বিদেশ ডেস্ক:
বাংলাদেশ মিয়ানমার নো ম্যানস ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের ওপর হুমকি অব্যাহত রেখেছে মিয়ানমার। একজন বিজিবি সদস্যকে উদ্ধৃত করে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দিনে অন্তত ১০ থেকে ১৫ বার লাউড স্পিকারে ওই হুমকি দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় একজন রোহিঙ্গা নেতা এএফপিকে জানিয়েছেন, হুমকিতে এরইমধ্যে ১৫০ রোহিঙ্গা পরিবার নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নিজেদের বানানো অস্থায়ী বাড়িঘর ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা। গত বুধবার রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা জানিয়েছেন লাউডস্পিকারে মিয়ানমার সেনা সদস্যদের দেওয়া হুমকির মুখেই তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। গত বছরের আগস্টে শেষ সপ্তাহে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্ব পরিকল্পিত ওকাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো হলে প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা নো ম্যানস ল্যাণ্ডে আশ্রয় নেয়। পরে বাংলাদেশ সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিলেও অনেকেই সেখানে অস্থায়ী বাড়িঘরে রয়ে যায়। ব্রুনাইভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বর্নিও বুলেটিন ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনের সূত্রে এই খবর জানিয়েছে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। এদিকে এখনও বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা ৬ হাজারেরও বেশি মানুষ দু’দেশের মধ্যবর্তী নো-ম্যানস ল্যান্ড তমব্রুতে অবস্থান করছে।

নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে সম্প্রতি সেনা সমাবেশ বাড়িয়েছে মিয়ানমার। তারা অবশ্য দাবি করছে, বাংলাদেশ তাদের লক্ষ্য নয়। আরসাকে জঙ্গি সংগঠন আখ্যা দিয়ে তারা দাবি করেছে, তাদের মোকাবেলা করতেই ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।নো ম্যানস ল্যান্ডের কয়েক গজ দূরে কাঁটাতারের বেড়া সম্প্রসারণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বলছে, সশস্ত্র সেনা মোতায়েন করে স্থাপন করা হয়েছে চেকপোস্ট। লাউডস্পিকার ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের ওই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা দিল মোহাম্মদ জানান, মিয়ানমার সেনাসদসদের প্রচারিত বার্তায় নো ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা শিবিরে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, শান্তিতে ঘুমাতেও পারি না। শিবিরের বেশিরভাগ রোহিঙ্গা এখন পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে চায়। তিনি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, জোর করে রাখাইনে পাঠানো হতে পারে এমন আশঙ্কায় এরইমধ্যে শিবিরের দেড়শ’ পরিবার বাংলাদেশে চলে গেছে।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিজিবির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, দিনে অন্তত ১০ থেকে ১৫ বার মিয়ানমার সেনারা শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে ওই ঘোষণা প্রচার করছে। ওই ঘোষণায় রোহিঙ্গাদের বিচারের মুখোমুখি করার ভয় দেখানো হচ্ছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র ভিভিয়ান তান বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তথাকথিত নো ম্যানস ল্যান্ড এলাকায় আমাদের প্রবেশাধিকার নেই। শরণার্থীরা এখনও প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে আর কোথা থেকে তার আসছে তা বিবেচনা ছাড়াই আমরা নতুন আগতদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছি।