ডেস্ক নিউজ:
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কারাগারে থাকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রত্যাশা করছে বিএনপি। আগামী রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের শুনানিতে তার জামিন হবে বলে ধারণা করছেন নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার মুক্তির পর আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও দাবি আদায়ের বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করবে বিএনপি। আপাতত দলীয় নেতাদের সব মনোযোগ কারাবন্দি চেয়ারপারসনকে ঘিরে। দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ পরিষ্কার করেই বলেছেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী রবিবার খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনও চলবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে বাধ্য করা হবে।’
বিএনপির সূত্রগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন প্রশ্নে দলীয়ভাবে শান্তিপূর্ণ থেকেছে বিএনপি। আর শান্ত অবস্থানের কারণে প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক শক্তি কৌশলের দিক দিয়ে অনেকটা হেরে গেছে বলে মনে করে বিএনপি। নেতাদের ভাষ্য—আপাতত আগামী রবিবারের দিকেই দৃষ্টি রাখছেন তারা। খালেদা জিয়ার জামিন বা তাকে সামনের দিনগুলোতে আরও জেলে থাকলে হলে নতুন পরিকল্পনার কথা ভাবতে হবে। এক্ষেত্রেও ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হতে পারে বিএনপিকে।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘আপাতত আগামী রবিবার আদালতের ওপর আমাদের মনোযোগ। এরপরই দলীয় কৌশল ঠিক হবে।’

বিএনপির সূত্রগুলো জানায়, খালেদা জিয়ার মুক্তি ত্বরান্বিত না হলেও রাজনৈতিকভাবে এর ইতিবাচক ফলাফল আসছে তাদের পকেটেই। বিষয়টি সম্পর্কে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মন্তব্য এরকম—‘আমাদের জুডিশিয়ারিতে ন্যায়বিচারের যে কাঠামো আছে, সেই কাঠামো অনুযায়ী আমি বিশ্বাস করি, ইনশাল্লাহ আগামী রবিবারেই খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর হবে। আমি মনে করি, একদিনের বিলম্বও আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট। একদিন বিলম্ব মানে আওয়ামী লীগের মাইনাস পয়েন্ট।’

বিএনপির নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি হলে তার উপস্থিতিতেই নির্বাচনি পরিকল্পনা করা হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন প্রশ্নে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যার মাধ্যমে দলীয় ও জোটগত কৌশল প্রণয়ন করা হবে। আর খালেদা জিয়ার মুক্তি আগামী সপ্তাহে না হলে নতুন করে মুক্তি-আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে বিএনপি। এক্ষেত্রে আবারও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিই ঘোষণা করবে তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য মনে করেন, ‘সরকার নিজে থেকেই খালেদা জিয়াকে ছেড়ে দেবে। দুনিয়ার সবাই ছি ছি করেছে। প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত ফুরফুরে মেজাজে বক্তব্য দিলেও তার ওপরে চাপ আছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয়ের ঘনিষ্ঠ সূত্রের ভাষ্য, ইতোমধ্যে লন্ডন থেকে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর জন্য নীতিনির্ধারণী বার্তা এসেছে।

দলের সূত্র বলছে, যেকোনও উপায়ে আগামী নির্বাচন মোকাবিলা করা, অর্থাৎ অংশগ্রহণ বা অংশ না নেওয়া, এই প্রশ্নের চেয়ে আগে নির্বাচন মোকাবিলা করার শক্তি অর্জন করতে হবে, এমনটাই মনে করছে দলের হাইকমান্ড। এই মুহূর্তে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি তিনটি পরামর্শ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—সব স্তরের নেতাকর্মীকে সু্স্থ থাকতে হবে, ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। এবং সামর্থ্য অনুযায়ী বিপদগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে।

সূত্রের দাবি, লন্ডনের উড়ো নির্দেশনাই এখন দলের ঐক্য ধরে রাখতে মূল ভূমিকা রাখছে। এমনকি কেন্দ্রীয় নেতারা প্রবাসে থাকা নেতাদের সঙ্গে ঘন ঘন আলোচনা অব্যাহত রাখছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন মুক্তি পাওয়ার পরই নির্বাচনি পরিকল্পনা নিয়ে বসবে বিএনপি। আগে চেয়ারপারসনের মুক্তি, এরপর নির্বাচন।’ জমিরউদ্দিন সরকার আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘আগামী রবিবারই চেয়ারপারসন মুক্তি পাবেন বলে প্রত্যাশা করছি। আর প্রধানমন্ত্রী হাসিমুখে বক্তব্য দিয়ে বেড়ালেও খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারে দেশে-বিদেশে নেতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’