২০১৮ সালের ৯’ই মার্চ শুক্রবার বঙ্গবন্ধুর ৭’ই মার্চ,১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে রাজধানীতে এক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ১৯৭১’ সাল পূর্ব স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস পরবর্তিতে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স খ্যাত সিরাজুল আলম খান সবসময় ‘ষডযন্ত্রের সাথে ছিলেন’বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন।ঐ দিন সিরাজুল আলম খানের কথা শুনলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ ঝরত বলে মনে করেন।বঙ্গবন্ধু ভাষন দিতে মন্চে উঠার সময় সিরাজুল আলম খান ও তার”সাঙ্গপাঙ্গরা”বঙ্গবন্ধুকে বলেন “লিডার আজকেই স্বাধীনতা ঘোষনা দিতে হবে।”সভাশেষে বাড়ীতে গিয়েও তিনি দেখেন সিরাজুল আলম খান সেখানে উপস্থিত।সেখানেও তিনি নানা কথা বলছিলেন বঙ্গবন্ধুকে।এছাড়াও সাতই মার্চকে কেন্দ্র করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু ও বেগম ফজিলতুন্নেছা মুজিবের কথোপকথনের কথাও বলেন।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র বক্তব্যকে কেন্দ্র করে পত্রপত্রিকা বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা সমালোচনার অন্ত নেই।
স্বাধীনতা লাভের পর নবগঠিত জাসদের গুরু,রহস্যপুরুষ(কাপালিকও বলে কেউ কেউ)তবে বিশেষ করে ‘দাদা’ খ্যাত নিভৃতচারী এই অশীতিপর সিরাজুল আলম খানকে কেন্দ্র করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র বক্তব্য নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে সমগ্র দেশের জনমনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন সম্পর্কে,বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মাঝে নতুন করে ইতিহাসকে জানার জন্য প্রবল আগ্রহের বিষয়টি দেখা যায়।বর্তমান জমানার সন্তান ও ঐতিহাসিকদের জন্যও সমুদ্র মন্থন করে অমৃত আহরণ করার মতো স্বাধীনতার সত্য ও অবিকৃত ইতিহাসকে তুলে আনার মহাপ্রয়াস ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট আভাষ পরিলক্ষন করার মতো।
তাই সবকিছু বিচার বিবেচনা করে মহাকালের কাছে আগামী জমানার সন্তানদের মনে যে প্রশ্নের উদয় হতে পারে কিংবা গবেষক ও ঐতিহাসিকরা যে প্রশ্নের
মূখোমূখি হবেন-তাতে বঙ্গবন্ধু অবশ্যই মহানায়ক ও প্রকাশ্য নেতা হিসেবে বিবেচিত হবেন।

তবে সিরাজুল আলম খান একজন ষডযন্ত্রকারী কিনা কিংবা অপ্রকাশ্য নেতা,পরিকল্পনাকারী বা রূপকার কিনা তা বেরিয়ে আসার অনেক লক্ষণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র বক্তব্যের পরপরই সোশ্যাল মিডিয়াতে ঝড়ের পূর্বাভাসের মত দেখা যাচ্ছে।

মহাকালের প্রশ্ন:
১৯৫২’সালের ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বাঙালী জাতীয়তাবাদের অভিযাত্রা শুরু হয়েছিলো কিনা!ভাষা আন্দোলনের পরে যুক্তফ্রন্ট্রের বিজয় ও পতনকে কেন্দ্র করে,সর্বোপরি আজাদ হিন্দ ফৌজের মাধ্যমে ভারতকে স্বাধীন করার জন্য নেতাজী সূভাষ বোসের চিন্তাচেতনার আলোকে,পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য আঙ্গুল কেটে রক্তশপথ গ্রহন করে,১৯৬২’সালে “স্বাধীন বাংলা নিউক্লিয়াস”গঠন করা হয়েছিলো কিনা!পরবর্তিতে তা বি এল এফ বা “স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ” নামে অভিহিত হয়েছিলো কিনা!আদৌ সিরাজুল আলম খানের কোন ভূমিকা সেখানে ছিলো কিনা!১৯৬২’সালে ছাত্র ইউনিয়ন অত্যন্ত অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিশালী সংগঠন ছিলো।

হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে সিরাজুল আলম খানের ভূমিকা ও তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়ে শক্তিশালী ছাত্র ইউনিয়নের বিপরীতে ছাত্রলীগকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন কি?পরবর্তিতে শেখ ফজলুল হক মনি রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহন করলে ছাত্রলীগের একক নেপথ্য শক্তি হিসাবে স্বীকৃত ছিলেন কি?অবশ্য ১৯৬৯’সালে শেখ ফজলুল হক মনি রাজনীতিতে ফিরে এলে তখনও ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে সিরাজুল আলম খানের আধিপত্য খর্ব হয়েছিলো কি? স্বায়ত্বশাসন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে দূ’টি গ্রুপের অস্ত্বিস্থ ছিলো কি?ছাত্রলীগের স্বায়ত্ত্বশাসনপন্থী ও স্বাধীনতাকামীদের শক্তির ভারসাম্যের যে তারতম্য দেখা যায়- তাতে ততদিনে সিরাজুল আলম খানের অবস্থান আকাশছোঁয়া ছিলো কি?বড় কথা ততদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভাষা আন্দোলনের মতো স্বাধীনতা আন্দোলনেরও সূতিকাগার হয়ে দাঁড়িয়েছিলো কি?

তথাকথিত পশ্চিম পাকিস্তানে ছয়দফা ঘোষনার পর শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় ফিরে এলে এম এ আজিজ ও তাজউদ্দিন আহমদকে বাদ দিলে অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতিক্রিয়া কি ছিলো?ছাত্রলীগ তখন কি ভূমিকা গ্রহন করেছিলো?সব বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে সেসময় ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ বিবৃতি প্রদান করে ছয়দফা’র প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন কিনা!তাতে সিরাজুল আলম খানের নেপথ্যে কোন ভূমিকা ছিলো কি?ঢাকাতে ছয়দফা ঘোষনা না করার পেছনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে উপেক্ষা করার কোন হেতু ছিলো কি?এম এ আজিজের নেতৃত্বে আইয়ূব খানের জমানার প্রভাবশালী স্পীকার ফজলুল কাদের চৌধূরী এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের অনেক নেতার রক্তচক্ষুকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে,সিরাজুল আলম খানের ঢাকা ও চট্টগ্রামের সাঙ্গপাঙ্গ’দের পরিকল্পনা ও শক্তি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদিঘী ময়দানে এম এ আজিজের সার্বিক তত্ত্বাবধানে কেন জনগনের মুজিবর’ ছয় দফা ঘোষনা করেছিলেন! সেই প্রশ্নের কোন জবাব আছে কি?এম এ আজিজ ও ছাত্রলীগ কি ছয়দফার মাঝে স্বাধীনতার ভ্রুণ আবিষ্কার করেছিলো?এম এ আজিজ’কে কখনো জাতীয়ভাবে হাইলাইট করা হয়নি কেনো?সেটা কি ১৯৭১’সালের মার্চের সামান্য আগে ইহকাল থেকে চিরবিদায়ের জন্য নাকি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনের আকাঙ্খায় তাড়িত হয়ে নির্বাচনে এম এ আজিজের বিরল ভূমিকার জন্য?প্রশ্নটি এখনো ইতিহাসে অমিমাংসিত।
অনেকের কাছে এম এ আজিজ ও তাজউদ্দিন আহমদের সাথে সিরাজুল আলম খানের সম্পর্কের গভীরতা কেমন ছিলো সেটাও একটা প্রশ্ন বৈকি!তবে স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে চট্টগ্রামের এম এ আজিজের সন্তান অধ্যাপক নূরউদ্দিন জাহেদ মন্জু’র জাসদে যোগদান এবং বিশ্বাসঘাতক খোন্দকার মোশতাক চক্র কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের যুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদকে জিন্দানখানায় নিয়ে যাওয়ার আগে তিনি সিরাজের খোঁজ করার বিষয়টি বিস্ময়কর কিনা-সেটাও বড় প্রশ্ন!

এগারো দফা পরিকল্পনা প্রণয়নে নিউক্লিয়াস কি আদৌ কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহন করেছিলো?ডাকসূ,ছাত্রলীগ,ছাত্র ইউনিয়নের (মেনন ও মতিয়া গ্রুপ)উভয় অংশ,এন এস এফে’র একটি অংশ,ছাত্র ফেডারেশনের দোলন গ্রুপের সম্মিলনের মধ্য দিয়ে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠনে সিরাজুল আলম খানের তখনকার সাঙ্গপাঙ্গরা নেপথ্যে কোন ভূমিকা আদৌ পালন করেছিলো কি?

সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা বাস্তবায়নে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে হাইলাইট করা ও পরবর্তিতে আন্দোলনের পরিকল্পনা ও ধারাবাহিকতায় শেখ মুজিবুর রহমানে’র মুক্তিকে এক দফায় পরিনত করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে শেখ মুজিবের মুক্তি এবং শেখ মুজিবকে অবিসম্বাদিত একক জাতীয় নেতা ও রাজনৈতিক কাল্ট হিসাবে পরিনত করার পেছনে সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের আদৌ কোন ভূমিকা ছিলো কি?সর্বোপরি আগরতলা মামলা থেকে মুক্তির পর শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদানে সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের মূল ভূমিকা আদৌ ছিলো কি?এককথায় উনসত্তরের গনঅভ্যূত্থান ও বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদানের পেছনে সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের মূল ভূমিকা ইতিহাসের কষ্টিপাথরে নতুন করে কোন সংযোজন বিয়োজনের প্রশ্ন’টি উত্থাপন হবে কি!

১৯৭০’সালে ও তারও পূর্বে ছাত্রদের সাথে সাধারণ মানুষের আত্মার সম্পর্কের কথা কেউ কি অস্বীকার করতে পারে?ছাত্রদের কথা তখন দৈববানী’র মতো দেশের সাধারণ মানুষ মনোযোগ দিয়ে শুনতো কিনা কিংবা তা দ্বিধা না করে মেনে নিতো কেনো? যদিও ছাত্র ও জনগনের সম্পর্ক এখন যাদুঘরেই দেখার বিষয়।

১৯৭০’সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভূমিধ্বস বিজয়ে সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের আদৌ কোন অবদান ছিলো কি?বি এল এফ নেতারা সারাদেশ চষে সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়টি গোপনে দেশের আনাচে কানাচে সর্বত্র পৌঁছিয়ে দিতে পেরেছিলেন কি?এটিও অনেক বড় প্রশ্ন!
তাছাড়াও তখন দেশের ৭ কোঠি সাধারণ জনগন আ স ম আবদুর রব,আবদুল কুদ্দুস মাখন,নূরে আলম সিদ্দিকী,শাজাহান সিরাজকে চার খলিফার অভিধায় অভিসিক্ত করেছিলো কি?জানতো কি?কেনো?তখন একমাত্র ‘বঙ্গবন্ধু’ ছাড়া চার খলিফা ও তোফায়েল আহমেদ,মমতাজ বেগমের জনসভায় লক্ষ লোকের সমাগমের কথা কারো মনে আছে কি?তোফায়েল আহমদ ও চার খলিফা’র নামের আড়ালে কেবলমাত্র ‘বঙ্গবন্ধু’ ছাড়া অন্যান্যদের নাম চাপা পড়ে যায়নি?নূরে আলম সিদ্দিকীকে নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে অনেকের অভিযোগের কথা শুনা যায়।মতপার্থক্য স্বত্ত্বেও স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য নূরে আলম সিদ্দীকির বাগ্নিতাকে ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার কথা সিরাজুল আলম খান বলেছিলেন কি?সাঙ্গপাঙ্গরা তা হাঁসিমূখে মেনে নিয়েছিলো কি? ১৯৭০’সালে আওয়ামী লীগের মহাবিজয়ের পেছনে তখনকার এসব আইকনিক নাম এখন শুনা যায় কি?সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা রাজনীতিতে কখনো শিষ্টাচার লংঘন করেছেন কি?

ইয়াহিয়া খাঁন কর্তৃক ১৯৭১’সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষদিনে গনপরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষনার সাথে সাথে আগ্নেয়গিরির দাবানলের মতো “বীর বাঙালী অস্ত্র ধর-বাংলাদেশ স্বাধীন করো” এ ধরণের বাঙালী জাতীয়তাবাদী বিভিন্ন শ্লোগান ও “জয় বাংলা”ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তুলেনি?ছাত্র শ্রমিক জনতার মিছিল পূর্বানী হোটেলের চতুর্দিকে অবস্থান নিয়েছিলো কি?কারা ছিলেন নেতৃত্বে?অত:পর ১’লা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চার খলিফা খ্যাত ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে “স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ” কি গঠন করেছিলো সিরাজুল আলম খানের সাঙ্গপাঙ্গরা?চার খলিফা ও লক্ষ জনতার উপস্হিতিতে নিউক্লিয়াসের পরিকল্পনায় নূরে আলম সিদ্দিকী’র সভাপতিত্বে ডাকসূ ভি পি আ স ম আবদুর রব কর্তৃক স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলনের বিষয়টি লক্ষ জনতা গগনবিধারী শ্লোগান ও করতালি দিয়ে অনুমোদনের স্বাক্ষী ছিলেন কি? সেখানে তখন সিরাজুল আলম খানের সাঙ্গপাঙ্গরা তথা ছোট বড় ছাত্র শ্রমিক নেতা ও কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন কি?৩’রা মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ আহুত ইশতেহার পাঠ দিবসে সিরাজুল আলম খানের সাঙ্গপাঙ্গরা ইশতেহার পাঠ করেছিলেন কি?অনির্ধারিতভাবে হঠাৎ বঙ্গবন্ধু সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন কি? কেনো? বঙ্গবন্ধুর উপস্হিতিতে ২য় বারের মতো ইশতেহার পাঠ করা হয়েছিলো কি? বঙ্গবন্ধু সেদিন নিজেই সিরাজুল আলম খানের সাঙ্গপাঙ্গদের সামনে ৭’ই মার্চের ভাষনের ঘোষনা দিয়েছিলেন কি?

২’রা মার্চে পতাকা উত্তোলিত হলে আওয়ামী লীগের এবং পূরো বাঙালী জাতির পক্ষে পাকিস্তানের ক্ষমতা গ্রহন কিংবা পেছন ফেরার আদৌ কোন অবকাশ ছিলো কি?ইশতেহারে সিরাজুল আলম খানের সাঙ্গপাঙ্গরা মানচিত্র,জাতীয় পতাকা,জাতীয় সঙ্গীত,স্বাধীনতার স্থপতি,সেনাপতি সহ যেসকল ঘোষনা পাঠ করা হয়েছিলো-বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে লক্ষ জনতার শ্লোগান ও করতালির মধ্য দিয়ে অনুমোদনের কারণ কি?স্বাধীনতা আন্দোলন জনযুদ্ধে রূপান্তর না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের হাড্ডি মাংস খূঁজে পাওয়া যেতো কি?

অত:পর ঐতিহাসিক ৭’ই মার্চের সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় মার্চের চার,পাঁচ,ছয় তারিখ রাত পর্য্যন্ত স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার খলিফা,বি এল এফ হাইকমান্ডের দাবীর প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড তৈরী করে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৭’ই মার্চের ভাষনের শেষে “এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম-এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”শব্দগুলো বলার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আদৌ সকলে উপনীত হয়েছিলেন কি?স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ,বি এল এফ হাইকমান্ড ও আওয়ামী লীগ হাইকমান্ডের গুরুত্ব সমগ্র জাতির নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতেন কি?বঙ্গবন্ধুর কাছে এঁদের গুরুত্ব আদৌ ছিলো কি?সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গ তথা বি এল এফ হাইকমান্ড ও চার খলিফার সাথে মহিয়সী বেগম ফজিলতুন্নেসা মুজিবের সম্পর্ক ও ঘনিষ্ঠতা সর্বোপরি তাঁদের সিদ্ধান্তের সাথে সবসময় ঐক্যমত্যের বিষয়টি তখন ও এখনো রাজনীতির সাথে সম্পর্কিত লোকমূখে প্রবাদের মতো কেনো?হঠাৎ করে আচানক পরিবারকে জড়িয়ে যাঁর যা অবদান তা না বলে স্বাধীনতার তথা ঐতিহাসিক ৭’ই মার্চের সকল কৃতিত্ব কেবলমাত্র মা ও বাবার বলে চালিয়ে দেয়ার বিষয়টি ‘বঙ্গবন্ধু’ ও মহিয়সী ‘বেগম মুজিব’কে জনমনে আদৌ গ্রহনযোগ্য বলে বিবেচিত করবে কিনা কিংবা তাতে উনাদের আকাশছোঁয়া জাতীয় ভাবমুর্তিকে দলীয় ও পারিবারিক গন্ডীতে আবদ্ধ করে,আসমান থেকে জমিনে নামানোর জন্য,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র চতুর্দিকে আদৌ কোন দেয়াল বা প্রাচীর তৈরী করা হয়েছে কি?জনগন থেকে দূরে রাখার জন্য তোষামোদকারী ও কায়েমী স্বার্থসংশ্লিষ্টদের কে বা কারা দায়ী-জনমনে সেও এক বিরাট প্রশ্ন নয় কি?

তাছাড়াও ৭’ই মার্চের ঐতিহাসিক মন্চে বঙ্গবন্ধু ছাড়াও নিউক্লিয়াস,সিরাজুল আলম খান,বি এল এফ হাইকমান্ড,আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড সহ সকল গুরুত্বপূর্ণ নেতা আর ভলান্টিয়ার হিসাবে সর্বত্র সিরাজুল আলম খানের অনুসারীরাই ছডিয়ে ছিটিয়ে থাকার কথা অনেকটা সর্বজনবিদিত।সকাল থেকে চার খলিফার নেতৃত্বে রেসকোর্স ময়দানে ছাত্রনেতারা জনগনকে উজ্জীবিত করার বিষয়টিও সকলের অবগত থাকার কথা।এমতাবস্থায় সিরাজুল আলম খানের সাঙ্গপাঙ্গ,আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড সর্বোপরি মহিয়সী বেগম মুজিবের যৌথ পরিকল্পনার বাইরে কেবলমাত্র একজন স্ত্রী’র কথায় এমন একটি ঐতিহাসিক বিষয়ের সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া একজন মহান জাতীয় নেতা বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে হাস্যকর নয় কি?বঙ্গবন্ধু মহানায়ক বিধায় যে কারো এ ধরনের কথা কতটুকু যুক্তিযুক্ত হতে পারে-তা ঐতিহাসিকদের বিবেচনার বিষয় নয় কি?মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র বক্তব্য সত্য ধরে নিলে চার খলিফা,বি এল এফের সিদ্ধান্তে আওয়ামী হাইকমান্ড একমত হলে এবং সেই মোতাবেক সেদিন ঐতিহাসিক ভাষণ বঙ্গবন্ধু না দিলে কিংবা সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের কথায় সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে উপস্থিত লক্ষ জনতার কথা বাদ দিলেও বঙ্গবন্ধু,স্বয়ং সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা এমনকি একজন ছোটখাট নেতাও সেদিন বেঁচে থাকার কথা ছিলো কি?তাই সিরাজুল আলম খানকে নিয়ে সভার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধু ও সিরাজুল আলম খানের কথোপকথনের নির্মোহ সত্যতা খোদ মহাকালের কাছে প্রশ্নবোধক নয় কি?

তারপর ধারাবাহিকতায় ২৩’শে মার্চ পাকিস্তান দিবসের পরিবর্তে সারাদেশে পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিরোধ দিবস পালন ও স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের ক্ষেত্রে সিরাজুল আলম খান ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের কোন ভূমিকাই কি ছিলোনা?সর্বোপরি সেদিন জয়বাংলা বাহিনী ও মহিলা জয় বাংলা বাহিনী স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদকে কি গার্ড অব অনার প্রদান করেননি?সেদিনের দৃশ্য আমেরিকার এ বি সি টেলিভিশনের বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক টেড কপেলে’র ঢাকা থেকে সরাসরি ধারাবিবরনী ইউটিউবে কেউ দেখেছেন কি?সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের এসব কর্মকান্ড আদৌ ষড়যন্ত্রের অংশ ছিলো কি?

অত:পর ইতিহাসের সেই বর্বরতম দিন ১৯৭১’সালের ২৫’শে মার্চ রাতে পাকহায়েনাচক্র অপারেশন সার্চলাইটের নামে,স্বাধীনতা আন্দোলনের সূতিকাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ সারাদেশে পৈশাচিক গনহত্যার আর বঙ্গবন্ধু’র গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে,সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের দীর্ঘদিনের কর্মকান্ড ও লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন তথা স্বাধীনতার আন্দোলন কি বঙ্গবন্ধুর নামে জনযুদ্ধে রূপান্তর হয়নি?
দুনিয়ার সবদেশে স্বাধীনতা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জাতি ঐক্যবদ্ধভাবে একত্রে দেশ স্বাধীনে সকল মেরু ও আদর্শের সামিলের বিষয়টি সকলেই জানার কথা।স্বাধীনতা অর্জনের পর প্রত্যেক দেশেই স্বাধীনতা আন্দোলনের যোদ্ধা ও সংগঠকদের মধ্যে আদর্শগত ও ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে বিভক্তির নজির অহরহ।তবে কোন দেশেই স্বাধীনতা অর্জনের পর নেতাদের ও দলের ভেতর যতই বিভক্তি থাকুকনা কেনো-স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসকে বিকৃতির ইতিহাস নেই।বিশ্বাসঘাতক খোন্দকার মোশতাকদের মত লোকদের বাদ দিলে এমনকি কারো ব্যক্তিগত জীবন ও কর্মকান্ডকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা আন্দোলনের যোদ্ধা ও সংগঠকদের রাজনৈতিক চরিত্র হননের ইতিহাসও নেই।অবশ্য বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনন্য ও আলাদা বললেই চলে!!১৯৭৫’পরবর্তি যখন যে সরকার এসেছে তখন তারা অর্থ ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চামচা ও পোষ্য লোকদের চামচামি ও তোষামোদীতে অভিভূত হয়ে,তাদের মতো করে রাজনৈতিক চরিত্র হনন সহ বিকৃত বা অর্ধসত্য ইতিহাস রচনা’র চেষ্টা করেছে।এক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো দরকার এজন্য যে-তিনি সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের ষড়যন্ত্র তত্ত্বের বিষয়টি বক্তব্য প্রদানকালে বলে ফেলে নতুন করে জাতিকে জন্মের ইতিহাস জানতে উদ্ভূদ্ধ করতে পেরেছেন।বাংলাদেশের জন্মকাহিনী কেবলমাত্র ১৯৭১’সালের ২৫’শে মার্চ ও ১৬’ই ডিসেম্বরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলোনা-তা নতুন প্রজন্মকে জানার জন্যও পথ উন্মূক্ত করে দিয়েছেন।

গুগলের মাধ্যমে যতটুকু জানা যায়-তাতে পৃথিবীর প্রত্যেক দেশে পতাকা দিবসের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সবদেশে শ্রদ্ধাভরে তা স্মরণ করতে দেখা যায়।বাংলাদেশে তা আছে কি? তাছাড়াও ১৯৭১’সালের ৩’রা মার্চ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে শাজাহান সিরাজ ইশতেহার পাঠ করেন।তাতে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার মহান স্থপতি,জাতীয় পতাকা,জাতীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে এমন কোন বিষয় ছিলোনা-যা অন্তর্ভূক্ত হয়নি।মুজিবনগর সরকার এই পতাকাতলেই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো।ইশতেহার শব্দের ইংরেজী আভিধানিক অর্থ হচ্ছে প্রক্লেমেশন বা ঘোষনা।বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে এই ঘোষনা বা ইশতেহার পাঠ করা এবং ৭’ই মার্চে “এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” বলার পরেও কিংবা তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠার পরেও ঘোষনা নিয়ে অযথা বিতর্কের পেছনে বড় দূ’টি দলের বাহাসের কোন দরকার আছে কি? সিরাজুল আলম খান ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গদের কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর অনুমোদনের মধ্য দিয়ে মানচিত্র,পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণ,উত্তোলন কিংবা ইশতেহার পাঠের বিষয়টি লক্ষ জনতার ঐতিহাসিক অনুমোদনের পরও কেনো কেবলমাত্র দলীয় ও রাজনৈতিক কারণে জাতীয় স্বার্থের বিষয়টি বারবার খোঁচট খাচ্ছে-তা আগামী জমানার সন্তানদের কাছে আমাদের হীনতা ও দৈন্যতাকে উন্মোচন করার জন্য যথেষ্ট নয় কি?

ভারতে প্রতিষ্ঠিত মুজিব বাহিনীর নামকরন নিয়ে ইতিমধ্যেই পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন লেখা দেখা যায়।শুধু তাই নয়-বঙ্গবন্ধু ১৯৭২’সালের ১০ই জানুয়ারী দেশে বীরের বেশে ফিরে আসার পর একই সাথে মুজিববাদ ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বাতাসে ভাসতে থাকে অথচ এই দূ’টি শব্দ নিয়ে অনেককে অনেক কিছু বলতে দেখা যায়।দূ’টি শব্দই একই ব্যক্তির মস্তিষ্কজাত বলে আলোচিত কি?ঐ বছরেই ছাত্রলীগের পল্টন এবং রেসকোর্সের দূ’টি সম্মেলনেই বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতির কথা বলা হলেও বঙ্গবন্ধু কেবলমাত্র রেসকোর্সের সম্মেলনেই যোগ দিলে তা মুজিববাদী ছাত্রলীগ নামধারণ করে।অপর অংশটি শতগুনে আধিক্য থাকলেও মুজিববিহীন বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রকে আঁকড়ে ধরে।অত:পর সদ্য মুক্তিযুদ্ধ ফেরৎ বিদ্রোহী তরুণ তুর্কিরা সিরাজুল আলম খানের নেপথ্য নেতৃত্বে জাসদ গঠন করে।একসময় আওয়ামী লীগের প্রবল প্রতিদন্ধী হয়ে উঠে।উল্লেখ করা যেতে পারে সদ্য স্বাধীন দেশে সরকারী ও বিরোধী দল স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত ছিলো।এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু ও সিরাজুল আলম খানের সমঝোতার গুজব শুনা গেলেও তার সত্যতা এখনো মেলেনি।তবে যে ব্যাপারে সকলকে একই কথা বলতে দেখা যায় যে-জাসদ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে নিত্য সংঘর্ষ আর রব জলিল সহ জাসদের জাতীয় ও স্থানীয় নেতাদের জেলজুলুমের অন্ত ছিলোনা।তবে সিরাজুল আলম খান সম্পূর্ণ নিরাপদে ছিলেন।সিরাজুল আলম খানের অবস্থান জানা সত্ত্বেও গোয়েন্দা বাহিনী থেকে শুরু করে কোন বাহিনী তাঁকে স্পর্শ করেনি।তা নিয়েও নানা কথা শুনা যায়।এককথায় তিনি ছিলেন আনটাচড্।তবে বঙ্গবন্ধু’র সাথে মধুর ও গভীর সম্পর্কের বিষয়টিতে সকলকে একই রকম কথা বলতে দেখা যায়।বাজারে প্রচলিত গুজব আছে যে,একসময় সিরাজুল আলম খানের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা অসম্ভব হয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধু স্বয়ং তাঁকে ১৯৭৪’সালে ভারতে গমন করে সেখান থেকে দল পরিচালনার কথা বলেন।তবে ভারতে চিত্তরঞ্জন সূতারের বাড়ীতে তাঁর অবস্থানের কথা এখন সকল মহলেরও জানার কথা।
ভারতে অবস্থান করে সিরাজুল আলম খান বেঁচে গেলেও বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর খ্যাত মোশতাকের হাতে বঙ্গবন্ধুর সপরিবারে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলে চিত্তরঞ্জন সূতারের বাড়ীতে সিরাজুল আলম খানের বাচ্চার মতো হু হু করে কান্নার বিষয়টি সূতারের পরিবার থেকে সকলেই জেনে যায়।মীরজাফর নামধারী খোন্দকার মোশতাক বঙ্গবন্ধুর রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আওয়ামী লীগ সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন এখন দস্তুরমতো ইতিহাস।অথচ জাসদের নেতারা প্রতিবাদ জানানোর বিষয়টি কেউ স্মরণ করে কি?বলে কি?আর মোশতাক ও জিয়া সরকার কর্তৃক জাসদের নেতা কর্মীদের উপর জেলজুলুমের নিত্য শিকারের বিষয়টি অন্য আরেক ইতিহাস বটে।

আমাদের মহান জনযুদ্ধের জয়লাভের পর কেবলমাত্র মহান শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস ছাড়া কৃষক,শ্রমিক,ছাত্রছাত্রী,তাঁতী,জেলে,কামার-কুমার,অগনিত সাধারণ মানুষ জীবন দান করেছেন,লুঙ্গিতে গোছ মেরে,হাফ প্যান্ট পরে,খালি গায়ে বা গেন্জী গায়ে,আধাবেলা খেয়ে না খেয়ে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য নিজেদের উৎসর্গিত করেছিলেন এবং মা বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন সর্বোপরি আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় যাঁরা নিজেদের নিবেদন করেছিলেন-তাঁদের সকলের জন্য আলাদা মুক্তিযুদ্ধ দিবস বা আলাদা আলাদা দিবসের বিষয়টি কবি সাহিত্যিক সহ সাধারণ জনমনে প্রশ্ন উঠার পর তা নিয়ে জোর দাবী থাকলেও কোন সরকারই তা বাস্তবায়নের ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনে দীনতা কেনো?অথচ প্রতিটি দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা দিবস আছে।এমনকি আমেরিকাতেও।আমরা বিজাতীয় নানা দিবস পালনে যেভাবে উন্মাদ হয়ে পড়ি,অথচ নতুন প্রজন্মের মাঝে দেশপ্রেমের বিষয়টি ত্বরান্বিত করার জন্য পিছিয়ে পড়ার কারণ বা হেতু জনগনের জানারও কি অধিকার নেই?জনযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিই ছিলো সম্পদের সুষম বন্টন,সাম্য,সামাজিক ন্যায়বিচার,গনতান্ত্রিক আচরণের বিকাশ সহ মানবাধিকার আদৌ সংরক্ষিত কিনা কিংবা ঔপনিবেশিক আইন পরিবর্তন করে,নিজ দেশের সাথে সংগতিপূর্ণ জনস্বার্থে আইন পরিবর্তন আদৌ হয়েছে কি?এভারেষ্ট শৃঙ্গকে সমুন্নত রাখার জন্য হিমালয়ের চতুর্পার্শ্বের পর্বতগুলোকেও সূশোভিত করা দরকার কি?শহরবন্দরের রাস্তাঘাট অথবা গ্রামগঞ্জের মূল রাস্তা ও পার্শ্ববর্তী পাহাড়গুলোকেও সূসজ্জিত করা কেনো দরকার? অর্ধসত্য কিংবা দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থ বর্জন করে ব্যক্তি বা দলের উর্ধ্বে দেশ ও জাতীয় স্বার্থে সম্পূর্ণ সত্য ইতিহাসের সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা স্বাধীনতার পর কয়েকযুগ পেরিয়ে গেলেও প্রশ্নবিদ্ধ কেনো? সবচাইতে বড় কথা স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ের কথা বাদ দিলে ১৯৭২’সালের ১০’ই জানুয়ারীর আগে বঙ্গবন্ধুর সাথে সিরাজুল আলম খানের এবং সিরাজুল আলম খানের সাথে নিউক্লিয়াসের,বি এল এফ বা মুজিব বাহিনীর,ছাত্রলীগের,শ্রমিক লীগের এবং স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাথে সম্পর্কের আত্মিক বিষয়টি আদৌ গভীর ছিলো কি?তবে সকলকে পাদপ্রদীপের আলোয় আলোকিত করে নিজেকে আড়াল করে রাখার অনন্য কৌশলের অধিকারী আদৌ ছিলেন কিনা-মহাকালের কাছে এসব প্রশ্নের জবাবের প্রতীক্ষায় আশাবাদের বিকল্প নেই।

লাস ভেগাস,নেভাদা
যুক্তরাষ্ট্র।
১৫’ই মার্চ,২০১৮

কৃতজ্ঞতা:রায়হান ফেরদাউস মধু,ইউছুফ সালাউদ্দিন আহমেদ,মহীউদ্দিন আহমদ,রেজাউল হক চৌধূরী মোশতাক,সুমন মাহমুদ,লিনু হক,আবু হাসান শাহরিয়ার,আহমেদ ফজলুর রহমান মুরাদ,ডা:গিয়াসউদ্দিন আহমদ,মুজিবুল হক মনি,মশিউল আলম হান্নান,শামীম আহমেদ,কাজী সালমা সুলতানা,বুরহানউদ্দিন রোমান,রনি চৌধূরী,মোহাম্মদ ইলিয়াছ মিয়া,হাবিব বাবুল,নূরুল আমিন,কাজী আসাদুজ্জামান, অন্যান্য।
ছবি:গুগল,রশিদ তালুকদার,সুমন মাহমুদ,লিনু হক।

তথ্যসূত্র:
ঢাকা টাইমস,৯ই মার্চ,২০১৮।
গুগল,বিভিন্ন জনের ফেসবুক ষ্ট্যাটাস।
ড:কামাল হোসেন,প্রয়াত আবদুর রাজ্জাক,তোফায়েল আহমেদ,আ স ম রব,নূরে আলম সিদ্দিকী,শাজাহান সিরাজ,রাশেদ খান মেনন,মন্জুরুল আহসান খান,খালেকুজ্জামান,মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম,বাঘা সিদ্দিকী,হাসানুল হক ইনু,মঈনউদ্দিন খান বাদল,শরীফ নূরুল আম্বিয়া,সুলতান মোহাম্মদ মনচুর,মোশতাক হোসেনের টক’শো ও বিভিন্ন লেখা ও বক্তব্য।
পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন জনের লেখা প্রকাশিত কলাম।
স্বাধীনতা আন্দোলন ও জনযুদ্ধের বই।
ইত্যাদি।