”হেরে গেলে হারাবি!”

প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ১০:১২ , আপডেট: ২৮ জুলাই, ২০১৮ ০৬:৩৭

পড়া যাবে: [rt_reading_time] মিনিটে


!

আলমগীর মাহমুদ
কুয়াশামাখা সকালে চট্টগ্রামগামী সৌদিয়াগাড়ীর প্যাসেঞ্জার ছিলাম। গাড়ীতে পাঁ রাখতেই অচেতন মনে ‘কুয়াশার সকাল ভেদ করে নিরাপদে পৌঁছানো হবেতো’!

গতিহীন চালনায় ড্রাইভার টেনশনহীন।ড্রাইভারের টেনশনহীনতায় বক্সেবসাদের সাথে আলাপনে আলাপনেই। হঠাৎ ড্রাইভার বেশ বড় করেই চাটগাঁইয়া টোনে তাচ্ছিল্যমাখা উচ্ছাসে কয় ‘উখিয়া অলা টিঁয়া কাঁমাই বিমান কিনিবো,বিমান..!১

বুঝলাম রোয়াইঙ্গাদের ওখানে ইনকাম করে উখিয়াবাসীর ভবিষ্যৎ প্রকাশে ব্যঙ্গতা ।ভাবনায় ঝড়ো হাওয়া বইল। বি,এ এম,এ সার্টিফিকেটওয়ালাদের মাথায় যাহ হারায়ে বোধে জ্ঞান হয়ে রইবে, তাহ সার্টিফিকেটের জমিদার না হয়ে বুঝল কেমনে? বেশ নাড়া দিল আমারে।

কিছুদিন আগের কথা। কলেজে এক ছাত্র আমারে বেশ উচ্ছাসময়ভাবে কইল ‘স্যার ইনানী সোনারপাড়ার মানুষ ‘Develop’ হয়েছে প্রত্যেক ঘরে ঘরেই হোন্ডা। আমি উত্তর না করে মৃদু হাসলাম।আমার এমন উত্তর না করে হাসাটাকে সে পারেনি মানতে।

দুপুর দুপুর বেলা। আমি একাকী, কলেজেও সবাই ফিরতি আমেজ,ছাড়া ছাড়া ভাবের পরিবেশ।ছেলেটা হঠাৎ কাছে এসেই বলতে রয়..আপনারে বেশী পছন্দ করি বলে কথাটা বলেছি স্যার’ ‘উত্তর তো পাইলাম না, পাইলাম না। আপনার মৃদু হাসি আমারে জন্ম দিয়েছে হাজার প্রশ্নের।

ঘরমুখো হয়ে কলেজ গেইটে গিয়েছিলাম।বার বারই আপনার নীরব হাসির রহস্য জানতে আমার মনের তাগাদা। স্যার গেইট থেকে ফিরে এসেছি জানতে, আমি কি ভুল বললাম?

..জানতে চাস হাসির রহস্য!
..হ্যাঁ স্যার।
..’গ্রামীণ উন্নয়ন’ একটা বিষয় সমাজবিজ্ঞানের পাঠ্য হিসেবে আমার ছিল।মাও সেতুং এর হাত ধরে চীনের উন্নয়ন ধারা ‘চায়না মডেল।জাপানেরটা জাপানী মডেল।

ঐ বিজ্ঞান পৃথিবীর অনেক উন্নয়ন মডেলের সাথে পরিচয় ঘটিয়েছে আমারে। পৃথিবীর কোন মডেলেই ধারনা পেলাম না হোন্ডা থাকলে মানুষ’ Develop ‘হয়।তুমি যখন আমারে জানতে চেয়েছো নীরব হাসিতে তোমারে এক্টা ‘দৃশ্য’ উপহার ছাড়া উপায় ছিল না মোর!

…শোধরাতে পারতেন, স্যার।আমিতো আপনার আজ্ঞাবহ!
..শোধরানো মাথায় আসেনি কারন একটি, তুমি যে সোনার পাড়া ইনানীর। তোমার বাবাও জমি বিক্রয়ের টাকায় একখান ১০০ সি,সি হোন্ডা দিয়ে কলেজে পাঠিয়ে, দোকানে বসে তোমার হোন্ডার টান দেখে দেখে ভাবছে.. মাশাল্লাহ.ছেলেতো মানুষ হয়ে গেল। এখন তোমারে শিক্ষা দিতে চাওয়া মানে সম্পর্কটা শেষ করা।তোমার শিক্ষা গ্রহনের দিন আসবে..

বুঝিয়ে বুঝানো গেলে রেজেষ্ট্রি অফিস বন্ধ হয়ে যেত।যে জমিদারের ছেলে সেই জমিদার রইত।প্রত্যেক বাবার অছিয়ত অ..পুত জমি বিক্রি করিস না,প্রয়োজনে না খেয়ে রইস’।

কক্সবাজারবাসীর দূর্ভাগ্য সাগরপড়ের জমি বিক্রেতার অধিকাংশের পরপুরুষ একসময় ঐ জমিতে গড়ে উঠা প্রতিষ্টানে সাপ্লায়ের (সবজি থেকে সব)কাজটিকে গর্বের পাওন ভাববে। হোটেল মোটেলের মালীকের সাথে সম্পর্ককে জীয়নকাঠি ভেবে পথে ঘাটে গর্ব ভরে বলে বেড়াবে।অমূক প্যারাডাইসের মালীকের সাথে এইদিন নাদিরার টেক শুটকি কিনতে গিয়েছিলাম।

অতীতের ইতিহাস শুনাতে গিয়ে হাত ডান দিকে একবার বাম দিকে একবার নাড়ায়ে কইতে রইবে,’ এখানে এত কানি আমার গোষ্টীর ছিল।এগুলো আমার দাদার দাদা মাত্র এককোটি টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে।

…ছাত্রটি আমারে তাদের বাড়ির মেহমান হতে বেশ জোর করে।আমি যাব বলে অভয় দেখানোর সামাজিক রেওয়াজই দেখিয়ে যাই। ফিরে যায় সে…

কিছুদিন আর দেখা নেই, দেখা নেই,প্রায় সাত আটমাস। এরিমধ্যে একজনের কাছে খবর নি,ওর কি খবর?
..ছেলেটা উত্তর না দিয়ে আমারে উল্টো প্রশ্ন রাখে,, কেন জানেন না স্যার ওরতো Hiv এইডস ধরা পড়েছে, ঢাকায় চিকিৎসাধীন।পুরা পরিবারের সমস্ত টাকা শেষ খুবই করুন অবস্থা।

এরপর দুইবছর গেল। ইনানী, সোনারপাড়ার মানুষ জমির কাচা টাকায় কেনা হোন্ডার দাপট তৈলহীন তৈলহীন অবস্থা। ঠিক এইসময় কোর্টবাজার ঐ ছাত্রের সাথে দেখা।

কৌশল বিনিময়ের পর বলি.. ঐদিনের প্রশ্নটার উত্তর তুমি এখন বুঝবে ভাল ”চীনারা চীন,জাপানীরা জাপানী আছে, ইনানী সোনার পাড়ার মানুষের “Development “এর কি খবর? বলতেই ছেলেটা আবেগে পাঁ ধরে কইল “আপনি দারুন রহস্যঘেরা বাস্তব বাদী মানুষ স্যার,দূরদৃষ্টি প্রখর, তবে আমরা বুঝলাম হারায়ে..।

রিফুইজি আসার পর উখিয়া এখন মিনি ইউরোপ। ভাব, ড্রেসে বাঙ্গালী ইংরেজ ইংরেজ।সাংবাদিক সরুয়ার আলম শাহীন, রহিম খান,ভূট্টো, কোর্টবাজারের আবু, আরোও কিছু আই,ডি যে দৈনন্দিন চিত্রের জলছাপ লিখছে.. উখিয়ার নিত্য চিত্র, দেখি সব।

সেদিন ঘুং্ধুমের হামিদ মাষ্টার রহিম খানের লেখায় মন্তব্য লিখতে দেখি
“অ..ভাই সেদিন নুর হোটেলের উপরে আমিও দেখেছি সে দৃশ্য, মেয়েরা পাঁ’র উপর পাঁ’ টিড়িং টিড়িং নাচাচ্ছে আর নাচাচ্ছে..চেনা ময় মুরুব্বী দেখলে ভাবখান বেখেয়ালী বেখেয়ালী ।ড্রেসে চোখ রাখন দায় !

… হঠাৎ এমন পরিবর্তন মুরুব্বী,সুশীলদের মাথায় ‘আঘাত’ আর আঘাত। চোখ ফিরিয়ে আছে বেঁচে। চাকুরীর বিপক্ষে নই আমরা ,পরিবর্তন ও চাই না বালির বস্তায় আটকাতে ।আমরা ভাল করেই জানি বালির বস্তায় স্রোত আটকানো যায় না,বালির বস্তার দক্ষতা সে ভাঙ্গন রক্ষায় বেশ শক্তিমান ।
যে যার যার গতিতে চলুক। আমরা যেন ভুলে না যাই আমরা গৌতম বৌদ্ধ,শ্রীকৃষ্ণ, বিশ্বনবী মোহামুদুর রাসূলুল্লাহ( স:)অনুসারী।

তোমাদের জন্য আমাদের দরদ তোমরা যে আমাদের সন্তান! সবই একদিন চলে যাবে। তখন তোমরাই যে রইবে আমাদের অবশিষ্ট !!

লেখক:- বিভাগীয় প্রধান। সমাজবিজ্ঞান বিভাগ উখিয়া কলেজ।
alamgir83cox@gmail.com