এম. বেদারুল আলম :
স্থানীয় সরকার সহায়তা প্রকল্প-৩ এর আওতায় জেলায় ৬৪৮ টি প্রকল্পের জন্য ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৩৫ হাজার ১০৮ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। ৮ উপজেলার ৭১ ইউনিয়ন পরিষদের জন্য ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে উক্ত টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে গ্রামিন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সামাজিক সুরক্ষা ,শিক্ষাখাতের উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, নারীর ক্ষমতায়ণ, পরিবেশগত উন্নয়ন, পয়নিস্কাশন, মানব সম্পদ উন্নয়ন, অসহায় নারীদের সেলাই মেশিন প্রদানসহ বিভিন্ন প্রকার সামাজিক অবকাঠামোগত সংস্কারে উক্ত প্রকল্প সমুহ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির পথে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
স্থানিয় সরকারে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প রয়েছে তৎমধ্যে এ প্রকল্প সরকারের সবচেয়ে স্বচ্ছ এবং গ্রহনযোগ্য প্রকল্প বলে মনে করা হয়। এ প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলেটেঁটর আহসান উল্লাহ চৌধুরী মামুন বলেন, কক্সবাজারে ৭১টি ইউনিয়ন পরিষদে ৬৪৮ টি প্রকল্প বাস্তবায়ণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। অমারা আশা করছি ২/৩ মাসের মধ্যে সব প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। প্রকল্প সমুহ কাজ বাস্তবায়িত হলে জেলার গ্রামিণ জনপদের চেহারা পাল্টে যাবে।
এ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো মাঠে তদারকি এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে সরাসরি মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পের অর্থছাড়। কাজের মান যথাযথ না হলে তদারকি কর্মকর্তাগণ অভিযোগ প্রদান করলে বরাদ্দ সরাসরি আটক রাখা হয় এবং পরের বছর শাস্তিস্বরুপ বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া। ফলে দূর্ণীতি করার সুযোগ কম থাকে।
জেলায় এ প্রকল্পের দেখভালের জন্য যে কর্মকর্তাকে প্রতিমাসে ৮ দিন কাজের মান পরিদর্শনে মাঠে যেতে হয় তিনি স্থানিয় সরকার শাখার উপ পরিচালক ( ডিডিএলজি) হিল্লোল বিশ্বাস কাজের অগ্রগতি এবং প্রকল্পের গুরুত্ব বিষয়ে জানান, জেলার ৭১ টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশিরভাগ এলাকায় কাজ শেষ পর্যায়ে আশা করছি সব ইউনিয়নে মাস দেড়েকের মধ্যে প্রকল্প শেষ হবে। প্রকল্প সমুহ বাস্তবায়িত হলে পুরো জেলার মানুষ উপকৃত হবে। পাশাপাশি গ্রামিণ অবকাঠামোর চেহারা পাল্টে যাবে। হিল্লোল বিশ্বাস আরো বলেন, আমি প্রতি মাসে ৭/৮ টিন মাঠে গিয়ে কাজ তদারকি করছি আশাকরি কোন অনিয়ম করতে পারেনি চেয়ারম্যান- মেম্বারগণ।
উক্ত এলজিএসপি প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং কাজের অগ্রগতি বিষয়ে মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন খোকন বলেন, আমার ইউনিয়নে ইতোমধ্যে বরাদ্দপাওয়া ৯টি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। কাজের অগ্রগতি দেখতে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ এখানে এসেছিলেন তারাঁ কাজে অনিয়ম পাননি এবং সন্তুষপ্রকাশ করেছেন। তিনি উক্ত প্রকল্পসমুহ ৩৫ হাজার মানুষের উপকারে আসবে বলে জানান।
জেলার ৭১ ইউনিয়নের ৬ শ‘ ৪৮টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকার ইউনিয়ন ভিত্তিক বরাদ্দ হলেও চকরিয়ার যথাক্রমে বদরখালী ২০, ২২, ৯১০ টাকা, বমবীলছড়ি ৯, ১৯, ৪৫৭ টাকা, বড়ইতলী ২২, ৮৫, ৭২৩টাকা, ভেউলা মানছড় ১৫, ২৩, ১২৭ টাকা, পূর্ব বড় ভেউলা ১৮, ৫০, ৫২২ টাকা, চিরিংগা ১৩, ৬৪, ১২৫ টাকা, দোলাহাজাড়া ২৭, ১৩, ৫৭২ টাকা, ফাঁসিয়াখালী ১৭, ৪০, ৩৪৪ টাকা, হারবাং ২৬, ৭৪, ৩১৪ টাকা, কাঁকরা ১৭, ৪০, ০৫৫ টাকা, কৈয়ারবীল ১৪, ২০, ৫১৩ টাকা, খুটাখালী ২৪, ৪৩, ৬৪৭ টাকা, লক্ষারছড় ৮, ৫৩, ৮০৬ টাকা, শাহারবীল ১৫, ৯০, ৭৪৩ টাকা, পশ্চিম বড় ভেউলা ৯, ৭৬, ২৬৮ টাকা, ডেমুশিয়া ১০, ৮৪, ৯১০ টাকা, কোনাখালী ১৩, ৬০, ৩৮৮ টাকা, সোরাছপুর-মানিকপুর ১০, ৭২, ৬৩৪ টাকা।
কক্সবাজার সদরে ভারুয়াখালীতে ১৫, ৯৫, ৩০৫ টাকা, চৌফলদন্ডী ১৯, ০৪, ১৩২ টাকা, ঈদগাঁও ২২, ৭৩, ৭২৭ টাকা, ইসলামপুর ১৪, ৩২, ৫৯১ টাকা, ইসলামাবাদে ১৮, ৭৫, ২৫৭ টাকা, জালালাবাদে ১৩, ০৫, ৮৬২ টাকা, ঝিলংজায় ২৬, ৩৪, ৫৩৯ টাকা, খুরুশকুলে ২৫, ৪৯, ৭৩৬ টাকা, পিএমখালীতে ২৩, ৩৫, ১৫১ টাকা, পোকখালীতে ১৫, ৭৮, ৫২৪ টাকা।
কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইলে ১৫,৭৯,৯৮৬ টাকা, বড়খোপে ১৭,০৩,২৯৮ টাকা, দ. ধুরুং ১৩,০৫,৮৫৭ টাকা, কৈয়ারবিলে ১০,৮৪,৬২৫ টাকা, লেমশিখালীতে ১৪,০১,৩৫৩ টাকা, উত্তর ধুরুং ১৮,৫২,৯৬৭ টাকা ।
মহেশখালীর বড় মহেশখালীতে ২৬,৯৫,৭৪২ টাকা, ধলঘাটায় ১০,৭৪,১১২ টাকা, হোয়ানকে ৩১,১১,৬৭৫ টাকা,কালামারছড়ায় ২৯,৬২,৪৭৮ টাকা, কুতুবজোমে ২০,৬৩,৯৬২ টাকা, মাতারবাড়িতে ২৭,৪৩,২২১ টাকা, শাপলাপুরে ২৭,২০,৬৫৯ টাকা, ছোটমহেশখালীতে ১৭,১৫,৬২৯ টাকা।
রামুর চাকমারকুলে ১২,৭০৭৪৫ টাকা, ফতেষারকুলে ১৯,৬৮,৫৩৫ টাকা, গর্জনিয়ায় ১৮, ২৮, ০৯১ টাকা, ঈদগড়ে ১৫, ৬২, ০৬০ টাকা, জোয়ারীনালায় ১৯, ১৮, ৯৯৪ টাকা, কচ্ছপিয়ায় ২০, ১০, ৮৭৪ টাকা, খুনিয়াপালংয়ে ২৫, ৬৩৭ টাকা, কাউয়ারখোপে ১৭, ১৬, ৭৭৮ টাকা, রশিদনগরে ১৩, ১৯, ৭৯৯, রাজাকুল ১৫, ১০, ৬১৩ টাকা, দক্ষিণ মিঠাছড়ি ১৮, ৭৪, ৯৭৯ টাকা।
টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ায় ১৯,০৭,২৪৭ টাকা, হ্নীলায় ৩০,২৭,৩০৪ টাকা, সেন্টমার্টিনে ৭,৮০,৪২২ টাকা, সাবরাং ৩৫,৭২,৪৪৯ টাকা, টেকনাফে ৩২,০৯,৫৪০টাকা, হোয়াইক্ষং ৩৪,৮১,৫৩৪টাকা।
উখিয়ার হলদিয়াপালং ৩০৪৭০৩৮ টাকা, জালিয়াপালং ২৮,৭১,৫১৮ টাকা, রাজাপালং ৩৩,৭৯,২৫২ টাকা, রতœাপালং ১৬,২৬,১৫১ টাকা, পালংখালী ৪,৩৯,৭৫৩ টাকা, পালংখালী ৩৩,৭৯,২৫২ টাকা ।
পেকুয়ার বারবাকিয়ায় ১৩,৯৭,৬৫৪ টাকা, উৎানটিয়া ১২,৬৬,৮৩০ টাকা, মগনামা ১৬,০৮,৪৮৬ টাকা, পেকুয়া ২৭,৭১,গ৭৬ টাকা, রাজাখালী ১৭,৭৬,০৭০ টাকা, টৈটং ১৯,৫২,৭৬৪ টাকা, শিলখালীতে ১২,৬১,৪৪১ টাকা।
স্থানিয় সরকার সহায়তা প্রকল্পের তদারকি কর্মকর্তা ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলেটেটর আহসান উল্লাহ চেšধুরী মামুন জানান, বাংলাদেশের অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প এলজিএসপি , গ্রামিন চেহারা আজ পাল্টে যাচ্ছে এ প্রকল্পের বাস্তবায়নের কারনে। এটি যেহেতু সরকারি – বেসরকারি ভাবে আলাদা তদন্ত হয় তাই এখানে দূর্নীতি হওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তবু কোন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি অনিয়ম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় যা জেলার অনেক ইউনিয়নে বরাদ্দ স্থগিত করা হয়েছিল।
সরকারের অত্যান্ত কার্যকর প্রকল্পের কারনে কক্সবাজারের ৭১ ইউনিয়নের ২৫ লাখ মানুষ এর সুফল পেতে শুরু করেছে। তবে স্থানিয় জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছাই পারে সরকারের উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দূর্নীতির উর্ধে থেকে কাজ করা উচিৎ বলে মনে করেন সচেতনমহল।