রফিক মাহমুদ, উখিয়া:

মিয়ানমার সীমান্তের নিজেদের অংশে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য বাড়তি সেনা মোতায়েন ও গুলিবর্ষণ করেছিল বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু এলাকায় শক্তিবৃদ্ধির জন্য তারা সীমান্ত এলাকায় ফাঁকা গুলির্বষণে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মিয়ানমার। ‘মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ আরও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে সীমান্তর্বতী এলাকায় ফাঁকা গুলির্বষণের আগে বাংলাদেশকে অবহিত করবে বলে মিয়ানমার বৈঠকে বলেন।’

অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়েছে দেশটি। শুক্রবার সোয়া ৩টার দিকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতু পয়েন্টে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে এ পতাকা বৈঠক শুরু হয়। এতে অংশ নেয় দুই দেশের পক্ষ থেকে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল। কোনো ধরণের উস্কানি ছাড়াই সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা সমাবেশের বিষয়ে মিয়ানমারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিজিবির ৩৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও প্রতিনিধি দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান।

শুক্রবার (২ মার্চ) বিকাল ৩টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু ঘুমধুম সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ক্যাম্পে পতাকা বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে বৈঠক শেষ হলে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন ৩৪নং বিজিবি অধিনায়ক লেফ. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান।

তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশ বিজিবির কাছে প্রশ্ন করেছে, সীমান্তে বাংলাদেশ কেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করছে। জবাবে আমরা জানাই, এটা মিয়ানমারকে টার্গেট কওে সিসি ক্যামরা বসানো হয়নি, আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই সিসি ক্যামরা এটা বসানো হয়েছে।’ সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। শূন্যরেখায় থাকা রোহিঙ্গারাও ভালো আছে।

মঞ্জুরুল আহসান খান বলেন, ‘তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের যে কোনও সময় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানিয়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশ (বিজিপি)।’ দুই দেশের কূটনৈতিক পক্রিয়া শেষ হলে তাদের ফিরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এর আগে শুক্রবার সকালে বান্দরবান উপজলার ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ড এলাকা পরিদর্শন করেছেন বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক, ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান, বান্দরবান লামা উপজেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুস সালাম, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এন সরয়ার কামাল প্রমুখ। পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বলেন, ‘বিজিবির পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে পতাকা বৈঠকের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবে ভিত্তিতে গতকাল বিকাল ৩টার দিকে পতকা বৈঠক বসে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের দল।’

পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফ. কর্নেল মঞ্জুরুল আহসান খান। ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী পুলিশের লেফ. সোয়োজাই লিউ।

গত বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) মিয়ানমার সীমান্তে অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করার প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। এসময় পতাকা বৈঠকের আহ্বান করা হয় বিজিবির পক্ষ থেকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল পতাকা বৈঠকে অংশ নিতে রাজি হয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এর আগে একাধিকবার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও তাতে রাজি হয়নি মিয়ানমার।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু এলাকায় বিজিপির বাড়তি তৎপরতা দেখা গেছে। সীমান্তে মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনে তৈরি হয় উত্তেজনা। তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশ থেকে ফাঁকা গুলির শব্দও পাওয়া যায়। এতে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়ে যায়। একইসঙ্গে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়ে যায় ‘নো-ম্যানস ল্যান্ডে’ থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও। এ পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত লুইন উ’কে তলব করে তাকে একটি নোট ভারবাল বা আনুষ্ঠানিক পত্র দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

একটি সূত্র জানায়, রাখাইনে সামরিক শক্তি বাড়ালে নো-ম্যানস ল্যান্ডে যে সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গা আছে তারা মিয়ানমারে ফেরত যেতে আগ্রহী হবে না এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়াটি অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী নিপীড়ন ও গণহত্যা চালানো শুরু করলে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের অস্থায়ীভাবে আশ্রয় ও মানবিক সহায়তা দিলেও নিজেদের দেশে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আহ্বানসহ দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার।