নিজস্ব প্রতিবেদক:
মানবিক ও চিকিৎসা সেবাখাতে এই অঞ্চলের অতি পরিচিত নাম ‘হোপ ফাউন্ডেশন’ ও ‘হোপ হসপিটাল’। দীর্ঘ ১৮ বছরের ধরে এই দু’প্রতিষ্ঠান এই অঞ্চলের সাধারণ লোকজনকে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিশেষত মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যে এক মাইলফলক সৃষ্টি করেছে তারা। এই সেবা সরকারের উন্নয়নকে তরান্বিত করার পাশাপাশি বিশ্ব পরিমন্ডলেও সুনাম কুড়িয়েছে।
এতে দাতা সংস্থাগুলো হোপ ফাউন্ডেশনের নিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট। তাই তারা হোপ ফাউন্ডেশনের সাথে কাজ করতে দাতা সংস্থাগুলোর আগ্রহ আরো বাড়ছে। তবে এই সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি গোষ্ঠী হোপ ফাউন্ডেশন ও হোপ হসপিটালের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে।
দাপ্তরিক সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের কৃতি সন্তান আমেরিকা প্রবাসী চিকিৎসক ইফতিখার মাহমুদ মিনার ‘মা ও শিশু হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কক্সবাজারে হোপ ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরু করেন। সেই থেকে ‘মা ও শিশু হাসপাতাল’র মাধ্যমে এই অঞ্চলের সাধারণ লোকজনকে স্বল্প ও বিনামূল্যে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে। বিশেষ করে মা ও শিশুর চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবদান রাখে। পাশাপাশি হোপ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে নানা সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে। বর্তমানে রামুর চেইন্দায় স্থায়ী পরিমন্ডলে হোপ হসপিটাল ও হোপ ফাউন্ডেশন’র কার্যক্রম চলছে।
তথ্য মতে, সাধারণ মানুষের সেবার মধ্যে হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে হোপ ফাউন্ডেশন। শুধু চেইন্দায় মূল হাসপাতালের মধ্যেই তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম থেমে নেই। জেলার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র এলাকায় আরো পাঁচটি সাব-সেন্টার রয়েছে।

হোপ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী রাকিবুল হক জানান, গর্ভধারণ থেকে শুরু করে সন্তান হওয়ার পর পর্যন্ত মহিলাদের জন্য পুরো চিকিৎসাসেবা রয়েছে। সেবার জায়গায় থেকে চিন্তা করে গর্ভবতীদের জন্য একটি কোর্চ রয়েছে। এই কোর্চের মাধ্যমে একজন গর্ভবতীকে পর্যায়ক্রমে সব সেবা প্রদান করা হয়। এই সেবা প্রাপ্তিতে গর্ভবতীদের আর্থিক ও শারীরিক সুবিধার জন্য ‘গর্ভবতী পরিচর্যা কার্ড (এসএমপি-৩) একটি কার্ড দেয়া হয়। মাত্র ৭০০ টাকা দিয়ে এই কার্ডটি ক্রয় করতে হয়। এই ৭০০ টাকা খরচ করে একজন মহিলা গর্ভধারণ থেকে শুরু করে প্রসব পরবর্তী পুরো চিকিৎসা পেয়ে থাকেন। একইভাবে সকল রোগীর ক্ষেত্রে মাত্র ১০০ টাকা ফি নেয়া হয়। তবে গরীব রোগী হলে বিনা ফিতে দেখা হয়। গরীব রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধও দেয়া হয়।
তিনি আরো জানান, হোপ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বর্তমানে ১৮টি প্রজেক্ট চলছে। প্রজেক্টগুলো অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। এরমধ্যে মিডওয়াইফ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালু রয়েছে। সেখান থেকে বেশ কয়েকজন মিডওয়াইফ ইতিমধ্যে বের হয়েছে। আগামী জুলাইয়ে চালু হচ্ছে একটি আধুনিক নার্সিং ইনস্টিটিউট। সেখানে কম খরচে শতভাগ স্থানীয়দের ভর্তি করানো হবে। বর্তমানে নির্মাণকাজ চলা ৬তলা ভবনের কাজ চলতি বছরের শেষের দিকে সম্পন্ন হবে। এটি নির্মিত হলে সেখানে স্থানান্তর হলে হোপ হসপিটাল হবে একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাসপাতাল। যেখানে ফিস্টুলা রোগের বিনামূল্যে চিকিৎসা থাকবে। আমেরিকার অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসকেরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সেখানে কাজ করবেন। প্রকল্পগুলো অত্যন্ত স্বচ্ছতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কার্যক্রম অডিট করেন উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা আসার শুরু থেকে ক্যাম্পে জরুরীসহ নানা ধরণের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে হোপ ফাউন্ডেশন। পাঁচটি মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন করে সন্তান ডেলিভারিসহ সব ধরণের রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে উখিয়ার বালুখালীর মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের স্থাপন করা হবে একটি ৪০ শয্যার একটি মাঠ হাসপাতাল। সেখানে ২০টি বেড নারী এবং ২০ বেড শিশু ও পুরুষদের নির্ধারিত থাকবে। কিছুদিনের মধ্যে আরব আমিরাত সরকার থেকে প্রাপ্ত একটি বিশেষায়িত মেডিকেল ভ্যান আসবে। এই মেডিকেল ভ্যানটি হবে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রথম মেডিকেল ভ্যান। এটি দিয়ে দুর্গম এলাকায় অপারেশন, পর্যবেক্ষণ ও জরুরী চিকিৎসা সেবা দেয়া হবে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বর্তমান সময়ের আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বড় সংকট রোহিঙ্গা ইস্যু। এই ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে নিয়মিত সাধারণ মানুষকে নানাভাবে সেবা দিয়ে হোপ ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। কাজে আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতার কারণে দাতা সংস্থাগুলো হোপ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের আগ্রহ বাড়িয়েছে। এই কারণে প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কিছু সংস্থা ও লোকজন হোফ ফাউন্ডেশন ও হোপ হসপিটালের নামে কূৎসা ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। এদের সাথে যোগ দিয়েছে হোপের কাজ করা সাবেক কিছু লোকজন। তাদের সাথে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান কিছু লোকজনও জড়িত রয়েছে। কিন্তু বর্তমান কান্ট্রি ডিরেক্টর আসার পর তারা অনৈতিক সুবিধা করতে না পারায় ক্ষুব্ধ।
জানা গেছে, হোপ ফাউন্ডেশন ও হোপ হসপিটালে কর্মরত ৯৮ ভাগ স্থানীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী। মাত্র ২ভাগ বাইরের। তবে স্থানীয় যোগ্য লোক পাওয়া না যাওয়ায় তাদেরকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরা সবাই দেশ ও বিদেশের নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করা। তাদেরকে কোনোভাবেই স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়নি। যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের নিয়োগ করেছে উচ্চ পর্যায়ের নিয়োগ কমিটি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে হোপ ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি ডাইরেক্টর কমান্ডার (অব.) এস.এম ফেরদৌসুজ্জামান পিএসসি বলেন, ‘কক্সবাজারের এসব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে হোপ ফাউন্ডেশনের মতো কেউ এত স্বচ্ছ হিসাব ও সুন্দর কেউ দিতে পারছে না। এক্ষেত্রে আমরা ব্যতিক্রম। এতে ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি মহল আমাদের প্রতিষ্ঠানের মিথ্যা অপবাদ ও ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের জায়গা পরিস্কার। এটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি।