এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া :
কক্সবাজার উত্তর বনবিভগের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী রেঞ্জের ডুলাহাজারা বনবিটের গভীর জঙ্গল বলে পরিচিত শত বছরের রিজার্ভ ফরেস্ট একেবারে উজাড় হয়ে যাচ্ছে। বিট রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বন প্রহরী আতিক উল্লাহ কাঠ চোরদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ উৎকোচ নিয়ে বনাঞ্চলকে বিরান ভুমিতে পরিনত করেছে। এ বিটের গুরুত্বপুর্ন বনাঞ্চলের দায়িত্বে থাকা রাজিব উদ্দিন ইব্রাহিম নামক এক ফরেস্টারকে মাত্র চার মাসের ব্যবধানে অন্যত্র বদলী করে একজন দূর্নীতিবাজ বন প্রহরীকে বিটের দায়িত্ব দেয়ায় কোটি কোটি টাকার মূল্যবান বনজ সম্পদ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। বন প্রহরী আতিক উল্লাহ গত তিন মাস ধরে দায়িত্ব পালন করার সুবাধে কাঠ চোরদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে প্রায় ২লাখ টাকা মুল্যের একটি নতুন মোটর সাইকেল ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছে স্থানীয় সচেতন মহল। প্রতিদিন সকাল থেকে গবীর রাত পর্যন্ত ওই মোটর সাইকেলে করে ডুলাহাজারা শাহ সোজা সড়ক দিয়ে লামা বনাঞ্চল থেকে অবৈধভাবে পাচার হয়ে আসা জ¦ালানী কাঠ, গোল কাঠ, বাশ, লক ভর্তি ট্রাক, রদ্দা ও পাথর বোঝাই ট্রাক থেকে চট্রগ্রাম বন সার্কেলের বন সংরক্ষক, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও ফলছড়ি সহকারী বন সংরক্ষকের নাম ভাঙ্গিয়ে স্থানীয় ভিলেজার নুর হোসেনের সহযোগিতায় দৈনিক হাজার হাজার টাকার চাদাঁ আদায় করছে। এভাবে দিনরাত চাদাঁবাজিতে ব্যস্ত থাকার কারণে প্রতিরাতেই ডুলাহাজারা বিটের ডুমখালী ব্লক থেকে শতবর্ষী মাদার ট্রি (গর্জন গাছ) ও রিংভং ব্লক থেকে মুর‌্যবান সেগুন কাঠ গুলো বন প্রহরী আতিক উল্লার সহযোগিতায় সংঘবদ্ধ কাঠ চোরেরা নিয়ে যাচ্ছে। মুল্যবান কাঠ গুলো কাঠ চোরেরা কেঠে নেয়ার পর শ্রমিক দিয়ে গাছের গোড়ালি গুলো তুলে মাটি দিয়ে ভরাট করে দেয়া হয় বলে সচেতন মহল জানিয়েছেন।
ডুলাহাজারা বন বিটের বিভিন্ন ব্লকের গাছের পরিসখ্যান গুলো রেজিষ্ট্রর থেকে যাচাই-বাচাই করে বর্তমান পরিসংখ্যান বের করা হলে এবিট থেকে কি পরিমানের কাঠ উজাড় ও পাচার হয়েছে তা সহজেই ধরা পড়বে বলে দাবী করেছেন স্থানীয় ও পরিবেশ সচেতন জনগন। এ বিট থেকে কর্তনকৃত শতবর্ষীয় গর্জন গাছ গুলো ফিশিং বোট তৈরীর জন্যে উলুবনিয়া সড়ক দিয়ে মাবিয়া বাপের ঘাট ও খ্রিস্টান হাসপাতাল সংলগ্ন উত্তর পাশের ফিসারীঘাট দিয়ে ট্রলার যোগে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, বদরখালী, মগনামা, পেকুয়া ও আরবশাহ বাজার এলাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমানে এসব চোরাই কাঠ দিয়ে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজার ইউনিয়নের ডুমখালী এলাকার গর্জন বশিরের বাড়িতে বিশালাকারের ৩টি ফিশিং বোট তৈরী হচ্ছে, একই এলাকার বাইট্রা আমিন সওদাগরের মালিকানায় হাসপতালের পেছনে ছিরাপাহাড়ে ১টি বোট তৈরী করা হচ্ছে। এছাড়া ডুলাহাজারার উলুবনিয়া, ডুমখালীঘোনা, কাটাখালী, চুনতিরটেক, চরণদ্বীপ,সাহারবিল মাদ্রাসার সামনে, কৈয়ারবিল দ্বীপকুল পাড়া ও রাজাখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদারটি (গর্জন কাঠ)দিয়ে ফিশিং বোট তৈরী হচ্ছে। ফিশিং বোট তৈরীর কাজে ব্যবহার করা গর্জন কাঠ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ডুলাহাজারা গর্জন বাগান থেকে।
ডুলাহাজার বিটের ডুমখালী ব্লকে শতবর্ষী মাদারট্রি (গর্জন) রিংভং ব্লকের সেগুন ও জাম গাছসহ হরের প্রজাতির কোটি কোটি টাকা মুল্যের বনজ সম্পদ বিদ্যমান রয়েছে। গত তিন মাস আগেও গুরুত্বপুর্ন বনাঞ্চলের মুল্যবান বনজ সম্পদ রক্ষাবেক্ষণ ও পাহারার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বন প্রহরী আতিক উল্লাহকে। তার বাড়ি পাশ^বর্তী চট্রগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলায় হওয়ায় স্থানীয় কতিপয় আওয়ামীলীগ নেতার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সংরক্ষিত বনের মুল্যবান কাঠ গুলো কাঠ চোরদের হাতে সপে দিয়েছে। বনবিটের বিভিন্ন ব্লকের সংরক্ষিত বনের ভিতরে গড়ে উঠেছে নিত্য নতুন স্থাপনা। এ বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে গড়ে উঠা বাড়ি-ঘর ও পাকা দালান নির্মানেও ওই অসাধু বিট কর্মকর্তা আতিক উল্লাহকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে বলে স্থানীয় ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
এছাড়াও ডুলাহাজারা বনবিট কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ রাজার হালে রাস্তায় দাড়িয়ে কাঠ ভর্তি গাড়ি থেকে বন বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের নামে প্রকাশ্যে চাদাঁবাজি করে গেলেও দেখার কেউ নেই বললেও চলে। বিট কর্মকর্তা আতিক উল্লাহ জ¦ালানী কাঠ ভর্তি প্রতি ট্রাক থেকে ৫শ থেকে ১হাজার টাকা, বাশেঁর ট্রাক থেকে ৫শ টাকা, লক ভর্তি ট্রাক থেকে ২হাজার টাকা, বাশেঁর কাঠি ভর্তি ট্রাক থেকেও ১হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।