা হতে পারে।

মিয়ানমারে কার্যক্রম পরিচালনারত কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার জোট (আইএনজিও ফোরাম) থেকে ফেব্রুয়ারিতে একটি পর্যালোচনা দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ‘আইনটি প্রণয়নের পেছনে যে উদ্দেশ্যের কথা বলা হয়েছে তার মধ্য দিয়ে সরকার তাদের বিরুদ্ধে যায় এমন কর্মকাণ্ডগুলো দমন করতে এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষার প্রচেষ্টাকে খর্ব করতে পারবে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি এবং কূটনীতিকরা পার্লামেন্টারি কমিটির সদস্যদের সঙ্গে লবিং করার চেষ্টা করছে যেন তারা আইনের খসড়াটি পর্যালোচনা করে সেখানে শব্দ পরিবর্তন কিংবা প্রত্যাহার করে।

মিয়ানমারে জাতিসংঘের ত্রাণ কার্যক্রম বিষয়ক সমন্বয় দফতরের (ওসিএইচএ) মুখপাত্র পিয়েরি পিরোন বলেন, মিয়ানমার সরকার কিছু সংখ্যক ত্রাণকর্মীকে রাখাইনে প্রবেশ করতে দিলেও তা ‘খুবই সীমিত সময়ের জন্য ও তাদের সঙ্গে অপ্রত্যাশিত আচরণ করা হচ্ছে’।

রয়টার্সকে পাঠানো এক ই-মেইলে পিয়েরি পিরোন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে রাখাইনের মংডু জেলায় কাজ করা মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে এখনও পৃথিবীর সবচেয়ে নিপিড়নের শিকার জাতিগোষ্ঠীর (রোহিঙ্গা) জন্য জীবন বাঁচানোর কোনও উদ্যোগ নিতে দেওয়া হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য মিয়ানমারের কোনও মুখপাত্র রাজি হননি।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনাকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন ইতোমধ্যে ‘জাতিগত নির্মূলের পাঠ্যপুস্তকীয় দৃষ্টান্ত’ আখ্যা দিয়েছে। মহাসচিব প্রশ্ন তুলেছেন, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ দেশ ছাড়তে বাধ্য হলে তাকে ‘জাতিগত নিধনযজ্ঞ’ ছাড়া আর কী নামে ডাকা হবে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে রোহিঙ্গা তাড়ানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও এনেছে জাতিসংঘ। তবে কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সেখানে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে না তারা। এ বছরের জানুয়ারিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর অভিযোগ করে, মিয়ানমারে এখনও ত্রাণ সংস্থা, মিডিয়া ও অন্য স্বাধীন ধারার পর্যবেক্ষকদের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা আছে।