জাবেদ ইকবাল চৌধুরী :

বাংলাদেশে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুম অথবা মিয়ানমারে চলমান সহিংসতা ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার হুমকিতে থাকা ৭ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা শিশুকে সহায়তা করতে জরুরি প্রচেষ্টা প্রয়োজন এক বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে ইউনিসেফ।

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাম্প্রতিক ঢল শুরুর ছয় মাস পূর্তিতে ২৩ ফেব্রয়ারি শুক্রবার এক প্রতিবেদনে ইউনিসেফ বলেছে, আসন্ন ঘূর্ণিঝড় মৌসুমে সৃষ্ট বন্যা জরাজীর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর ক্যাম্পগুলোকে গ্রাস করতে পারে, যেখানে বেশিরভাগ শরণার্থীর বসবাস। আর তেমনটা হলে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়বে । যার কারণে ক্লিনিক, শিক্ষাকেন্দ্র ও শিশুদের জন্য চালু করা অন্যান্য সুযোগসুবিধা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আনুমানিক ১ লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রয়ে গেছে, যারা সহিংসতার ভীতি ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এমন পরিস্থিতির কারণেই তাদের অনেক আত্মীয় ও প্রতিবেশী সেখান থেকে পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশে আনুমানিক প্রায় ৫ লাখ ৩৪ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু রয়েছে, যারা গত বছর ও তার আগে বাংলাদেশমুখী রোহিঙ্গা-স্রোতের সঙ্গে চলে আসে।

ইউনিসেফের জরুরী কর্মসূচির পরিচালক ম্যানুয়েল ফন্টেইন বলেন, “প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু মূলত আটকে পড়েছে । হয় তারা সহিংসতার মধ্যেই মিয়ানমারের ভেতরে বাসস্থান পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে অথবা দেশে ফিরতে না পারার কারণে বাংলাদেশে জনাকীর্ণ ক্যাম্পগুলোতে অসহায়ের মতো ঘুরছে।”

তিনি আরো বলেন, “এটা এমন এক সংকট যার কোনো ত্বরিৎ সমাধান নেই এবং এই সংকট নিরসনে কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে, যদি না সংকটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করার জন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।”

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নিজেদের ঘরবাড়ি ও কমিউনিটি থেকে বিতাড়িত হওয়া রোহিঙ্গারা এখন ভাসমান সম্প্রদায়ের মানুষ, যারা অচলাবস্থার শিকার এবং স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়ে নতুন করে হুমকির মুখোমুখি হওয়া এই মানুষগুলো তাদের মৌলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত।

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর চলাফেরা স্বাধীনতার ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ, খুবই সীমিত আকারের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও জীবিকার সুযোগ এবং মানবিক সহায়তার ওপর তারা ক্রমাগত নির্ভরশীল হয়ে পড়ার মতো বিষয়গুলো উল্লেখ করে রাখাইনে সহিসংতা বন্ধ এবং সেখানকার পরিস্থিতি; যাকে মানবিক সংকট বলা হচ্ছে; সেদিকে নজর দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউনিসেফ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করা হলে তা শরণার্থীদের জন্য মিয়ানমারে তাদের আগের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

ফন্টেইন বলেন, “লোকজন বাড়ি ফিরে যাবে না যতক্ষণ না তারা নিরাপত্তা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা পাবে, যতক্ষণ না তারা নাগরিকত্ব পাবে, যতক্ষণ না তারা তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারবে এবং তাদের সামনে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের সুযোগ থাকবে।”

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যের অনেক অংশে প্রবেশাধিকার না থাকায় ইউনিসেফ ও অন্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। ইউনিসেফ বলছে, অবিলম্বে এবং নির্বিঘেœ এই রাজ্যের সব শিশুর কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়া দরকার, একইসঙ্গে আন্তঃসাম্প্রদায়িক উদ্বেগ চিহ্নিত করতে এবং সামাজিক সহাবস্থানের বিষয়টি তুলে ধরতে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাও অপরিহার্য।

বাংলাদেশে সরকারের নেতৃত্বে ও নজরদারিতে সহায়তা প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিপর্যয় এড়ানো গেছে, যেখানে ৭৯ হাজার রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে স্থানীয় কমিউনিটি। পানির কূপ খনন, কয়েক হাজার ল্যাট্রিন স্থাপন এবং শিশুদের কলেরা, হাম ও অন্যান্য রোগ থেকে রক্ষা করতে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনায় সহায়তা প্রদানে ব্যাপক আন্তর্জাতিক উদ্যোগের অংশ হয়েছে ইউনিসেফ।

তবে অচলাবস্থার শিকার রোহিঙ্গা শিশুরা যে হুমকি মোকাবেলা করছে তার কোনো শেষ দেখা যাচ্ছে না।