সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও :

কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী-ইসলামপুর উপকূল রক্ষায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। উপকূল তীর নিয়ন্ত্রণ বাঁধ একাধিক জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় এসব ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে দীর্ঘদিন পানিবন্দি জীবন ধারণ করতে হয়। বর্ষা মৌসুমে এসব মানুষকে পানিবন্দি দশা থেকে বাঁচানোর বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা বর্তমান সময়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, সাগরের জোয়ারের পানি বন্ধিদশা থেকে বাঁচার রক্ষা কবজ চৌফলদন্ডি হয়ে পোকখালী-গোমাতলী বাঁধটি বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গনে বিলিন হওয়ায় বর্তমানে মহেষখালী পূর্বতীরে কোন প্রকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চিহ্ন নেই। ফলে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই মহেষখালী সাগরের লোনা পানির নিচে তলিয়ে যায় পোকখালী ইউনিয়নের পূর্ব গোমাতলী, পশ্চিম গোমাতলী, সিদ্দিক বাপের পাড়া, বাঁশখাইল্ল্যা পাড়া, আজিম পাড়া, গাইট্যাখালী, আছিন্ন্যপাড়া, বারডইল্ল্যাপাড়াসহ রাজঘাট পাড়া সমুহের নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার একর লবণ ও মৎস্য জমি। পূর্ণিমা জোয়ারে সাগরের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতেই ওই ৯টি পাড়ার ২০ হাজার বাসিন্দা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ওই সময় পানিবন্দিদের ঘরে ঘরে বিশুদ্ধ পানি ও রান্না করা খাদ্যের তীব্র সংকট চলে এবং গো-খাদ্যেরও তীব্র্র অভাব দেখা দেয়। এছাড়াও কবলিত এলাকায় ডায়রিয়াসহ পানি বাহিত নানা রোগের পাদুর্ভাব ঘটে। অপরদিকে জোয়ারের পানির সাথে সাগরের পলি মাটি উঠে এসব এলাকার শতশত একর জমি অনাবাদী হয়ে যায়। এছাড়াও পানির তীব্র স্রোতের কারণে ৯টি গ্রামের অধিকাংশ পাকা ও কাচা সড়ক ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। লন্ডভন্ড হয়ে যায় অসংখ্য বাড়িঘর । গ্রামের পশ্চিম-পূর্ব তীরে উঁচু বাঁধ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ এসব রাস্তঘাট ও লন্ডভন্ড বাড়িঘর নিয়ে উপকূলের মানুষের দুর্ভোগ যেন লেগেই থাকে।

পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানায়, ইউনিয়নের বাঁশখাইল্ল্যা পাড়া থেকে রাজঘাট হয়ে পূর্ব গোমাতলী পর্যন্ত এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে প্রতিবছর জোয়ারের মৌসুমে বাঁধাহীন ভাবে লবণ পানি প্রবেশ করে বিস্তীর্ণ জনপদ ডুবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানায়, ইউনিয়নের পশ্চিম খাঁন ঘোনা থেকে স্লুইচ গেইট পর্যন্ত উঁচু ও প্রশস্ত নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতে পারলে ইউনিয়নের ১০ হাজার বাসিন্দা দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পাবে।

তিনি আরো বলেন, পাউবো বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। অন্যথায় বিগত বছরগুলোর মতো বর্ষা মৌসুমেও পশ্চিম খাঁন ঘোনা, উত্তর খাঁন ঘোনার প্রায় ১০ হাজার মানুষকে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

এব্যাপারে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহ বলেন, পোকখালীর গোমাতলী ও ইসলামপুরবাসীকে পানিবন্ধি দশা থেকে বাচাঁতে বেড়িবাধঁ নির্মাণ স্থায়ীভাবে খুবই গুরুত্বপূণ। সরকারের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে বেড়িবাধঁ সম্পূর্ণ করা প্রয়োজন। তবে বাধঁ নির্মাণে পর্যাপ্ত অর্থের প্রয়োজনও রয়েছে।

এব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, পূর্ণিমা জোয়ারের মৌসুমে ইসলামপুর উপকূলবাসীকে পানিবন্দি দশা থেকে রক্ষার জন্য একটি উঁচু ও প্রশস্থ নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই ইউনিয়নের পশ্চিম খাঁন ঘোনা থেকে স্লুইচ গেইট পর্যন্ত এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে সরকারী অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে পোকখালীর গোমাতলী নিয়ন্ত্রণে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।

এব্যাপারে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সবিবুর রহমান বলেন, পোকখালীর গোমাতলী ও ইসলামপুরবাসীকে প্রতিবছর জোয়ারের পানি বন্দি দশা থেকে রক্ষার্থে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকায় নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চলছে। তবে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে দীর্ঘ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।

১৬ মার্চ ২০১৮ ইং