আমাদের সময় : প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ছাপা প্রশ্নপত্র পদ্ধতিতে পরীক্ষা না নেয়ার কথা ভাবছে সরকার। কোনো ডিভাইস দিয়ে সরাসরি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক শেষে শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এমন পদ্ধতি তৈরি করা প্রয়োজন যে পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে না, বিতরণও করা হবে না। তাহলেই ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবে না।’

শিক্ষা সচিব বলেন, আগামী বছর থেকে কোনো প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে। হয়তো কোনো ডিভাইস দিয়ে সরাসরি পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্ন পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি, প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়ার যে প্রক্রিয়া এখন আছে, এ পদ্ধতিতে কোনভাবে প্রশ্নফাঁস ঠেকানো সম্ভব হবে না।’

সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা আজ বসেছি সবচেয়ে হাইয়েস্ট লেভেল। যেসব মন্ত্রণালয় পরীক্ষা গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। যে পরীক্ষাগুলো বাকি আছে এবং যেগুলো শেষ হয়েছে, সে বিষয়ে একটি পর্যালোচনা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকের সভার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- বাকি পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে শেষ করা এবং বাকি পরীক্ষাগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

শিক্ষা সচিব বলেন, ‘একইসঙ্গে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় নতুন কী ধরনের পদ্ধতি ইমপ্লিমেন্ট (বাস্তবায়ন) করা যায় তা নিয়েও কথা হয়েছে। যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষার মাত্র দেড়মাস বাকি রয়েছে, তাই এ বিষয়ে আগাম প্রস্তুতি স্বরূপ কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে সভায় কথা হয়েছে।’

তিনি বলেন, আগামীতে যেসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, সেখানে কোনো কর্মকর্তা, শিক্ষক বা কর্মচারী হাতে মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের ত্রি-সীমানার মধ্যে থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

পরীক্ষার পদ্ধতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে সোহরাব হোসেন বলেন, পরিবর্তন আনা হবে। তবে তা আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষা থেকে বাস্তবায়ন করা হবে। সেই পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ব্যাংক বানানো হবে। আর তা করতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। সুতারাং তা করতে গেলে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার আগে সম্ভব নয়।

প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেখুন, এ পর্যন্ত ৫২টি মামলা হয়েছে, ১৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।’

শিক্ষা সচিব জানান, ‘এমসিকিউ (বহুনির্বাচনী) বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, তা আমাদের জন্য নির্দেশ। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধ করতে হয়, সেই প্রক্রিয়ায় আমাদের আসতে হবে। এনিয়ে আমি হঠাৎ করে কিছু বলতে পারব না।’

যেসব বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তা বাতিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, এটা নিয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা যেভাবে সুপারিশ দেবেন, সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তিন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে যৌথ জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার উপস্থিত ছিলেন।