তোফায়েল আহমদ :

কি বলেছি আর কি ব্যাখ্যা বাজারে দেওয়া হচ্ছে-সেটা আমাকেও ভাবিয়ে তুলেছে। বলেছিলাম সরকারি দল তথা মহাজোট সরকারকে সতর্ক হবার জন্য। বলেছি, যে পরিস্থিতি কক্সবাজারে বিরাজমান এমন অবস্থায় সরকারি দল বেকায়দায় পড়ার শংকা রয়েছে। এরকম বেকায়দায় পড়ার আগেই সতর্ক হতে আমি পরামর্শ দিয়েছি মাত্র। অনুরোধ রেখেছিলাম, সরকারের মন্ত্রীসভারই একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীকে। তিনি তথ্যমন্ত্রী-অত্যন্ত মেধাবী বাম রাজনীতিক জনাব হাসানুল হক ইনু। তাঁর নিকটই ছিল আমার আবেদন স্বরুপ বক্তব্যটি।

গত ১৬ই মার্চ কক্সবাজারের হিলডাউন সার্কিট হাউজে তথ্যমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্যদের একান্ত বৈঠকে আমি এসব আবেদন মূলক বক্তব্য রেখেছিলাম। আমি দীর্ঘদিন ধরে এ জেলার তৃণমূল পর্যায়ে একজন সংবাদকর্মী হিসাবে কাজ করে আসছি। আমি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ লালন করি হ্রদয়ে-এটার বিষয়ে কোন আপোষ নেই। জাতির জনকের আদর্শে লালিত দল আওয়ামী লীগের চলমান উন্নয়নের রাজনীতি-তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পূণরায় সরকার গঠন করতে পারলেই দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।

এ কথাটি বিশ্বাস করি বলেই জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার সরকারের মন্ত্রী সভার একজন বিশ্বস্ত সদস্যের নিকট কক্সবাজার জেলার আগামী নির্বাচন নিয়ে সতর্ক হবার পরামর্শ দিয়েছি। এমন বিশ্বাসেই তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর নিকট এমন কথাটি বলেছি যে-যাতে বর্তমান মহাজোট সরকারের কাছে পূণরায় সরকার গঠনের জন্য একটি জেলার তৃণমূলের সহায়ক তথ্য পৌঁছানো সহজতর হয়।

আমি কক্সবাজার জেলার ৪ টি আসনের আগামী দিনের ভোটের রাজনীতির বিষয়ে সতর্কতার আলাপ সরকারের বিরুদ্ধে রাজনীতি করেন এমন কোন ব্যক্তি-বিশেষের নিকট করিনি। আলাপ করেছি সরকারের একটি ঘনিষ্টজনের সাথে। আমি মনে প্রাণে চেয়েছি তৃণমুলের সঠিক বার্তাটি সরকারেরই নীতি নির্ধারকদের কাছে পৌঁছুক। আর আমি যদি কিনা সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলার ইচ্ছা পোষণ করতাম তাহলে নিশ্চয়ই সরকারের এমন একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিকট এমন পরামর্শমূলক কথা বলতাম না নিশ্চয়ই। তথ্যমন্ত্রীকে বলার আরো একটি কারণ হচ্ছে তিনি সংবাদকর্মীদেরই একজন আপনজন এবং অভিভাবক। তদুপরি তিনিও সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার-অর্থাৎ আওয়ামী লীগ সরকারে থাকলেই তিনিও থাকেন।

মূলত কক্সবাজারে কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে পেশাগত বিরোধকে পুঁজি করে আমরা পেশাজীবিদের কোন কোন সহকর্মী তথ্য মন্ত্রীর কাছে আমার ইতিবাচক বক্তব্যটিকে নেতিবাচক করে তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছে মাত্র। যা গতকাল সোমবারের স্থানীয় কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যারা এরকম করার চেষ্টা করেছেন তারা কি জানেন-বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে আমার ভয়াল দুর্দিনের কথাটি। তারা কি জানেন-২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামী হয়ে আমাকে বহুদিন ঘর পালাতে হয়েছে।

রাজধানী ঢাকার মতিঝিল থানায় দায়ের করা ওই মামলাটিতে আমার সাথে অন্যতম আসামী ছিলেন আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র প্রসিকিউটর এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত। আমি তখন দৈনিক জনকন্ঠে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলের অন্যায়-অবিচার ও সংখ্যালঘু নির্যাতন সহ জঙ্গিবাদ উত্থানের সংবাদ সরবরাহ করেই শিকার হয়েছিলাম এমন রাষ্ট্রীয় প্রতিহিংসার শিকার। তথাপি আমি আমার নীতিবোধ থেকে এক চুল পরিমাণও সরে যাইনি। আমার দৃঢ় চেতনাবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারন একমাত্র পেশাগত প্রতিহিংসা।