সরওয়ার আজম মানিক:

কক্সবাজারে এবার ১শ’ টাকায় পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে নিয়োগ পেলেন ১১১ জন। এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন। এতে খুশি চাকরি পাওয়া তরুণ-তরুণী ও তাদের পরিবার।

দেশের অন্য জেলার মতো কক্সবাজারেও পুলিশের কনস্টেবল নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়ার পর প্রায় ৬শ’ নারী পুরুষ লাইনে দাঁড়ায়। তার মধ্যে প্রাথমিক বাছাইয়ে আসে ৫০১ জন। এরপর ৪ মার্চ লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশ করে ২৩৩ জন। সবশেষ শিক্ষানবিশ পুলিশ কনস্টেবল ( টি আর সি) হিসেবে চুড়ান্ত নিয়োগ পান ১১১ জন। এর মধ্যে ৯০ জন পুরুষ, ১৭ জন নারী ও ৪ জন আদিবাসী।

জানা গেছে, নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে চকরিয়া উপজেলার ৪৬ জন, টেকনাফের ৩ জন,মহেশখালী থেকে ১৫ জন, কক্সবাজার সদরের ৫ জন, কুতুবদিয়ার ১২ জন, পেকুয়ায় ৭ জন, উখিয়ায় ২ ও রামুর ১৭ জন।

নিয়োগ পাওয়া কুতুবদিয়ার বড় ঘোপের আব্দুল মুবিন জানান: তার বাবা, ভাই-বোন কেউ নেই। আছে শুধু মাত্র মা, তার মা আয়েশা বেগম রাস্তায় মাটি কেটে ও কংকর ভেঙে দিন মজুরের কাজ করে তাকে পড়ালেখা করায়।

মুবিন বলেন: ১শ’ টাকায় যে আমার চাকরি হবে তা আমি জীবনে কল্পনা ও করতে পারিনি। মাকে একটু বিশ্রাম দিয়ে নিজে কিছু করার চেষ্টা করছি অনেক দিন থেকে। কিন্তু দিন মজুর মায়ের ছেলে বলে টাকার অভাবে কোন চাকরি হয়নি। বন্ধুদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশে ভর্তি হওয়ার জন্য কুতুবদিয়া থেকে কক্সবাজার এসে লিংক রোড়ের মামার বাসায় উঠি। কুতুবদিয়া সোনালী ব্যাংকে মাত্র ১শ’ টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট জমা দিয়ে আমার চাকরি হয়ে গেল। এ খবর শুনে আমার মা যে কী খুশি হয়েছে তা বলার মতো না।

নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া চকরিয়ার বদরখালীর আতিকুর রহমান বলেন: ভাবতেই পারিনি এ দেশে ১শ’ টাকায় চাকরি পাব, তাও আবার পুলিশের চাকরি। যে সততা নিয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার আমাকে চাকরি দিয়েছেন, সেই সততা নিয়েই আমি পুলিশ বাহিনীতে যোগ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করবো।

নিয়োগ পরীক্ষায় নারীদের মধ্যে প্রথম হওয়া কক্সবাজার সদরের খুরু স্কুলের দক্ষিন হিন্দু পাড়ার মিতা দে বলেন: আগে শুনেছি পুলিশে ভর্তি হতে নাকি অনেক টাকা লাগে। কিন্তু আমার কাছে তা মিথ্যা প্রমাণ হলো। আমি ১ শ’ টাকায় যে চাকরি পেয়েছি তা আমার এলাকায় অনেকে প্রথমে বিশ্বাস করতে চায়নি। কিন্তু আমি জোর দিয়ে বলার পর সবাই বিশ্বাস করার পাশাপাশি আমার গ্রামের মানুষের কাছে এখন পুলিশের অনেক সম্মান বেড়েছে।

নিয়োগ পাওয়া মহেশখালীর কালারমার ছড়ার উত্তর নলবিলা বড়য়া পাড়ার টুম্পা বলেন: কক্সবাজারের পুলিশ সুপার আন্তরিক ছিলেন বলে ১শ’ টাকায় চাকরি পেয়েছি, যা আজকাল স্বপ্নেও ভাবা যায় না।এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন বলেন: পুলিশ কনস্টেবল ভর্তি নিয়ে কড়া নির্দেশ ছিল নবাগত মহাপুলিশ পরিদর্শকের। স্যারের নিদের্শ পেয়ে আন্তরিকতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করেছি। কনস্টেবল ভর্তির জন্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারের টিম ছিল। পাশপাশি আমার সহকর্মীরাও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করেছে বলে এটি সম্ভব হয়েছে।

‘ভর্তির শুরুর আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম, যোগ্যরা চাকরি পাবে এবং অযোগ্যরা কোনভাইে চাকরি পাবে না। আর নিয়োগে কোন ধরনের অনিয়ম বা আর্থিক লেনদেন থাকবে না। আর এসব বিষয়ে পুলিশ মহা পরিদর্শকের কড়া নির্দেশ থাকায় আমার কাজ করতে সুবিধা হয়েছে। ফলে সাধারণ ঘরের সন্তানরা ১শ’ টাকায় চাকরি পেলো। এ ধারা অব্যাহত রাখব।’