রোহিঙ্গা সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্থ ৫০০ কৃষক পেল কৃষি যন্ত্রপাতি

প্রকাশ: ৫ মার্চ, ২০১৮ ০৪:৫৬

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ নারীকে পাওয়ার টিলার হস্তান্তর করছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম। এ সময় টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, ভাইসচেয়ারম্যান মাওলানা রফিক উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত আছেন। ছবি স্বত্ব: আইওএম/শিরীন আখতার

ইমাম খাইর, সিবিএন:
রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্থ টেকনাফের ২৬০ জন এবং উখিয়ার ২৪০ জন কৃষকের মাঝে ৭২টি পাওয়ার টিলার ও ৭২টি সেচ যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও স্থানীয় কৃষক জনগোষ্ঠীর ২৪টি দলের মধ্যে এ সহায়তা দেন।
গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী সীমান্ত অতিক্রম করে কক্সবাজারে প্রবেশ করেছে। বিশাল এই জনপ্রবাহের গতি এবং ব্যাপকতা একটি জটিল মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে এই জেলায়। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ও জাতীয় বিভিন্ন মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থা বিপর্যয় মোকাবেলায় তৎপর।
রোহিঙ্গ্যা সঙ্কট স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও বাজারের ওপর যে কঠিন আর্থ-সামাজিক চাপ সৃষ্টি করেছে তা মোকাবেলা করাও মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অনেকেই আগে নিজ এলাকার বনজাত দ্রব্যের, যেমন- কাঠের জ্বালানী, শাক-সবজি, ফল, এবং অন্যান্য পণ্য, ওপর নির্ভরশীল ছিল। রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও একই বনজ দ্রব্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এখন স্থানীয়রা আর আগের মতো এই সুবিধা ভোগ করতে পারছেনা ।
এই সমস্যা মোকাবেলায় আইওএম এবং এফএও বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সাথে যৌথ উদ্যোগে স্থানীয় কৃষক দলগুলোকে উচ্চচাহিদা ও পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সহায়াতা প্রদানের জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ‘ইমার্জেন্সি নিউট্রিশন এন্ড ফুড সিকিউরিটি ইন্টারভেনশন ফর পিপল এফেক্টেড বাই দ্যা রেফিউজি ক্রাইসিস ইন কক্সবাজার’ শীর্ষক এই প্রকল্পের আওতায় গত সপ্তাহে টেকনাফ উপজেলা কমপ্লেক্সে উপজেলার নির্বাচিত ১২টি কৃষক দলের মধ্যে কৃষি যন্ত্রপাতি ও উপকরণ বিতরণ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে আসা কৃষক দলের নারী সদস্য আয়েশা বেগম, ৪০, তার চার কানি জমিতে মরিচ, ডাল, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, আলু, ইত্যাদি চাষ করেন। তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় কোদাল দিয়ে জমি চাষ করে। (পাওয়ার) টিলার পাওয়ায় এখন আর আমার দলের কাউকে কোদাল দিয়ে জমি চাষ করতে হবে না। উন্নতমানের যে সব্জি বীজ আর জৈব সার পাবো এখান থেকে তা দিয়ে ভালো আর বেশি শাকসব্জি হবে।
আয়েশা বেগমের নিজের পাওয়ার টিলার না থাকলেও তিনি আগে তার এলাকার অন্যান্য কৃষকদেরকে যন্ত্রটি চালাতে দেখেছেন এবং তাদের থেকে যন্ত্রটি চালাতেও শিখেছেন। আত্মবিশ্বাসের সাথে তিনি বলেন, ‘কোনো কিছুই কেউ জন্ম থেকে শিখে আসে না। দেখে দেখেই শেখে মানুষ।’ তিনি মনে করেন, তার উৎপাদিত উন্নতমানের শাকসব্জি স্থানীয় বাজারে বিক্রি হলে তা যেমন এলাকার মানুষের (পুষ্টিমান বৃদ্ধিতে) উপকারে আসবে তেমনি তিনি নিজেও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। প্রকল্প থেকে পাওয়া জৈব সার পুনঃউৎপাদনেও আগ্রহী আয়েশা বেগম। উৎপাদিত সার তিনি নিজে যেমন ব্যবহার করতে পারবেন, তেমনি বাজারে বিক্রিও করতে পারবেন। তার বাচ্চাদের বিভিন্নরকম প্রয়োজন পূরণে কাজে লাগবে এই অর্থ। তিনি তার এলাকার অন্যান্য কৃষকদের জৈব সার উৎপাদনের কৌশল শেখানোর ব্যাপারেও আগ্রহী।
আইওএম, এফএও এবং বাংলাদেশ সরকারের এই যৌথ প্রকল্পের আওতায় পাওয়ার টিলারের পাশাপাশি কৃষকদের মধ্যে কীটনাশক স্প্রেয়ার, সেচ যন্ত্র, শাকসব্জির উন্নতমানের বীজ বিতরণ করা হয়। প্রকল্প থেকে দুই সপ্তাহ আগে উখিয়া ও টেকনাফের নির্বাচিত এই ২৪টি কৃষক দলকে পাওয়ার টিলার চালানো ও রক্ষণাবেক্ষণের ওপর প্রশিক্ষণ প্রদান সম্পন্ন করা হয়েছে।