আহমদ গিয়াস , কক্সবাজার :
সীমান্ত চুক্তির লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ সীমান্তে সেনা শক্তি বৃদ্ধি করছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে যেখানে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে, সেখানে সীমান্তের একেবারে কাছে এসে মিয়ানমারের সেনা শক্তি বৃদ্ধি ও মহড়া দানের রহস্য কি, তা বাংলাদেশের কাছে অজ্ঞাত। তবে গতমাসের ২ ও ৩ তারিখ মিয়ানমার সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রথমবারের মতো রকেট, লাঞ্চার ও ভারী অস্ত্রসশস্ত্র নিয়ে যৌথ মহড়া চালানোর পর সেদেশের সেনা প্রধানের ফেসবুক পেজে বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয়।
মিয়ানমার সেনা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং তার ফেসবুক পেজে গত ৬ ফেব্রুয়ারি এই যুদ্ধ মহড়ার চারটি ধাপ সম্পর্কে সবিস্তারে বর্ণনা দেন এবং মিয়ানমারের শত্রুদের উচিৎ শিক্ষা দেওয়ার হুমকী দেন। ‘শিন ফাইও শিন’ বা ‘সাদা হাতির মহারাজা’ নামের এই যুদ্ধ মহড়াটি সংঘটিত হয় ইরাওয়াদ্দি-ডেলটা বিচ এলাকায়, যা ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের অঞ্চলের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। অবশ্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী এরআগেও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম পর্যন্ত অঞ্চল দখল করে নেয়ার হুমকী দিয়েছিল। তবে এবারের মহড়াটি হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৩শ মাইল দূরে। দুইদিনের ওই মহড়ায় তারা ভূমি, সাগর ও আকাশ থেকে সর্বাত্মক যুদ্ধ চালায়। যেখানে জেট ফাইটার, ট্যাংক, ফ্রিগেটসহ আধুনিক নানা যুদ্ধযান ব্যবহৃত হয়েছে। এই ধরনেরই একটি মহড়া চালানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল এ কথাও উল্লেখ করে বলা হয়, এরআগের যুদ্ধ মহড়াগুলো হয়েছে মূল ভূ-খন্ডের মধ্যডানে অবস্থিত মরুময় এলাকায়। কিন্তু ফেব্রুয়ারির যুদ্ধ মহড়াটি হয়েছে সাগর, নদী ও পাহাড় বেষ্টিত মিয়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডের এলাকায়। যে এলাকার সাথে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাদৃশ্য রয়েছে।
কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত অঞ্চলেও সাগরের পাশপাশি অসংখ্য নদী ও পাহাড় রয়েছে। মহড়াটি বাংলাদেশকে হুমকী দেয়ার উদ্দেশ্যে সংঘটিত হয়েছে বলে মনে করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। যেখানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দুদেশ ক্রমশ: যুদ্ধের নিকটবর্তী হচ্ছে!
তবে মিয়ানমারের এই যুদ্ধ মহড়ার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বা সরকারের কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। কিন্তু সীমান্ত এলাকার অধিবাসীরা জানান, গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে সেনা বাড়াচ্ছে মিয়ানমার। গতকাল বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সেক্টর বিজিবির আওতাধীন তমব্রু এলাকার নো-ম্যান্স ল্যান্ডে এসে মহড়া চালায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এসময় তারা লাইভ ফায়ারও করে।
বিজিবি কক্সবাজার সেক্টরের কমান্ডার কর্ণেল আবদুল খালেক জানান, বেশ কয়েকদিন ধরেই মিয়ানমার সেনাদের বাংলাদেশ সীমান্তের একেবারে কাছে আসতে আবার চলে যেতে দেখা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার তারা লাইভ ফায়ারও করেছে এবং নো-ম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টাও করেছে।
সীমান্ত চুক্তির লঙ্ঘন ঘটিয়েই মিয়ানমার বাংলাদেশকে না জানিয়ে সীমান্তের ৫ কিলোমিটারের মধ্যেই বারবার সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছে। যে কারণে বিজিবিকে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
সামরিক বিশ্লেষকদের ধারণা, গতমাসে যুদ্ধ মহড়া সম্পন্নকারী মিয়ানমার সৈনিকদের এখন বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়োগ করা হচ্ছে। আর পুরনো সৈনিকদের অন্যত্র বদলী করা হচ্ছে। তাদের এ আচরণ উস্কানীমূলক বলেও বাংলাদেশের তরফ থেকে মনে করা হচ্ছে।