প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু:
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের খরুলিয়ার ৯ নং ওয়ার্ডের বড়ুয়াপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। গত ৭ মার্চ দুপুর একটার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। অগ্নিকান্ডের এই ঘটনায় দুই বসতবাড়ী সম্পূর্ণ ভস্মিভূত হয়েছে। এতে তিন পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। সুকুমার বড়ুয়া এবং সুমন বড়ুয়া যৌথভাবে এক বাড়ীতে এবং অপর বাড়ীতে বাস করতেন প্রদীপ বড়ুয়া।

এদিকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ভস্মিভূত বাড়ী এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্বিক) আফরুজুল হক টুটুল। গত ৮ মার্চ বিকালে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। পরিদর্শনকালে তিনি এই ঘটনাকে অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিষয়টি দেখছি। তদন্ত চলছে, তদন্তের পরে ঘটনার কারণ জানা যাবে। এই মুহূর্তে আগে সবথেকে বেশি দরকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মানবিক সহায়তা।

পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সাথে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ, কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু, সাধারণ সম্পাদক অমর বিন্দু বড়ুয়া অমল, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপক বড়ুয়া বিটু, রাজু বড়ুয়া, রামু উপজেলা শাখার সভাপতি এমইউপি রিটন বড়ুয়া প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

ভস্মিভূত বাড়ী এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্বিক) আফরুজুল হক টুটুল। সাথে ক্ষতিগ্রস্তরাসহ স্থানীয়রা।

প্রদীপ বড়ুয়ার স্ত্রী তৃষা বড়ুয়া কাজলী জানান, তিনি বেসরকারী সংস্থা মুক্তিতে চাকরি করেন। দুই মেয়ে এক ছেলে নিয়ে তার সংসার। স্বামীও একটি বেসরকারী সংস্থায় চাকরি করার সুবাদে খাগড়াছড়িতে থাকেন। ঘটনার দিনও তিনি কর্মস্থল উখিয়ায় ছিলেন। সেখানে মোবাইল ফোনে তিনি খবর পান তার বাড়ী আগুনে পুড়ে গেছে। খবর শুনে তিনি দ্রুত বাড়ী ফিরে এসে দেখেন ততক্ষণে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। অগ্নিকান্ডের সময় ঘরে কেউ ছিলেননা। ঘরের বাহির থেকে তালা লাগানো ছিল। তাই কিছুই রক্ষা করা যায়নি। বর্তমান পরিবার নিয়ে তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

প্রদীপ বড়ুয়া জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নগদ পঁচিশ হাজার টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণালংকার, ফার্নিচার-সোফা, বঙ্খাট, ডাইনিং টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, টেবিল-চেয়ার, আলনা, আলমারি, ওভারড্রয়ার, শোকেজ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম- টিভি, ফ্রিজ, ফ্যান, বাড়িভিটের এবং জমির সমস্ত দলিলপত্র, পিতা, এসএসসি,এইচএসসি ও ডিগ্রীর সার্টিফিকেট, অফিস ডকুমেন্ট, পরিধেয় কাপড়চোপড়, বিদেশী কম্বল, কুকারীজ জিনিসপত্রসহ সবকিছু পুড়ে গেছে। কিছুই রক্ষা করা যায়নি।

সুকুমার বড়ুয়ার স্ত্রী চুমকি বড়ুয়া জানান, ৭ মার্চ স্মার্ট কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র) বিতরণের কথা ছিল। খবর পেয়ে আশপাশের প্রায় দশ পরিবারের লোকজন স্মার্ট কার্ডের জন্য চলে যায়। তিনিও যাওয়ার জন্য বাড়ী থেকে বের হচ্ছিলেন। বাড়ীর বাইরে এসে তালা লাগানোর সময় দেখতে পান বাড়ীর পেছন থেকে আগুন জ্বলে ওঠছে। তিনি দরজা খোলে দ্রুত বাড়ীর ভিতরের রান্না ঘরে গিয়ে দেখেন সেখানে সব ঠিক আছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

সুকুমার বড়ুয়া জানান, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নগদ দেড় লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, ফার্নিচার-সোফা, বঙ্খাট, ডাইনিং টেবিল, ড্রেসিং টেবিল, টেবিল-চেয়ার, আলনা, স্টীল আলমারি, ওভারড্রয়ার, শোকেজ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম- টিভি, ল্যাপটপ, ফ্রিজ, ফ্যান, বাড়িভিটের এবং জমির সমস্ত দলিলপত্র, পরিধেয় কাপড়চোপড়, বিদেশী কম্বল, ধানের গোলা, চাউলের ড্রাম, কুকারীজ জিনিসপত্রসহ সবকিছু পুড়ে গেছে। কিছুই রক্ষা করা যায়নি।

প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমে সুকুমার বড়ুয়া এবং সুমন বড়ুয়াদের বাড়ীতে আগুন লাগে। পরে সেই আগুন পাশের লাগোয়া প্রদীপ বড়–য়ার বাড়ীতেও ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আগুনের সূত্রপাত কি করে হল এবং কোথা থেকে হল তা কেউ ধরে বলতে পারেননি।

এদিকে সরেজমিনে দেখা যায় সুকুমার বড়ুয়ার মাতা পারুবালা বড়ুয়ার (৭০) কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। তিনি কাদঁতে কাদঁতে বার বার অজ্ঞান হয়ে পড়ছিলেন।