আওয়ামী লীগ নেত্রী কাবেরীর মুখোমুখি কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রলীগ

প্রকাশ: ১৮ মার্চ, ২০১৮ ১২:৩০ , আপডেট: ১৮ মার্চ, ২০১৮ ১২:৩৩

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জাকের হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কক্সবাজার সরকারী কলেজের জমিতে রাস্তা নির্মাণ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে কলেজ ছাত্রলীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী। এমনকি নিজ দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের লাঞ্ছিত হয়েছেন কাবেরী। এ নিয়ে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ এসেছে।
গত কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার সরকারী কলেজের জমিতে রাতের আঁধারে ডাম্পার নিয়ে মাটি ভরাট করে একটি রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে কলেজ ছাত্রলীগ নেতারা জড়িত বলে অভিযোগ ওঠে। গত কয়েক দিন ধরে এ বিষয়ে স্থানীয় ও জাতীয় অনেক পত্রিকায় সংবাদ হয়। যদিওবা এ বিষয়ে কলেজ প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট নয়।
তবে, প্রথম দিন থেকে ছাত্রলীগ দাবী করে আসছিল তারা জায়গা দখল করেনি। এমপি কমলের দেয়া ১০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মাত্র। সে জন্য তারা দিন রাত কাজ করছে। অন্যদিকে ১৭ মার্চ সকালে কক্সবাজার সরকারি কলেজে আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতাদের ‘সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, জমি দখলকারী’ মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েন কাবেরী। এক পর্যায়ে তাকে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ নেতারা।
এরপর শনিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন নাজনীন সরওয়ার কাবেরি।
তিনি বলেন, আমি কলেজের শিক্ষকদের দাওয়াতে জাতির পিতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক আমাকে আলোচনায় অংশ নিতে আহ্বান জানানোর সঙ্গে সঙ্গে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জাকের হোসেন এবং সাধারণ ক্যাম্পাসে সাখাওয়াত হোসেনের নেতৃত্বে হৈ চৈ শুরু করে অন্যরা। তারা চেয়ার নিয়ে আমাকে মারতে উদ্যত হয়। তাদের আচরণটা এমন ছিল, যেন কোনো নিষিদ্ধ ব্যক্তি অনুষ্ঠানে এসেছে অথবা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতারা তাকে পেয়ে জিম্মি করছে!
এ সময় মাইক হাতে নিয়ে আমি তাদের শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালে উল্টো আমাকে হত্যার হুমকি দেয় তারা। এমনকি তাদের না জানিয়ে কেন ক্যাম্পাসে গিয়েছি তার কৈফিয়তও চান তারা। অতীতে এ ধরনের কোনো কার্মকান্ড আমরা কলেজে দেখিনি। ছাত্রলীগের নামে সন্ত্রাসী লালন করা হচ্ছে ক্যাম্পাসে।
তিনি আরও বলেন, গত কয়েক দিন আগে কলেজের বিরোধপূর্ণ একটি জমিতে ছাত্রলীগ রাস্তা নির্মাণ করছে বলে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন আসে। খবর নিয়ে দেখি, শেখ রাসেলের নাম ব্যবহার করে বিরোধপূর্ণ জমিতে রাস্তা করা হচ্ছিল। এনিয়ে আমার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমার উপর এ হামলা চালিয়েছে।
একই দিন সন্ধ্যায় একই স্থানে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে কলেজ ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে
কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি জাকের হোসেন বলেন, শনিবার সকালে কলেজ আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছিলো যথাযথভাবে। অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময় বক্তব্যরত কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দিদারুল আলমের কাছ থেকে স্পীকার কেড়ে নিয়ে উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও জমি দখলবাজসহ নানা অপবাদ দিতে থাকে। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকেও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কেন ছাত্রলীগের বদনাম করলেন? তা তদন্ত করার দাবী জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, কাবেরি আপাকে বিনা আমন্ত্রণে হঠাৎ অনুষ্ঠানে পৌঁছে কলেজ ‘ছাত্রলীগ জমি দখল করছে’ বক্তব্য দেয়া শুরু করে। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে কলেজ প্রশাসন কাবেরি আপাকে চলে যেতে বাধ্য করেন। আপাকে আমরা লাঞ্ছিত করিনি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, কলেজের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন অনুষ্ঠান পালনকালে কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি রাশেদুল করিমের ছোট ভাই আশমত উল্লাহসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে অনুষ্ঠানে ঢুকেন আওয়ামী লীগ নেত্রী। ওসময় বক্তব্যরত শিক্ষকের কাছ থেকে স্পীকার কেড়ে নিয়ে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ কথা শুরু করেন।
তাদের দাবী, যখন ছাত্রলীগ কলেজকে শিবিরমুক্ত করেছে তখন নাজনীন সরওয়ার কাবেরি ছাত্রদল ও শিবির ক্যাড়ারদের সাথে আঁতাত করে অনুষ্ঠানে গেছেন। তিনি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে নেমেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ছাত্র লীগ নেতা জসিম উদ্দিন, উৎফল বড়ুয়া, শরীফ হোসাইন সিকদার, সাব্বিরুল হক জুলাইব, নরুল আবরার শাকিব, সালাহ উদ্দিন জাশেদ, মো: আনাস ও মো: রায়হান।
এদিকে এ ঘটনায় বিব্রতকর পরিস্থিতির বিষয়টি উল্লেখ করে শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক জানান, কাবেরীকে কোনো প্রকার আমন্ত্রণ না করা সত্ত্বেও অনুষ্ঠানের মাঝামাঝি সময়ে স্পীকার নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে শিক্ষক ও ছাত্ররা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।