শামীম ইকবাল চৌধুরী, নাইক্ষ্যংছড়ি:

নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের সাতগইজ্জা পাড়ায় উপজাতি ও বাঙালি মিলে বসতি ছিল মাত্র সাত পরিবার। তাতে নামকরণ হয়েছিল সাতগইজ্জা পাড়া। দীর্ঘ ১৫-২০ বছর ধরে সম্প্রিতির বন্ধনে বসবাস করে আসছিল পরিবার গুলো। তবে সাত পরিবারের মধ্যে আছে এখন পাচঁ পরিবার। এই পাচঁ পরিবার কোন দিন দেখেনি অস্ত্রধারীরা অস্ত্র নিয়ে জিম্মি করে হুমখি-দমখি দিতে। এতদিন নির্ভয়ে পাহাড়ে জুম চাষসহ কলা বাগান পরির্চযা করে আসলেন তারা। জুমের বিভিন্ন তরিতরকারি ও কলা বাজারে বিক্রি করে রোজি-রোজগারে পরিবার নিয়ে কোন রখম জীবন বাচাঁতেন তারা। তবে আজ সাপ্তাহ ধরে ১০-১৫ জনের একটি অস্ত্রধারী গ্রুপের কাছে পরিবার গুলো জিম্মি। ওইসব পরিবার গুলো জানেনা এরা কারা ? এরা কি পেশাধারী ডাকাত না অপহরনকারী ? নাকি কোন নামধারী সংগঠনের সন্ত্রাসী ? এদের পরিচয় বলতে পারছে না কেহ। এরা প্রাণের ভয়ে তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে এক সরকারি প্রাইমারী স্কুলে অবস্থান নেয় উপজাতিয় চার পরিবার। এই পরিবার গুলোর একি প্রশ্ন, তাদের বাসস্থলে কবে যেতে পারবে? অব্যাহত যৌথ অভিযান কতটুকু সফল হচ্ছে ?

আর এদিকে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজাতীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে চাক্ জাতি একেবারে সংখ্যালঘু । এরা অত্যান্ত শান্তি প্রিয় জাতি। এদের অর্থ যোগানের একমাত্র ভরসা জুমচাষসহ পাহাড়ে বাগান করে বিভিন্ন ফলাদি থেকে আয় রোজগার।

তবে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সদর ইউনিয়নের সাতগইজ্জা পাড়াতে ১০ ১৫ জনের অস্ত্রধারী একটি যুবকদল দেখে এরা আতঙ্কিত হয়ে তিন কিলোমিটার দূরে মধ্যম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় নেয়। এখন ওই পরিবার গুলো কষ্টে জীবনযাপন করে যাচ্ছে সাপ্তাহ ধরে। তাদের চোখে মূখে এখনো আতঙ্কের চাপ। এসব পালিয়ে আসা পরিবার গুলো বলতে পারছেনা অস্ত্রধারী গ্রুপটি কি ডাকাত না অপহরণকারী ? তবে হ্লা খাই চিং চাক্ এই প্রতিবেদকে জানান, আমার স্বামী চিং থোয়াই চাক্ কে জুমে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় তার ব্যবহৃত মোবাইল কেড়ে নিয়ে বলেন কোন ধরনের পুলিশ বিজিবিকে খবর দিলে তোমার নিঃশ্বাস একেবারে বন্ধ করে দেব। আর তুই আমাদের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা পাঠাবি। তোমার মোবইল নাম্বারে ফোন দিলে দিয়ে দিও। এর পর বেশ কয়েকবার ফোন করে বলে তোমরা সবাই পাড়া ছেড়ে চলে গেছ ঠিক ক

রনি। তবে কোন রখম টাকা কথা বলেনি। এক প্রশ্নের জবাবে হ্লা খাই চিং চাক্ আরও জানান, অস্ত্রধারী প্রুপরা আমার স্বামীকে অপহণ করে নিয়ে যেতে পারতো। এরা ছেড়ে দিল কেন? ডাকাত হলে আমাদেরকে ঘরে ঢুকে সব কিছু নিয়ে যেতে পারতো। যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযান সফল না হয় আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব ?

আমাদেরকে কে নিশ্চি দিতে পারবে ওই অস্ত্রধারী লোকেরা যে আবার পাড়ায় আসবেনা।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মওলানা নুরুল আমিন জানান, আতঙ্কে পালিয়ে আসা পরিবার গুলোকে পরিতাক্ত ঘোষিত ভবনে আপততে আশ্রয় নেয়ার স্থান দেওয়া হয়েছে। তবে ওই পরিতাক্ত ভবনের তিনটি রুমের মধ্যে প্রথম দিন দখল করলেও পরে একটি রুম ছেড়ে দিতে অনুরুধ করি। কারন আমাদের শিশু শ্রেণিতে শিক্ষার্থী সংখ্যাই বেশী হওয়াতে তাদের ওই ভবনের একটি ক্লাস পাঠদান হিসেবে চালিয়ে যেতে হয়।

মৌজার হেডম্যান বাচিং চাক্ জানান, সদরের সাতগইজ্জা পাড়াটি ১৫ বছরের জনবসতি পাড়া। তবে গণ বসতি নয়। প্রথমে চাক্ সম্প্রদায় ও বাঙালী মিলে মাত্র সাত পরিবারের বসবাস। এখন চার পরিবারসহ বাঙালী মাত্র এক পরিবার। পাড়ার কিছু দূরে রাবার বাগানে বাঙালীর অর এক পরিবারের বসবাস। ওই পাড়ার আশেপাশে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনদের খাস পাহাড় দখলে আছেন। কেহ বাগান করেছেন কেহ আবার বাগান করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ওই সব পাড়ায় আরও গণ বসতি হলে হয়তো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আনাগোনা কমে যাবে। এসব গহীন অরণ্যে শুনি নাই এসব অস্ত্রধারী লোকের কথা। তবে যে ভাবে যৌথ বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসরা বেচেঁ থাকার উপায় নেই।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান তসলিম ইকবাল চৌধুরী জানান, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি সোনাইছড়ি সড়কে কিছু অস্ত্রধারী যুবক পথযাত্রীদেরকে জিম্মি করে টাকা,মোবাইলসহ অন্যান্য জিনিস পত্র ছিনিয়ে নেয়। সে সময় অস্ত্রধারীর কবলে শিকার হন সোনাইছড়ির ইউপি চেয়ারম্যান বাহাইন মারমাসহ ব্যবসায়ী ও গাড়ীতে অবস্থানরত যাত্রী এবং চালকেরা। ওইসময় ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষুণিক পুলিশ বিজিবি অভিযান চালালে ওই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোর সকালে খবর পায় সদরের সাতগইজ্জা পাড়ায় ওই অস্ত্রধারীরা আনাগোনা করছে। সেখানেও তাৎক্ষুণিক পুলিশ অভিযান চালালে সেখান থেকেও গা ডাকা দেয়। তবে আতঙ্কে পালিয়ে আসা পরিবার গুলোকে আমরা সার্বক্ষুণিক খবরা খবর নিচ্ছি। আপাততে ওইসব পরিবার গুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। আর এদিকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনার প্রেক্ষিতে অনুমান করা যাচ্ছে এরা পেশাধার ডাকাত।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানা ইনর্চাজ মোঃ আলমগীর শেখ জানান, আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তবে সাধারণ পাবলিককের সহযোগিতা দরকার। আতঙ্কে পালিয়ে আসা পরিবার গুলোকে তাদের পাড়ায় স্বস্তিতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা হবে বলে জানান।

উল্লেখ্য, নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি ইউনিয়নের জারুলিয়াছড়ি-জুমখোলা-সোনাইছড়ি সড়কে ও সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সাতগইজ্জা পাড়ায় অর্ধশতাধিক অস্ত্রধারী যুবকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছিল এলাকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। গত (১৫ ফ্রেুয়ারি) বৃহস্পতিবার রাতে সড়কের জুমখোলা এলাকায় পথ যাত্রী ও ওই এলাকার ব্যবসায়ীদেরকে ১০-১৫ জনের অস্ত্রধারী একটি ডাকাত দল জিম্মি করে লুটপাট করে নেয়। তবে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ মাঝে আতংকে বিরাজ করছে।