বার্তা পরিবেশক
চকরিয়া উপজেলায় থানার সামনে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রকাশ্যে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করে পুলিশ উল্টো চিহ্নিত একটি ভূমিদস্যু চক্রের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে বলেও জানা গেছে। এতে ভুক্তভোগি জমির মাালিক চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
জানা গেছে, চকরিয়া থানার পূর্বপাশে থানার রোড় সংলগ্ন খরিদা সূত্রে পাওয়া ৪৮ শতক খতিয়ানি জমিতে দোকান নির্মাণ করে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করে আসছেন আলী হোসেন জমিদার। ওই জমিতে আলমদিনা রাইস মিল, চকরিয়া স্টীল মার্ট, চাউলের মিল, চাউলের গুদাম, চাউলের দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ভূমিদস্যুরা সব ধরণের স্থাপনা ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে।
সম্প্রতি আলী হোসেন জমিদারের ওই জমির প্রতি লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সৈয়দ আহমদের ছেলে জামাল হোসেন, চকরিয়া যুবলীগ নেতা কাউসার উদ্দিন কচির, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের একান্ত সহকারি আদর, সুলতাইন গাইনের ছেলে রফিক উদ্দিন ওরফে রকি, মৃত নজির আহমেদের ছেলে কছির, লাল মোহাম্মদের ছেলে জাফর আলম, আব্দুল করিমের ছেলে আমান উদ্দিন, নাদিয়া সুলতানা সুমী, ইসলাম খাতুনসহ বেশ কয়েকজন চিহ্নিত ভূমিদস্যুর। বিভিন্ন সময়ে জমিটি দখলের চেষ্টা করে ভূমিদস্যুরা।
দখলের অংশ হিসেবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারী থেকে দখল প্রক্রিয়া শুরু করে ভূমিদস্যুরা। বিভিন্ন দফায় হামলা চালিয়ে দোকান ভাংচুর করে ভূমিদস্যুরা। এক পর্যায়ে জমিতে জোরপূর্বক অবস্থান নেয় সন্ত্রাসীরা। এঘটনায় আলী হোসেন জমিদার বাদী হয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আদালত বিরোধীয় জমিতে সব ধরণের কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এবং স্থিতি অবস্থা বজায় রাখতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী গত সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) চকরিয়া থানার উপপরিদর্শক মো. আলমগীর ভূমিদস্যুদের সম্পূর্ণ অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নোটিশ দেন।
কিন্তু আদালতের নির্দেশনা তোয়াক্কা করেনি ভূমিদস্যুরা। গত বৃহস্পতিবার যুবলীগ নেতা কাউসার উদ্দিন কচির ও চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের একান্ত সহকারি আদরের নেতৃত্বে সেখানে প্রকাশ্যে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। দিনরাত সেখানে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করে তারা। তাদের অস্ত্রের মুখে জমির প্রকৃত মালিক এলাকা ছাড়া। এমনকি স্থানীয়রাও আতঙ্কে দিনযাপন করছেন।
এদিকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা জমিতে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মহড়া দিলেও পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করতে পুলিশের কোন উদ্যোগই নেই। উল্টো ভূমিদস্যুদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদেরকে দখলে সহযোগিতা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
ভুুক্তভোগিরা জানান, জমিতে স্থিতি অবস্থা বজায় রাখতে পুলিশকে নির্দেশনা দেয় আদালত। কিন্তু পুলিশ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কোন কাজ করছে না। বরং ভূমিদস্যুদের সহযোগিতা দিয়ে আসছে পুলিশ। এখন টানা কয়েকদিন ধরে প্রকাশ্যে অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়ে জমি দখল করছে সন্ত্রাসীরা। জমির প্রকৃত মালিক এখন চরম অসহায়।
ভুক্তভোগিরা আরও জানান, আদালতে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করায় তারা আরও ক্ষেপে যান। পুলিশকে হাত করে এখন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ভূমিদস্যুরা। অবৈধ দখল কার্যক্রম আরও জোরদার করে। বর্তমানে ভূমিদস্যুদের অবৈধ অস্ত্রের ভয়ে এলাকাবাসিও আতঙ্কে রয়েছেন।
ভুক্তভোগি আলী হোসেন জমিদার জানান, ভূমিদস্যুরা আদালতের নির্দেশনাকে তোয়াক্কা করছে না। উল্টো হত্যা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছেন। এখন তিনি পরিবার নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছেন।
তিনি আর বলেন, ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতা ভূমিদস্যুদের পক্ষে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে ওই জমির মধ্যে। এখন তারা চরম নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। তাদের জমি উদ্ধারে প্রশাসনকে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অনুরোধ জানান।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এটি বিরোধীয় জমি। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। তবে আদালতের নির্দেশনা স্বত্ত্বেও ভূমিদস্যুরা কাজ করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদেরকে নোটিশ করা হয়েছে। তারপরও কাজ করে থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।